ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আপনার ফোন বিদেশ থেকে আনা ?

অপেক্ষায় থাকুন দুঃসংবাদ আসছে খুব তাড়াতাড়ি

রাফাত ইয়াসির হাসান ::  বিদেশ থেকে ফেরার সময় সঙ্গে করে কি নিয়ে এসেছিলেন কোনো মোবাইল ফোন? কোনো স্বজন কি বিদেশ থেকে আপনার জন্য উপহার হিসেবে এনেছিলেন দামি কোনো মোবাইল? কিংবা কম দামে কি চোরাই মার্কেট থেকে কিনেছিলেন নামি ব্রান্ডের মোবাইল? এমন একটি ঘটনাও যদি আপনার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে দুঃসংবাদ। খুব তাড়াতাড়ি এমন সময় আসছে, যখন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন আপনার মোবাইলটি অকেজো পুরোপুরি। সেই মোবাইলে আপনি না পারছেন কল করতে, না পারছেন রিসিভ করতে।

সেই অভিযোগ দেওয়ারও কোনো জায়গা থাকছে না। কারণ আপনার মোবাইল ফোনটি ইতিমধ্যে সরকারের চোখে ‘অবৈধ’। সুতরাং তাতে এমনকি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোরও হাত-পা বাঁধা। যাবেন কোথায়?

হ্যাঁ, আপনার সাধের মোবাইলটিকে অকেজো করে দিতে এখন কাজ করছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। মোবাইলের নেটওয়ার্ক সার্ভিস থেকে এই ধরনের ফোন সরিয়ে নেওয়ার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে টেলিযোগাযোগের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বিটিআরসি বলছে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবং দেশীয় মোবাইল ফোন নির্মাতাদের স্বার্থ রক্ষা করতে অবৈধ মোবাইল ফোনের বিরুদ্ধে তারা এভাবেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

বিটিআরসি এরই মধ্যে বৈধ মোবাইল ফোনের একটি ডেটাবেস তৈরি করেছে। এখন তারা দেশের প্রথম ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপনের কাজ করছে। এই এনইআইআর হবে মূল ম্যাজিক— যা ‘অবৈধ’ মোবাইল ফোনগুলোকে অকেজো করে দেবে। ইতিমধ্যে বিটিআরসির পক্ষ থেকে মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছে এসএমএসও পাঠানো হচ্ছে— যাতে তাদের ফোনের বৈধতা যাচাই করে নেওয়া হয়।

দেশীয় মোবাইল ফোন নির্মাতাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সরকার বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছে। শুধু এ কারণেই আমদানিকৃত স্মার্টফোনের ওপর ৫৭% এবং বেসিক ও ফিচার ফোনের ওপর ৩২% কর আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় মোবাইল ফোন সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমে ১৮% ও ১৩% কর দিতে হচ্ছে।

এটা সত্যি যে, মোবাইল হ্যান্ডসেট যদি অবৈধভাবে দেশে আসে, তাহলে সরকার আমদানি শুল্ক এবং কর আকারে একটি বিশাল পরিমাণ টাকা হারায়। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বাজারে মোবাইল ফোন অবৈধভাবে প্রবেশের কারণে সরকারের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআইএ) দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বর্তমান বাজার প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। প্রতি বছর প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল ফোন সেট বৈধভাবে বিক্রি হয়। অন্যদিকে প্রায় এক কোটি মোবাইল সেট অবৈধভাবে দেশের ভেতরে ঢোকে।

স্যামসাং হ্যান্ডসেটের স্থানীয় নির্মাতা ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ছাড়াও বৈধ আমদানিকারক ও নির্মাতারাও ফোন চোরাচালানের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চোরাচালানিদের কাছে বাজার হারাচ্ছি। কারণ তারা সস্তায় ফোন বিক্রি করছে। কিন্তু আমরা করের কারণে তাদের দামে বিক্রি করতে পারি না। বেশিরভাগ অবৈধ ফোনই আসে মধ্যপ্রাচ্য এবং সিঙ্গাপুর থেকে।’

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১১টি কোম্পানি মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজন করার জন্য নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে নয়টি কোম্পানি এখন চালু রয়েছে। এসব কোম্পানি স্থানীয় চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। যদিও ফিচার ফোনের ৯০ ভাগই এখনও আমদানিনির্ভর।

বৈধ ফোনের ডেটাবেস
গত বছরের শুরুতে বিটিআরসি মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বরের প্রথম ডেটাবেস চালু করে। এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৩৫ লাখ মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর ওই ডেটাবেসে ঢোকানো হয়েছে। গ্রাহকরা শুধুমাত্র এসএমএস পাঠিয়ে আমদানিকৃত হ্যান্ডসেটের বৈধতা পরীক্ষা করতে পারবেন এই ডেটাবেস থেকে।

মোবাইল ফোনের ক্রেতারা যে কোন হ্যান্ডসেট থেকে *#06# ডায়াল করে ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি পেতে পারেন। এই নম্বরের সত্যতা যাচাই করতে গ্রাহককে KYD15-ডিজিটের IMEI নম্বর টাইপ করে এসএমএস পাঠাতে হবে ১৬০০২ নম্বরে। এরপর একটি ফিরতি এসএমএস নিশ্চিত করবে ডিভাইসটি বৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে কিনা।

অবৈধ মোবাইল অকেজো করতে এনইআইআর প্রযুক্তি :
প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর অভাবে বিটিআরসি এখন পর্যন্ত অবৈধ কোনো ফোন বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র ক্রেতাদের জানাতে পারছে, তাদের ফোনটি বৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে কি না।

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর প্রযুক্তি সরবরাহের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিটিআরসি। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়লে ওই সময়সীমা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত ডজনখানেক কোম্পানি নিলামে অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে চারটি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বাছাইও করা হয়েছে। বিটিআরসি এখন তাদের কাগজপত্র যাচাই করে দেখছে। খুব তাড়াতাড়ি এর মধ্যে একটি কোম্পানিকে এনইআইআর সরবরাহের জন্য বাছাই করা হবে।

এনইআইআর প্রযুক্তি চালু হওয়ার পর বিটিআরসি মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে অবৈধ ফোন বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারবে। বিটিআরসিতে থাকা ডেটাবেসের সঙ্গে যদি কোনো ডিভাইসের আইএমইআই নম্বর না মেলে, তাহলে ডিভাইসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।তথ্য: চট্রগ্রাম প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: