কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গাছের তলার মাটি সরে গেছে। শিকড় বেরিয়ে শতবর্ষী গাছের প্রাণ যায় যায়।
ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বগাচতরে একটি ছড়ার দুই পার ভরাট এবং মাঝখানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের করায় হুমকির মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। যেকোনো মুহূর্তে পার্কের উত্তরাংশের সীমানা দেয়াল ধসে পড়তে পারে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উজানের পানি প্রবহমান এই ছড়া দিয়ে ভাটির দিকে নামতে না পারায় অসংখ্য শতবর্ষী গর্জনগাছের গোড়ার মাটি ক্ষয় হয়ে শিকড় বের হয়েছে। পার্কের ভেতরে কুমিরসহ বিভিন্ন প্রাণীর বেষ্টনীর অতিরিক্ত পানিপ্রবাহে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ওই বাঁধ। তবে ছড়ার সামান্য পানি যাতে চলাচল করতে পারে, সে জন্য মাটির বাঁধের সঙ্গে দুটি পাইপ বসিয়ে দিয়েছেন দখলকারী।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বিএস ২৯ দাগের বগাচতর ছড়াখালের ২ দশমিক ২৬ একর জায়গা দখল করা হয়েছে। এতে পার্কের স্টাফ ব্যারাকে ভয়াবহ ফাটল ধরায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া পাহাড় ও মাটি কাটায় আরো এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এই অভিযোগে উলুবুনিয়া গ্রামের (বর্তমানে বিনামারার বাসিন্দা) কাজী নাছির উদ্দিনসহ ছয়জনের নামে বন আইনে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে পৌরসভার মামলা করা হয়। ১৯২৭ সালের বন আইনের (২০০০ সালে সংশোধিত) ৩৩ (১ক), (গ), (ঘ) এবং ৬৩ ধারায় এই মামলা করেন পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক শেখ।
ছড়া তীরবর্তী কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তাঁদের পাড়াসহ আশপাশের এলাকার পানি এই ছড়া দিয়ে ভাটির দিকে নেমে যেত। খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনেক বসতবাড়িও হুমকির মুখে পড়েছে।
সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বন বিভাগ ও সাফারি পার্কের নামে রেকর্ডভুক্ত প্রবহমান ছড়াখালের প্রস্থ প্রায় ৪০ ফুট। আগে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি এবং বৃষ্টির পানি এই ছড়া দিয়ে ভাটির দিকে নেমে যেত।’ তিনি অভিযোগ করেন, এর আগে বাঁধ নির্মাণে বাধা দেওয়ায় কাজী নাছির ধারালো অস্ত্রসহ সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর হামলা চালিয়েছেন। এমনকি পার্কের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ সদরসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে হয়রানিমূলক অভিযোগ করেছেন। এসব করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর দখলদারি পাকাপোক্ত করা। যাতে ছড়াখাল দখল নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান না নেয়। কাজী নাছিরের এই হয়রানিমূলক তৎপরতা নিয়ে তিনি চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
অভিযুক্ত কাজী নাছির উদ্দিন দাবি করেন, ‘১৯৮০-৮১ সালে ১ ও ২ নম্বর খতিয়ানের ৯৫ শতাংশ জায়গা সরকার আমাকে বন্দোবস্ত দেয়। যে জায়গায় কোনো ছড়াখাল নেই, কিন্তু সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পারায় আমিসহ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে বন আইনে মিথ্যা মামলা করেছেন আদালতে। মামলার সঙ্গে যেসব কাগজ দেওয়া হয়েছে, তা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।’
তবে পার্ক কর্মকর্তা মাজহার বলেন, ‘বন বিভাগের মূল খতিয়ানে জায়গাটি খাল উল্লেখ থাকলেও কাজী নাছির ঘষামাজা করে খালের জায়গায় খিল বানিয়ে কাগজপত্র তৈরি করেছেন, যা আদালতে প্রমাণিত হবে।’
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বন বিভাগের নামে লিপিবদ্ধ থাকা ছড়াখাল দখলকারী কাজী নাছির উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীন স্বাস্থ্য বিভাগের একজন পরিদর্শক। এর পরও তিনি সরকারি সম্পত্তি দখলের ঘটনায় অভিযুক্ত। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনা হচ্ছে।’
পাঠকের মতামত: