ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

নিউজ ডেস্ক ::  হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, সদ্য প্রত্যাহার হওয়া টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল ৭ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশ বলে ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে বরখাস্ত করা হয়। অপরদিকে কক্সবাজারর পুলিশ সুপারের এক আদেশবলে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ৫ জনকে। তারা হলেন, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল কামাল হোসেন, সাফানুর করিম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ আসামিকে ৭ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। সিনহা হত্যা মামলায় প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়েছিল র‌্যাব।
এর আগে কড়া নিরাপত্তায় ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আদালতে নেয়া হয়। আর লিয়াকতসহ ৬ আসামিকে জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে কক্সবাজার আদালতে আনা হয়। পরে বিকেলে ৬ আসামি ও প্রদীপকে সরাসরি আদালতে নেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদেরকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে লিয়াকতকে প্রধান আসামি করে মোট ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে টেকনাফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, প্রদীপ কুমার দাস গত ৪ আগস্ট থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটিতে ছিলেন। এছাড়া অন্য আসামিরা পুলিশ লাইনেই নিরাপত্তা হেফাজতে ছিলেন। এ ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ১৬ জনকে প্রত্যাহার করেছে কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্ট প্রত্যাহার করা হয় প্রদীপ কুমার দাশকে।
কি ঘটেছিল : দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা মো. রাশেদ খান ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। আরও তিন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি উঠেছিলেন নীলিমা রিসোর্টে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।
ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথা জানিয়ে সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। এই ঘটনায় পুলিশ মামলাও করে। তবে পুলিশের এই ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বুধবারই কক্সবাজারের আদালতে মামলা করেন তার বোন শারমিন।
এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, ওসি প্রদীপের ফোনে পাওয়া নির্দেশে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই লিয়াকত আলি গুলি করে হত্যা করেন সিনহাকে। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ‘ইচ্ছাকৃত নরহত্যা’, ২০১ ধারায় আলামত নষ্ট ও মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি এবং ৩৪ ধারায় পরস্পর ‘সাধারণ অভিপ্রায়ে’ অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০২ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে (২১) মামলার প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, মাদক ও অস্ত্র আইনের মামলায় তাকেও আসামি করা হয়। এদিকে
সিনহা নিহতের ঘটনায় গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে গিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এরপর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, এই ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে বা যারা চিহ্নিত হবে, তারাই শাস্তি পাবে। এর দায় বাহিনীর উপর পড়বে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মঙ্গলবার সিনহার মা নাসিমা আখতারকে ফোন করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন।

পাঠকের মতামত: