ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া সদরে জায়গাসহ বিট পুলিশিং কার্যালয় দিলেন এমপি জাফর, উদ্বোধন করলেন পুলিশ সুপার

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ঃ কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের বাস টার্মিনাল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যাত্রীসাধারণসহ সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তা, পুলিশী সেবা প্রদান এবং চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধকর্ম রোধে স্থাপন করা হয়েছে বিট পুলিশিং কার্যালয়। কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের সার্বিক সহযোগীতায় এই কার্যালয় স্থাপন এবং উদ্বোধন করা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সকালে।
উল্লেখ্য, বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পৌরসভার কিচেন মার্কেটের দোতলায় এমপি জাফর আলমের ক্রয়কৃত পজেশনেই এই বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালানো হবে। আগামী ৯৯ বছরের জন্য পুলিশকে রেজিষ্ট্রি কবলার মাধ্যমে সেই পজেশন হস্তান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপি জাফর আলম। যে পজেশনের বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ৩৫ লক্ষ টাকা।
মাষ্টার পাড়া বিট পুলিশিং কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মতবিনিময় সভার। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম। উদ্বোধক ছিলেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
‘বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ শ্লোগানে এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের। থানার অপারেশন অফিসার মোজাম্মেল হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম, বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম লিটু। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, পৌরসভার সভাপতি অধ্যাপক একেএম শাহাবুদ্দিন, চকরিয়া প্রেস কাবের সভাপতি এম আর মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রশীদ দুলাল, সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহাবুদ্দিন মাহমুদ, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. বশিরুল আইয়ুব, আবাসিক মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মনজুর আলম চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসি চৌধুরী, পৌরসভার কাউন্সিলর ও মেয়র পদপ্রার্থী জিয়াবুল হক আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন চৌধুরী, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আহমদ রেজাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘চকরিয়া-পেকুয়াসহ পুরো কক্সবাজারের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই তুলনায় যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পায় না। অনেক বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শুধুমাত্র জনগণকে পুলিশি সেবা প্রদানে।
বর্তমান পুলিশ সুপার, সহকারি পুলিশ সুপারসহ চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতার চিত্র তুলে ধরে এমপি জাফর বলেন, আমার কাছে তথ্য রয়েছে, ঘুষ-বাণিজ্য ছাড়াই চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষ পুলিশি সেবা পাচ্ছেন। কোন মামলা বা জিডি করতে গেলে পুলিশকে টাকা দিতে হচ্ছে না। যা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের এবং বিরল ঘটনা। তাই পুলিশের যে কোন কাজে এবং সমস্যায় আমি ব্যক্তিগতভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করি। ইতোমধ্যে চকরিয়া এবং পেকুয়া থানায় যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল তা একে একে সমাধান করে দিয়েছি। পুলিশও কোন ধরণের উৎকোচ ছাড়াই জনগণকে পুলিশি সেবা প্রদান করছেন। এজন্য আমি ব্যক্তিগত এবং চকরিয়া-পেকুয়াবাসীর পক্ষ থেকে পুলিশকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
এমপি জাফর আলম ঘোষণা দেন, আজ যেখানে মাষ্টার পাড়া বিট পুলিশিং কার্যালয় উদ্বোধন হচ্ছে সেই পজেশন আমার ব্যক্তিগতভাবে ক্রয় করা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই পজেশন আগামী ৯৯ বছরের জন্য রেজিষ্ট্রি কবলার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। একইভাবে যেখানে পুলিশের বিট কার্যালয় স্থাপন হবে, সেখানেই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে ব্যক্তিগতভাবে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান (পিপিএম সেবা) বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয় ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় এমন অপরাধ দমন করা হবে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে। কিশোর অপরাধ কারা করছে, তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ বড়সড় অভিযানও পরিচালনা করা হবে এই বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে। থানা হচ্ছে পুলিশি সেবার কেন্দ্রস্থল, তবে জনসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে। দিনরাত মানুষের সেবায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু রাখা হবে এবং সরাসরি বিটে এসে অভিযোগও জানাতে পারবেন ভুক্তভোগীরা।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, ঘুষমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনসহ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কোন ধরণের অনৈতিক লেনদেন বা ঘুষ-বাণিজ্যে লিপ্ত না থাকার কঠোর নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে জেলা পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, জনগণকে পুলিশি সেবা দিতে হবে সম্পূর্ণ ফ্রি-তে। এর পরও যদি কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসাথে আপনারাও (জনগণ) টাকা নিতে প্রলুব্ধ করবেন না পুলিশকে।
থানায় টাউট, বাটপার, দালাল, তদবিরবাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, যারা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য থানায় যাবেন, পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে।’

পাঠকের মতামত: