ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস

শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু আজ

লাবণ্য রাণী পূজা, নিজস্ব প্রতিবেদক ::
আজ ষষ্ঠী, দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম আচার। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পুরাণ অনুসারে, রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজা করেন। অকালে দেবীকে তিনি বোধন করেন বলে একে অকালবোধনও বলা হয়। এবার স্বর্গের

কৈলাস থেকে দেবী দুর্গার আগমন দোলায় চেপে এবং আগামী সোমবার বিজয়া দশমীতে বিদায় নেবেন গজে (হাতি) চড়ে। যার অর্থ মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হবে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পাবে পৃথিবীর মানুষ। শস্য শ্যামলায় পরিপূর্ণ হবে বসুন্ধরা। তবে এবার দেবীর আগমন দোলায় (পালকি) চড়ে। দোলা বা পালকিতে সূচিত হয় ভয়ঙ্কর মহামারী। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য।

করোনা মহামারী যেন দুর্গার দোলায় আগমনের বহিঃপ্রকাশ। এবার দুর্গাপূজায় তাই উৎসবের সে আবহ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। রাত নয়টার পর দেশের কোন পূজামন্ডপ খোলা রাখা যাবে না। হবে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। দর্শনার্থী প্রবেশেও থাকবে কড়াকড়ি। প্রতিমা বিসর্জনের সময় করা যাবে না কোন শোভাযাত্রা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার করোনার কারণে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

সকলকে পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার দুর্গাপূজার কোন উৎসব হচ্ছে না। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে পূজার আয়োজন। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এ পাঁচদিন প্রতিদিন সকাল থেকে বেলা দেড়টা-দু’টা পর্যন্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান চললেও বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাতৃবন্দনা ও শারদোৎসব। করোনার অতিমারীতে এবার শুধুমাত্র দেবী দুর্গার আরাধনায় নিমগ্ন থেকে পূজার্থীদের উৎসব আয়োজন পরিহার করতে অনুরোধ করেছেন। জীবন বাঁচলে ধর্ম বাঁচবে, করোনাকালীন বাস্তবতাকে মেনে তিনি সকলকে দুর্গাপজা উদযাপনের আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম জেলায় এবার ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন মিলিয়ে মোট ১৯১৩টি পূজামন্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পূজা উদাপন পরিষদের বিভাগীয় যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা বাঙালির জাতীয় উৎসব। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে এবার উৎসব পরিহার করে মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতায় হবে দুর্গাপূজা। পূজার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুজোমন্ডপে ভিড় করবেন না। সন্ধ্যা আরতির পর গভীর রাত পর্যন্ত গান-বাজনা বন্ধ রাখুন। আপনি সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ রাখুন।

নগরীতে এবার ২৭৩টি মন্ডপে উদযাপিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। এর মধ্যে সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন। জে এম সেন হলে আজ মায়ের বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদার বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পূজার আয়োজন করেছি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিধির ব্যাপারে আমরা কঠোর আছি।

তিনি পূজার্থীদের উদ্দেশে বলেন, করোনার কারণে এবার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান ছাড়া উৎসবের সব আয়োজন পরিহার করুন। যথাযথভাবে মায়ের আরাধনা করুন, যাতে মহামারী মোকাবিলা করে আমরা আগামী বছর আবারো অতীতের মতো দুর্গোৎসব উদযাপন করতে পারি।

পাঠকের মতামত: