ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাজার টাকার কাঁকড়া এখন ৫০ টাকা চরম লোকসানের মুখে চাষীরা

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার :: করোনার প্রভাবে কাঁকড়া রপ্তানী বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়িদের। বিভিন্ন প্রজেক্টে পুঁজি বিনিয়োগ করে এক টাকাও পায়নি চাষীরা। যার ফলে দেউলিয়া হওয়ার পথে কাঁকড়া চাষীরা। যে কাঁকড়া প্রতি কেজি হাজার টাকায় বিক্রি হত তা এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ টাকা দরে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ করা ৮০ ভাগ জীবিত কাঁকড়া রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। যৎসামান্য কাঁকড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ব্যাংকক, হংকং, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানী হলেও কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকার মত কক্সবাজারের কাঁকড়া রপ্তানি বাণিজ্যে ধ্বস নেমেছে। বিপাকে পড়েছেন এখানকার চাষিরা। ৫ মাস যাবত রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও এত কাঁকড়ার চাহিদা নেই। কিছু বিক্রি হলেও তা পানির দরে। ব্যবসায়িরা বলছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।

মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার আংশিক বেশ কিছু এলাকায় গড়ে উঠে চিংড়ি প্রজেক্টে প্রতিবছর বিপুল পরিমান কাঁকড়া উৎপাদন হয়। যা বিদেশে রপ্তানী হয়। এই ৬ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার কাঁকড়া উৎপাদন, সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। উৎপাদিত কাঁকড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন ডিপো থেকে ঝুড়ি ভর্তি হয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। চীন দেশে করোনা ভাইরাসে মানুষ মারা যাওয়ার কারণে ২৫ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। আগে যে কাঁকড়া প্রতি কেজি বিক্রি হতো সর্বোচ্চ ১২/১৪শ টাকা। এখন সেই কাঁকড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০/৫০ টাকা দরে।

বাংলাদেশ কাঁকড়া সরবরাহারী সমিতির সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য তৈয়ব উল¯œাহ জানিয়েছেন, রপ্তানী বন্ধ থাকার কারণে চাষী এবং ব্যবসায়ি সবার মাথায় হাত পড়েছে। যারা চাষী তাদের পুরো পুঁজিই লোকসানের পথে। এখন মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত আসার আর কোন সুযোগ নেই।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং কাঁকড়া ব্যবসায়িদের লোকসান থেকে রক্ষা করতে যে দেশ সমুহে এখন কাঁকড়া রপ্তানী হচ্ছে সেসব দেশে রপ্তানী আরো বাড়াতে হবে। এছাড় কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা দিয়ে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে হবে। না হয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এই খাতটি আগামীতে স্থবির হয়ে যাবে। পুঁজির অভাবে কেউ কাঁকড়া চাষ করতে পারবে না।

কাঁকড়া সরবরাহকারী সমিতির কক্সবাজার জেলা সভাপতি শান্তি লাল নন্দী চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সরকারের ঋণ সুবিধা ছাড়া পুনরায় কাঁকড়া চাষ কিংবা ব্যবসা করা অনেকটা দুরহ হয়ে পড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে রপ্তানীকারকদের সাথে কয়েকদফা আলোচনা করেছি। সরকার চাইলে রপ্তানী আরো দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ করা যায়। চীন ছাড়াও আরো অনেক দেশ আছে স্বল্প পরিসরে কাঁকড়া রপ্তানী করা যায়। সরকার উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা সহজেই বাস্তবায়ন হবে।

বাংলাদেশ কাঁকড়া রপ্তানীকারক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, চীনে রপ্তানী শুরু করতে আমরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছি। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও যোগযোগ হয়েছে। আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যে আমরা চুড়ান্ত কিছু জানতে পারব।

পাঠকের মতামত: