ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পকেট ভারী হচ্ছে গণপরিবহণের, যাত্রীদের ক্ষোভ

নিউজ ডেস্ক ::  করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী বসানোর পাশাপাশি বাধ্যতামূলক করা হয় চালক-যাত্রীর মাস্ক পরিধান। এ জন্য ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয় ৬০ শতাংশ। তবে এসব কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ চট্টগ্রামে। গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে যাচ্ছে গণপরিবহনগুলো। বাসে বোঝাই করে যাত্রী তোলার পাশাপাশি আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। এতে স্বাস্থ্যবিধি যেমন অমান্য হচ্ছে তেমনি পকেট ভারী হচ্ছে গণপরিবহনের। যা নিয়ে প্রতিবাদ করলে বাস থেকে নেমে যেতে বলা হয় যাত্রীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমের কাছে ভাড়া কমানোর আকুতি জানাচ্ছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার নগরীর ১০ নং রুটে চলাচলকারি একটি বাসে (চট্ট মেট্রো-জ, ১১-১৪৭৫) দ্বিগুণ ভাড়ার প্রতিবাদ করে বাসের হেলপারের কাছে নাজেহাল হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। এ সময় মর্জিনা খানম নামে এক মহিলা যাত্রীকে চলন্ত বাস থেকে নেমে যেতে বলেন ওই হেলপার। শুধু তাই নয়, বাসটিতে থাকা বেশ কয়েকজন পুরুষ যাত্রীর সাথেও ভাড়া ও অধিক যাত্রী তোলা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় ওই হেলপার। পরে যাত্রীদের অভিযোগে নগরীর চৌমুহনী মোড়ে বাসটিকে আটকায় ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় যাত্রীরা গণপরিবহনের এ নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভাড়া পূর্বের মত করার আকুতি জানান।

রাশেদ হাসান নামে বাসটির ওই যাত্রী বলেন, ‘সরকার দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে ও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী বসানোর নির্দেশ দেন। এজন্য ৬০ শতাংশ ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়। তবে চট্টগ্রামের গণপরিবহনগুলো সরকারির নির্দেশনা না মেনে অধিক যাত্রী তুলছে। ভাড়াও নিচ্ছে দ্বিগুন। আর এ নিয়ে প্রশ্ন করলে বাস থেকে নেমে যেতে বলেন তারা। তারা (গণপরিবহন) যেহেতু আগের মতই যাত্রী তুলছে সেক্ষেত্রে জনগণের পকেটের কথা চিন্তা করে ভাড়া আগের মত করা হোক। শুধু শুধু গণপরিবহনের পকেট ভারী করে লাভ কি। কেন এত অনিয়ম দেখার পরও কমানো হচ্ছে না ভাড়া। নাকি এদের সাথে প্রভাবশালীরা জড়িত? হয় কঠোর নজরদারির মাধ্যমে গণপরিবহনের এ নৈরাজ্য বন্ধ করা হোক। অন্যথায় ভাড়া আগের মত করা হোক। কারণ দ্বিগুণ ভাড়া গুনে ঝুঁকি নিতে আমরা রাজি নই।’

যাত্রীদের এ দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল। তিনি বলেন, ‘এক শ্রেণীর ড্রাইভার-স্টাফরা এই কাজটি করছে। যেটি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না সেহেতু সরকারের উচিত ভাড়া স্বাভাবিক করে দেয়া। কারণ দ্বিগুণ ভাড়া দেয়ার পরেও এখন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।’
যাত্রীদের এ অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম বিআরটিএতে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-এ-জামান। তিনি  বলেন, ‘বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার বিষয়টির সত্যতা পেয়েছি। দ্বিগুণ ভাড়া আদায়সহ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় তাদের জরিমানাসহ আটকও করেছি। কিন্তু বিশৃঙ্খলা ঠেকানো যাচ্ছে না। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে মাঠ পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশকে আরও কঠোর হতে হবে। অন্যথায় গণপরিবহনের এই আইন অমান্যের স্রোত ঠেকানো যাবে না।’

তবে যাত্রীদের ভাড়া কমানোর আকুতি নিয়ে কোন ধরণের মন্তব্য করেননি তিনি। অন্যদিকে গণপরিবহনের স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার এ ঠেকাতে দ্রুত আরও কঠোর হবে ট্রাফিক বিভাগ বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের ট্রাফিক কমিশনার হিসেবে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ।

এদিকে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত হলেও ভাড়া কমবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ভাড়া আগের মত করার যে দাবি তুলেছেন যাত্রীরা তা এখনও লিখিত আকারে কোথাও জানাননি। তাছাড়া এটি কেবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছে। কমাতে হলেও কেবিনেট এর সিদ্ধান্ত লাগবে। তবুও যে কারণে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে দেশের প্রতিটি জেলায়।’

পাঠকের মতামত: