ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

১৬ মাসেও হয়নি চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

চবি প্রতিনিধি ::  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটির ১৬ মাস শেষ হলেও গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বিভিন্ন সময় পূর্ণাঙ্গ ও হল-অনুষদ কমিটির আশ্বাস দিলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। করোনায় সবকিছু থমকে যাওয়ায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে দেরি হচ্ছে বলে জানান এই দুই নেতা। তারা বলেন, শীঘ্রই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। আমরা জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছি।
দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে। বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে বলে মনে করেন পদ প্রত্যাশী ও বিভিন্ন পক্ষের নেতারা। এদিকে করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রায় ২০ জন অনুসারী নিয়ে শাহ আমানত হলে থাকার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বিরুদ্ধে।
বাড়ছে বিশৃঙ্খলা : নানা সময় সংঘাতের কারণে কমিটি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এ শাখার নেতাকর্মীরা। গত পাঁচ বছরে কমিটি হয়েছে দুইবার। ২০১৫ সালের ২০ জুলাই আলমগীর হোসেন টিপুকে সভাপতি এবং এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতের কারণে দুই দফা স্থগিতের পর ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর কমিটি বিলুপ্ত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা থাকলেও ১৬ মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। এতে বাড়ছে হতাশা ও ক্ষোভ। বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ ও হল-অনুষদ কমিটির লক্ষে জীবনবৃত্তান্ত ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যয়ন পত্র আহ্বান করলেও গঠিত হয়নি কমিটি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিবৃতি ও হতাশা জানিয়েছেন পদ প্রত্যাশীরা।
বিভিন্ন পক্ষের নেতাদের বক্তব্য : সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক আমির সোহেল বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় কর্মীদের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভ কাজ করছে। কমিটি থাকলে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি থাকত। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের মূল দাবি সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বহিষ্কার। সভাপতির বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী, মাদকাসক্ত এবং অছাত্রসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এত অভিযোগ নিয়ে কেউ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে বহাল থাকতে পারেন না।
শাখা ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, প্রায় দেড় বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পেরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। যার কারণে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সমপ্রতি সভাপতির হোটেলে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। সভাপতির সকল অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
হলে থাকার অভিযোগ : বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ থাকলেও নিয়ম ভেঙে হলে অবস্থান করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। ২৮ আগস্ট রাতে অবৈধভাবে হলে থাকার খবর পেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে অভিযান চালিয়েছিল প্রক্টরিয়াল বডি। এসময় কাউকে না পেলেও শাহজালাল হলে ৭টি এবং শাহ আমানত হলে ৩০টি রুমের তালায় ‘সমস্যা’ পাওয়া বলে জানায় প্রক্টরিয়াল বডি। অনুসন্ধানে জানা যায়, শাখা সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ক্যাম্পাসে এলে রাত কাটান শাহ আমানত হলের ৩১৩ নম্বর কক্ষে। তার সাথে প্রায় ২০ নেতাকর্মীও হলে থাকার খবর মিলেছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শাহ আমানত হলের ৩১১, ৩১৯, ৩২১, ৩২৩, ৩৪৮, ৩৫২, ৩২২, ২০৪, ৩৪৯, ৩৩০ এবং ৩৩৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থাকেন। এছাড়া নির্মাণাধীন চবি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পাশে অবস্থিত মৃত্তিকা ভবন ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন উপ-পক্ষের নেতৃস্থানীয় ৫ জনের থাকার খবর রয়েছে।
হলে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল আজাদীকে বলেন, অনেক আগেই হল ছেড়ে দিয়েছে আমাদের লোকজন। এখন কেউ থাকে না।
এ ব্যাপারে হলের প্রভোস্ট প্রফেসর নির্মল কুমার সাহা আজাদীকে বলেন, খোঁজখবর নিয়েছি, এ রকম নেই। এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
সভাপতি-সম্পাদকের বক্তব্য : সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু আজাদীকে বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারিতে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছি। এর এক মাস পরেই করোনা মহামারি শুরু হয়ে যাওয়ায় কমিটি নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। আমরা সেবামূলক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এখন কমিটির জন্য কাজ করছি। কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। সাথে হল ও অনুষদ কমিটিও থাকবে। হয়ত প্রথম ধাপে সব হল অনুষদ সম্ভব হবে না। তবে ছেলে-মেয়ে উভয় হলে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।আজাদী

পাঠকের মতামত: