ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কুতুবদিয়ায় এক কিলোমিটার বাঁধ ভাঙ্গা থাকায় অরক্ষিত উত্তর ধুরুং

আবু আব্বাস সিদ্দিকী, কুতুবদিয়া ::  এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় কুতুবদিয়া উপকূলের উত্তর ধুরুং এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এতে শতশত পরিবার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। চলতি বর্ষা মৌসুমে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, চরধুরুং এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় জোয়ারভাটা বসার কারণে কিছু সংখ্যক লোক ভাঙ্গা বাঁধে জাল বসিয়ে মাছ ধরছে। অবশ্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দাবী আগামী এক মাসের মধ্যে ভাঙ্গন বেড়িবাঁধ এলাকায় মেরামত কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান।
পাউবো কর্তৃপক্ষ সূত্রে প্রকাশ, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কুতুবদিয়া উপকূলের ১৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করার জন্য প্রায় ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। বিগত ৪ বছরেও প্রাক্কলিত বাঁধের নির্মাণ কাজ চলমান। ডক ইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। গত অর্থ বছর নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ডক ইয়াডের নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার ঈগল রিচ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ মেরামত ও উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। তাদের উন্নয়ন কাজের প্রাক্কলনের সাড়ে ৯কিলোমিটার কাজের মধ্যে কাহারপাড়া, তেলিপাড়া, পূর্ব-পশ্চিম তাবলরচর, আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, দক্ষিণ মুরাণিয়া, অমজাখালী, দক্ষিণ কায়ছারপাড়া এলাকাসহ প্রায় ৬কিলোমিটার মাটি দিয়ে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তন্মধ্যে প্রাক্কলনে ৭ কিলোমিটার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা বাঁধ মেরামত কাজের মধ্যে কাহারপাড়া, তাবলরচর, জেলেপাড়া, দক্ষিণ কায়ছারপাড়া এলাকায় এক কিলোমিটার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে সমাপ্ত করা হবে বলে ঈগল রিচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর প্রকৌশলী শাহীন নিশ্চিত করেন।
তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ফলে কায়ছারপাড়া, নয়াকাটা, আকবরবলী ঘাট, পেয়ারাকাটা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। বর্তমানে এ সব এলাকায় জোয়ারভাটা বসেছে। অবশ্য আগামী এক মাসের মধ্যে বাঁেধর মাটির কাজ শেষ করার জন্য সরঞ্জামাধী মজুদ আছে। ব্লক তৈরীর জন্য পাথর ও বালি মওজুদ করা হচ্ছে। আগামী অক্টোবর নভেম্বর মাসে ব্লক তৈরীর কাজ শুরু হবে বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুতুবদিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্য্যালয় শাখা কর্মকর্তা এলটন চাকমা জানান, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থ বছর বরাদ্দকৃত অর্থের প্রাক্কলন কাজের মধ্যে ০৯কিলোমিটার মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ এবং সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা ০৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ করার কথা। বর্তমানে প্রাক্কলিত সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা তাবলরচর, কাহারপাড়া, জেলেপাড়া, এক কিলোমিটার মাটির বাঁধের কাজের ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। মাটি দিয়ে বাঁধ মেরামতের ৯কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়াও প্রাক্কলিত বরাদ্দের সাড়ে ৫ কিলোমিটার সিসি ব্লকের কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শেষ করতে না পারায় ঐ এলাকা দিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। এতে ঐ সব এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ,স,ম, শাহরিয়ার চৌধূরী বলেন, কায়ছারপাড়া, নয়াকাটা, চরধুরুং এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় প্রতিনিয়তই জোয়ার ভাটা বসেছে। চলতি অমাবস্যার জোয়ারে শতশত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় থাকে। এ ছাড়াও উত্তর ধুরুং এলাকা থেকে বিগত আড়াই যুগে কয়েক’শ পরিবার গৃহহারা হয়ে অন্যত্রে পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে জোয়ারের পরিস্থিতিতে প্লাবিত অনেক পরিবার ঘরবাড়ি হারা হয়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধে এলাকাবাসী জাল বসিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।
পাউবোর বান্দরবন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, চলতি অর্থ বছর জেলেপাড়া, মুরালিয়া, পূর্ব-পশ্চিম তাবলরচর, বায়ুবিদ্যুৎ, কাহারপাড়া, চরধুরুং এলাকায় মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ ৭০ভাগ শেষ করেছে। কায়ছারপাড়া, চরধুরুং, নয়াকাটা এলাকায় মাটির বাঁধ মেরামত করতে না পারায় ঐ এলাকায় জোয়ারে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রাক্কলিত বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি অধ্যাপক শফিউল মোর্শেদ চৌধূরী জানান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিগত ২০১৬ সনে ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। বিগত ৪ বছরেও প্রাক্কলিত বরাদ্দের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতি বছর জুন ফাইন্যালে এলেই যেভাবে হোক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাউবো কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ পূর্বক বিল উত্তোলন করে যাচ্ছে। বিগত আড়াই যুগ ধরে কুতুবদিয়া উপকূল রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলেও দৃশ্যমান উত্তর ধুরং এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নেই বললে চলে।
আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছাফা বিকম জানান, কুতুবদিয়া দ্বীপের সর্ব দক্ষিণে খুদিয়ারটেক ও তাবলরচর দুইটি গ্রাম। ১৯৯১ সনের ঘূর্ণিঝড়ে খুদিয়ারটেক গ্রামটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিম তাবলরচর,পূর্ব তাবলরচর, বাযুবিদ্যুৎ এলাকা, হায়দার বাপেরপাড়া, কাহারপাড়া, তেলিপাড়া, জেলেপাড়া এলাকায় ভাঙ্গন বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
এদিকে, তারলরচর এলাকার বাসিন্দা সম্ভাব্য আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী কাইমুল ইসলাম জানান, অবশ্য পশ্চিম তাবলরচর, কাহারপাড়া, জেলেপাড়া এলাকায় এক কিলোমিটার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়। মেরামত কাজে বাঁেধর উচ্চতা ও ব্লক বসানো নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বাঁধোর উচ্চতা কম হওয়ায় জোয়ারের পানি বাঁধ টপকিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।
পাউবো কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজে এবং বর্তমান কাজে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঐ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আরো ৩০ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ১২৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন তৈরী করে কাজ করার কথা। কিন্তু চলতি অর্থ বছর অর্থাৎ চলমান বর্ষা মৌসুমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু না করায় সাড়ে ৫কিলোমিটার এলাকা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেড় কিলোমিটার বাঁধ সর্ম্পূণ নিলীন। ঝুঁকির্পূণ ও বিলীন এলাকা দিয়ে বর্তমানে জোয়ারভাটা বসেছে।
পাউবোর কুতুবদিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে উত্তর ধুরুং এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ ভাঙ্গা রয়েছে। আগামী দুই এক মাসের মধ্যে এ ভাঙ্গন বাঁধ মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।

পাঠকের মতামত: