ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

নাগালের বাইরে সবজি, অর্ধেক দামও পাচ্ছে না কৃষক

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: খুচরা বাজারে শীতকালিন সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া হলেও নায্য মূল্য পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষকরা। পাইকার ও আড়ৎদারদের কারসাজির কারণে বাজারে দাম না পাওয়া কক্সবাজারের সবজি চাষিরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন। এজন্য প্রসাশনের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের শেষে অতিবৃষ্টিতে জেলার ১০ ভাগ সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পরবর্তীতে চাষীরা ঘুরে দাঁড়াতে সবজি চাষাবাদের জন্য দিনরাত মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শীতের সবজির বাজার ধরাই তাদের টার্গেট।

ইতোমধ্যে পুরোদমে চলছে শীতের আগাম সবজি তোলা এবং নতুন করে আবাদের কার্যক্রম। মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের অভিযোগ, পাইকার ও আড়ৎদারদের কারসাজিতে তারা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এজন্য প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন পল্লী অঞ্চলে সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালেই আছে। একই সবজি শহরের বড় বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই গুন দামে। খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছেন আরও অন্তত দুই গুণ।

পল্লী অঞ্চলের পাইকার, আড়ৎদার আর মধ্যসত্তভোগী ও পরিবহণ খরচ যোগ করে একই সবজি বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে ছয় গুন পর্যন্ত বেশি দামে। ফলে পল্লী অঞ্চলে সস্তায় বিক্রি হওয়া সবজি শহরে কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।

দিনের কাজ শেষে টেকপাড়া বাজারে সবজি কিনতে আসলেন রিকশা চালক আমিনুল ইসলাম। একটু বড় ফুলকপির দাম জানতে চাইলে দোকানী হাকলেন এক দাম ৫০ টাকা। একই দোকানে মাঝারী আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। বাধ্য হয়ে ৩০ টাকায় সস্তার সবজি হিসেবে পরিচিত হাইব্রিড এক কেজি বেগুন ও ২০ টাকায় দুই আটি লাল শাক কিনে বাজার ত্যাগ করেন তিনি। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কথা বলেন একরাশ বিরক্তি নিয়ে।

কাঁচা বাজারে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন এমন সবাই সবজির দাম নিয়ে আমিনুল ইসলামের মতো বিরক্ত। হাইব্রিড বেগুন ছাড়া যে কোন সবজি কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি কমপক্ষে ৫০ টাকা। অথচ সারা দেশে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। পল্লী এলাকায় তুলনামূলক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। হরতাল, অবরোধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় জেলার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। বিপুল সরবরাহ থাকা সত্তেও বাজারে সবজির উচ্চমূল্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলার ৮ হাজার ৭শত’ হেক্টর জমিতে এবছর সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে অক্টোবর মাসের শেষভাগে অতিবর্ষনে শীতকালীন সবজির মধ্যে ৫০ হেক্টর আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১০ ভাগ সবজি ক্ষেতের। ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা উঁচু জমিতে বেগুন, মরিচ, বরবটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাল শাক, লাউ, করল্লার চাষাবাদ করেছেন তাদের উৎপাদন ভাল হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে টমেটো বাজারে উঠানো হবে।

ক্ষতি কাটিয়ে ৯০ ভাগ আগাম শীতের সবজি বাজারে আসা শুরু করেছে। তবে কৃষকরা পাইকার ও আড়ৎদারদের কারসাজিতে পরে সবজির নায্য দাম পাচ্ছেন না। এজন্য তাদের (কৃষক) ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সবজীর বাজারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন।

সদরের খরুলয়া বাজারে পাইকারদের কাছে সবজি বিক্রি করতে আসা কোনারপাড়া গ্রামের চাষী শামসুল আলম বলেন, আগাম শীতের সবজি চাষ করেও এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অতিবৃষ্টিতে। তবে ক্ষতি কাটিয়ে তিনি বেগুন, লালশাক আর ধনেপাতা বিক্রি শুরু করেছেন। চালকুমড়া, টমেটো ওঠার পথে। তবে নানা কারনে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রধান কারন বাজারের নায্য দাম না পাওয়া।

পাঠকের মতামত: