ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

লামা পৌরসভা নির্বাচনের লড়েইয়ে নৌকা আর ধানের শীষ

লামা প্রতিনিধি :: বান্দরবানের লামা পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে চলতি মাসের ১৬ জানুয়ারী। সময় বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থী, প্রার্থীদের কর্মী সমর্থক ও নিজ নিজ দলীয় নেতাকর্মীরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে দিন-রাত প্রচারনার করছেন। এ নির্বাচনে ৩ মেয়র প্রার্থীসহ, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এখন তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে আদর্শের বয়ানসহ পৌরসভার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন। সাথে মাঠে প্রচারনায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীদের স্ত্রী, স্বামী ও সন্তানরাও। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর পরেই পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহরের অলি-গলি, বাসা-বাড়ি, চায়ের দোকান, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনায়।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৮.৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৮৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৩০০ জন ও মহিলা ৬ হাজার ৩৮৬জন। আসন্ন নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রে ৩৯টি বুথে ১৬ জানুয়ারী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৪ জানুয়ারী রাত ১২টা থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। এর আগেই যা প্রচারণার দরকার সাধ্যমতো করে নিচ্ছেন প্রার্থীরা।

সরজমিনে দেখা যায়, একটি ভোট বাড়ানোর আশায় মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর প্রার্থী, প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা আরামের ঘুম হারাম করে পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে পাহাড় নদী ডিঙ্গিয়ে যে যার মত করে কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মাঠে ঘাটে বাড়ীতে প্রচার প্রচারনায় নির্বাচনী এলাকা সরগরম করে তুলছেন। বেলা দুইটার পর অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও রিক্সায় মাইক বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। অলিতে গলিতে লিফলেট নিয়ে প্রার্থীর সমর্থকরা ঘরে ঘরে ভোট চাচ্ছেন। মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোহাম্মদ শাহিন ও লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এ টি এম শহীদুল ইসলাম সিকদার ভোট প্রার্থণা করছেন। প্রচার প্রচারণা ও জন সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম।

একই ভাবে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরা হচ্ছেন ১নং ওয়ার্ডে সাকেরা বেগম, রোকেয়া খানম কেয়া ও শ্যামলী বিশ্বাস। ২নং ওয়ার্ডে জোসনা বেগম ও মরিয়ম বেগম। ৩নং ওয়ার্ডে মাজেদা বেগম, জাহানারা বেগম, রোজিনা আক্তার ও মোছাম্মদ সুমনা আক্তার। সাধারন কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে স্বপন কুমার দে, মো. ফরিদ মিয়া, বশির আহমদ। ৩নং ওয়ার্ডে মো. সাইফুদ্দিন, মো. শাখাওয়াত হোসেন ও ওসমান গণি শিমুল। ৫নং ওয়ার্ডে আবদুস সালাম, মো. আবুল হোসেন, আলী আহমদ ও মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন। ৬নং ওয়ার্ডে মমতাজুল ইসলাম, মো. ফজর আলী ও মো. জাকির হোসেন। ৭নং ওয়ার্ডে মো. সোহরাব হোসেন ও মো. কামাল উদ্দিন। ৮নং ওয়ার্ডে মো. ইউছুফ আলী, মো. জহির হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. ইউছুফ ও মো. আলা উদ্দিন। ৯নং ওয়ার্ডে মংএ মার্মা, মো. মঞ্জুর আলম, উশৈথোয়াই মার্মা ও মো. এরশাদ মিয়া নিজ নিজ মার্কা নিয়ে জোর প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন সমানতালে। এদিকে ২নং ওয়ার্ডে কোন প্রতিদ্বন্ধি না থাকায় মোহাম্মদ হোসেন বাদশা ও ৪নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ রফিক বিনা প্রতিদন্ধিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র পদে ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মূলত ভোটের লড়াই হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জহিরুল ইসলামের নৌকা ও বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শাহিনের ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে।

পৌর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে রাজু গাজী, সাদ্দাম হোসেন, রফিক সরকার ও নুরুল ইসলামসহ অনেকে চকরিয়া নিউজকে জানান, পৌর এলাকায় গত পাঁচ বছরে বর্তমান মেযর মো. জহিরুল ইসলামের সময়ে রাস্তা ঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার প্রচেষ্টায় বর্তমানেও কোটি টাকার কাজ চলছে। এসব বাস্তবায়িত হলে পৌরসভাটি মেঘা সিটিতে পরিণত হবে। তাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জনগন আবারো উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়ে জহিরুল ইসনলামকে নির্বাচিত করবেন।

সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জোসনা বেগম চকরিয়া নিউজকে বলেন, জনগন আমাকে দুইবার ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। আমিও নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিশ্রুতি মতে জনগনের জন্য সাধ্যমত কাজ করেছি। তাই আশা করছি এবারও জনগন আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, গত ৫ বছরে আমি মেয়র থাকাকালীন সময়ে তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করণসহ পৌরসভা ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ৪৩ কোটি ৫২ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছি। আরো ৫৬৭ কোটি ৮১ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে পূণরায় মেয়র নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব প্রকল্প ও পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন হলে লামা পৌরসভা আগামী ৫ বছরে মেঘা সিটিতে পরিণত হবে।

এদিকে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, সারা দেশে ধানের শীষের ব্যপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। লামাও তার বাইরে নয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি মনে করি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি জয়যুক্ত হব। জয়ী হলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৌরবাসীর জন্য কাজ করবো।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ টি এম শহিদুল ইসলাম সিকদার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনগণ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. রেজাউল করিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভার তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৬০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. আমির হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পায় ২ হাজার ৮৩৫ভোট ।

পাঠকের মতামত: