ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নকল-ভেজালে জনস্বাস্থ্যঝুঁকি

নারগিস সুলতানা :: বাজারে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে যা বিক্রি হচ্ছে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই মানসম্পন্ন ও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কিন্তু তারপরও অজ্ঞতা, অসচেতনতা, সংশ্লিষ্ট নজরদারী সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততাসহ নানা কারণে ভোক্তাদের এই জীবনবিনাশী খাদ্যদ্রব্যই কিনে খেতে হয়।

নানা গবেষণা ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আজ খাদ্যের নামে অখাদ্য-কুখাদ্য, ভেজাল ও বিষতুল্য কেমিক্যাল খেয়ে মানুষের জীবনীশক্তি ও কর্মশক্তি নাশ হচ্ছে। শাক-সবজিতে মিশানো হচ্ছে স্বাস্থ্যহানিকর কেমিক্যাল। কেক, জেলি, সস ইত্যাদিতে মিশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল।

ফল পাকানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে। মরা মুরগি, পচা-বাসি খাবার তুলে দেয়া হচ্ছে ভোক্তাদের প্লেটে। গুঁড়া মসলাও নয় যথাযথ মানের। খাঁটি তেল, ঘি, বাটার অয়েলের নামে বিক্রি হচ্ছে বিষ। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে দেখা গেছে, দেশে উৎপাদিত ৮৪ ভাগ ঘি ও বাটার অয়েলে এক ধরনের ক্ষতিকর রং ও সুগন্ধি মেশানো হয়। নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে এগুলোকে খাঁটি বানানো হয়। মিনারেল ওয়াটারের নামে যে সব পানি আমরা খাচ্ছি তার বেশির ভাগই মিনারেল ওযাটার নয়। এমনকি বিশুদ্ধও নয়।

ফলে, এসব পানি পান করে সাধারণ মানুষ জন্ডিস এবং টাইফয়েডের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাজারে যেসব শিশুখাদ্য পাওয়া যায়, সেসবও ভেজালে ভরা। গুঁড়ো দুধ, চিপস, জুস সবইমানহীন এবং ভেজালে ভরা। অধিকাংশ জুসে রয়েছে বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং রং। এই বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং রং মানবস্বাস্থ্যোর জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।

বাজারে যেসব চিপস পাওয়া যায় সেগুলোর অধিকাংশই মানসম্পন্ন নয়। এমনকি অনেক চিপসের প্যাকেটে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই। ওইসব নিম্নমানের জুস ও চিপস খেয়ে শিশুরা পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।বাজারে মাছ তাজা ও আকর্ষণীয় করে রাখার জন্যে বরফের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত ফরমালিন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাড়াশি অভিযানের পর মাছে ফরমালিনের ব্যবহার কিছুটা কমলেও এখন আবার মুনাফাশিকারি চক্রগুলো তৎপরতা শুরু করেছে। গুড় তৈরিতে অবাধে পটাশ (এমপি) সার ব্যবহৃত হচ্ছে। মুড়িতে ধবধবে সাদা রং সৃষ্টিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই ক্ষতিকর পদার্থটি। বুঝে না বুঝে সাধারণ মানুষ এই ক্ষতিকর মুড়ি খেয়ে নানা জটিল ব্যাধির শিকার হচ্ছে।

হোটেল রেস্তোরাঁর খাদ্যসামগ্রীর অধিকাংশও ভেজাল এবং খাবার অনুপযোগী। উপরে ফিটফাট হলেও অনেক হেটেলের ভিতরে বিরাজ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পরিণতিতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সাধারণ ভোক্তারা এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে।

কিন্তু ভেজাল এবং বিষাক্ত কেমিকেল মিশানো খাবার থেকে নানা জটিল রোগ-ব্যাধির শিকার এবং শেষে অকাল মৃত্যুর শিকার হলেও পরোক্ষ খুনের দায়ে এ যাবত কোনো ভেজালকারীর ক্যাপিটাল পানিসমেন্ট হয়েছে- এমন কোনো নজির নেই।

অথচ পরোক্ষে খুনের দায়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এ ধরনের অপরাধ কমে যেতো। কৌশলে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া গণহত্যার সামিল।

তাই যেসব ঘাতক এভাবে জাতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

পাঠকের মতামত: