ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার আবছার মেম্বার শত কোটি টাকার মালিক

পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বকতেয়ার মেম্বার ও ইয়াবার চালানসহকারে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া বালুখালীর আবছার মেম্বারের ইয়াবা বাণিজ্যের বহু অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, বকতেয়ার মেম্বারের সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আবছার মেম্বার ইয়াবা বাণিজ্য ছাড়াও রোহিঙ্গা কিলারদের সঙ্গে সখ্য রেখে বালুখালী ক্যাম্প অভ্যন্তরে বহু অপকর্ম করেছেন।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন বেপরোয়াভাবে ইয়াবা কারবার চালিয়ে আসলেও শেষ পর্যস্ত দশহাজার পিস ইয়াবা নিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে জেলে গেছে উখিয়ার বালুখালীর নুরুল আবছার মেম্বার। সে শনিবার ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত কুতুপালংয়ের বকতেয়ার মেম্বারের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জানা গেছে। স¤প্রতি নিজ বাড়ির সামনে ইয়াবা লেনদেনের সময় ১০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ, ইয়াবা ডন নুরুল আবছার চৌধুরী ও তার পার্টনার কমিউনিটি পুলিশিং উখিয়ার অর্থ সম্পাদক, কৃষকলীগ নেতা নুরুল আলম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদস্যরা। অভিযানে একটি অলিখিত চেক ও স্বাক্ষরকৃত ছয়লক্ষ টাকার একটি ব্যাংক চেক, ৩টি এটিএম কার্ড, স্বাক্ষরকৃত ২টি অলিখিত স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে যে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী বালুখালী পূর্বপাড়া এলাকার নুরুল আবছার চৌধুরীর বসতঘরের সামনে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। নুরুল আবছার চৌধুরীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে আসছে তারা। তাদের একটি বিশাল সিন্ডিকেটও রয়েছে। নুরুল আবছার চৌধুরী ও নুরুল আলমকে রিমান্ডে এনে তাদের সিন্ডিকেটের রাঘববোয়ালদের আটক করার দাবী তুলেছেন সচেতন মহল।

আবছার মেম্বারের সহযোগী শীর্ষ ডাকাত নুরুল হকের নেতৃত্বে মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গার মাধ্যমে ইয়াবার চালান আনা হতো তারা হচ্ছে, ইয়াবা মামলার আসামি আশিক, রোহিঙ্গাদের মধ্যে কবির আহমেদ প্রকাশ কবির মাঝি, লালু মাঝি, চিকুইন্না, জামাল, রোহিঙ্গা ডাক্তার ওসমান। আবছার গ্রেফতার হওয়ার পর তার সিন্ডিকেটের বর্তমান হাল ধরেছে তার আপন ভাগিনা আলমগীর নিসা। ইতোপূর্বে পালংখালী ইউপির জয়নাল মেম্বারসহ অনেকে ইয়াবার চালানসহকারে আটক হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে জালিয়াপালং নিদানিয়ায় ‘সী কিং’ হ্যাচারিতে সামান্য বেতনে চাকরি করতেন নুরুল আবছার। এরপর চাকরি ছেড়ে ইয়াবা জগতে পা বাড়িয়ে বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ইয়াবা বিক্রির কালো টাকা বিলিয়ে ২০১৬ সালে মেম্বার নির্বাচিত হন। ইউপি সদস্য পদ ব্যবহার করে মাত্র চার বছরে ফুলে ফেঁপে উঠেন নুরুল আবছার চৌধুরী। এর নেপথ্যে রয়েছে ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালানের বিশাল সিন্ডিকেট। বালুখালীতে সরকারী খাস জায়গা দখল করে দুইটি তিনতলা ভবন নির্মাণ, বালুখালী ও কক্সবাজারেরর কলাতলীতে কোটি টাকার জমি ক্রয়, মার্কেট নির্মাণ, বহু গাড়ির মালিক বনে গেছেন। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার দলীয় রাজনীতিতেও নিজের বেশ শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেন তিনি। ভাগিয়ে নেন উখিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদটি। টাকা উড়িয়ে হয়ে যান বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন উখিয়া উপজেলার শাখার সভাপতি। হয়ে যান পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানও। ইয়াবা কারবার সহজে চালিয়ে নিতে সব ক্ষমতাই ব্যবহার করতেন নুরুল আবছার চেীধুরী। বর্তমানে আবছার কারাগারে বন্দি থাকায় তার ভাগিনা ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ইয়াবা ডন আবছারকে ভাল মানুষ বলে সাফাই গাইছে সর্বত্র।

এদিকে আবছারের ইয়াবা ব্যবসা ও অবৈধ উপার্জন নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে আসে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাবার পিলে চমকানো তথ্য। অনুসন্ধানে তার ইয়াবা পাচার ও কালো টাকা আয়ের অনেক ডকুমেন্টও পাওয়া গেছে।
২০১৬ সালের ১৮ জুন পালংখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য নুরুল আবছার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, ওই হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, নগদ টাকা হিসেবে তার রয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। আর ব্যাংকে জমা রয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। হলফনামায় যে অর্থ উল্লেখ করেছিলেন সেটি মাত্র চার বছরে বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ দৃশ্যমান কোন ব্যবসা উল্লেখ ছিল না হলফনামায়। ইয়াবা কারবারে বনে গেছেন শত কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক। হলফনামায় তিনি আয়ের খাত হিসেবে ২ কানি কৃষি জমি রয়েছে ও কৃষি খাত থেকে তার আয় মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেখানো হলেও কিন্তু সেটি কি ব্যবসা উল্লেখ করা হয়নি। বাড়ি, গাড়ি সহ অন্য কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়। ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ৪বছরে অনেকবেশি পরিবর্তন এসেছে আবছারের অর্থ-সম্পদে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে ইয়াবার বদৌলতে অর্থ-সম্পদের জোয়ার শুরু হয় তার। হলফনামায় বাড়ি উল্লেখ না থাকলেও বর্তমানে আবছার দুটি তিন তলা বিশিষ্ট ভবন এবং ১টি টিনশেডের বিশাল কলোনীর মালিক। বালুখালী পানবাজারে আবছারের বিশাল মুদির দোকান ছাড়াও ১টি নোয়া (নোহা), ১টি ডাম্পার ও ১টি ট্রাকসহ অনেক গাড়ির মালিক তিনি। ইয়াবা বহনের অন্যতম বাহন হিসেবে তার বড় ট্রাকটি চলাচল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে। তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া নুরুল আলম চৌধুরীও ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য। তার এক সহোদর নুরুল আমিন ইয়াবার চালানসহ ধরা পড়ে কক্সবাজার জেলে আছেন। সুত্র : দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত: