ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পিডিবির তার গলছে কারখানার ৪ চুল্লিতে

মনসার টেকে ধ্বংসযজ্ঞ : দেখভাল করবে কে?

নিউজ ডেস্ক ::  চারটি গ্যাসের চুল্লিতে রাতভর গলানো হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এলুমিনিয়ামের তার। এরপর পাশে একটি ঘরে ওই পাতগুলো রাখা হয়। সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে ট্রাকে করে আনা হয় শহরে। পরে এসব পাত গলিয়ে তৈরি করা হয় এলুমিনিয়ামের নানা সামগ্রী। নগরী থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে পটিয়ার মনসার টেক এলাকায় তার গলানোর চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের দাবি- গ্যাস নয়। কেরোসিনের চুল্লিতেই এলুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিল তৈরির ফয়েল পেপার গলানো হয়।

এসএস এলুমিনিয়াম মোল্ডিং এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ওই ঢালাই কারখানায় বছরের পর বছর এ কাজ চলতে থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। করোনাকালে তিন মাস প্রশাসনের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকার সঙ্গে এখানকার তার গলানোর কাজও বন্ধ ছিল। কারণ সে সময় শহর থেকে তার নেয়া এবং ঢালাই কারখানা থেকে এলুমিনিয়ামের পাত শহরে আনার বাহন ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল। পিডিবির বিভিন্ন কার্যালয় খোলার পর এখানে তার গলানোও শুরু হয়েছে।

জানা যায়, প্রশাসনের ঠিক কোন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখভাল করবে তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকায় নির্ভয়ে এই ব্যবসা বছরের পর বছর ধরে চলছে। ইতোপূর্বে নগরীর হাজিপাড়াসহ একাধিক স্থানে এ ধরনের গোপন ঢালাই কারখানা ছিল। কিন্তু পিডিবির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে পিডিবির তার উদ্ধার ও সেসব অবৈধ কারখানা সিলগালা করে দেয়ার পর সেগুলো আর চলেনি। তাই শহর থেকে কিছু দূরে গ্রামের ভেতরে একটি কারখানা স্থাপন করা হয়।

পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামসুল আলম বলেন, অতীতে এ ধরনের ঢালাই কারখানার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শহরের বাইরে তারা এখন এসব স্থাপনা করছে। আমরা কারখানাটি যাচাই বাছাই করে দেখছি কী ধরনের তার তারা গলায়। পিডিবির তার অবৈধভাবে গলানোর প্রমাণ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব আমরা।

সরেজমিন মনসার টেকের ওই ঢালাই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, চুল্লি জ্বলার কারণে আশেপাশের গাছের ডাল ও পাতা পুড়ে গেছে। বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে মরে গেছে ঢালাই কারখানার আশেপাশের ঘাসও। মনসার টেকের কাছে তিনটি সড়ক। একটি কালুরঘাট ও একটি আনোয়ারা চলে গেছে। দুইটি সড়ককে আরেকটি সড়ক দ্বারা সংযুক্ত করা হয়েছে যেটিতে সচরাচর যানবাহন চলাচল করে না। পিডিবির তার গলানোর এসএস এলুমিনিয়াম মোল্ডিং এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নামের কারখানাটি এই সড়কের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে। চারদিক দিয়ে নিশ্ছিদ্রভাবে ঘেরা দেয়া হয়েছে যাতে বাইরের কেউ কোনোভাবেই ভেতরে যেতে না পারে। তার উপর অন্তত চারজন লোক সারাক্ষণ মূল ফটকের ভেতরে-বাইরে পাহারায় থাকে। টিনের ঘেরার মাঝে কয়েকটি ছোট ছোট ছিদ্র। তা দিয়ে সারাক্ষণ বাইরে চোখ রাখা হয়। অনুসরণ করা হয় কারা আসা যাওয়া করছে তাদের পাশ দিয়ে।

আবাসিক এলাকা থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন এই কারখানাটি। প্রবেশ পথের বাইরে এলুমিনিয়ামের বস্তু সদৃশ কিছু ট্যাবলেটের ঢাল রাখা হয়। সেখানে দায়িত্বরত কারখানার অন্যতম মালিক বকুল বলেন, এগুলো গলিয়ে পাত বানানো হয়।

কীভাবে গলানো হয় জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিলেন না। ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে কোনোভাবেই যেতে দিলেন না। তিনি বলেন, আরও দুইজন মালিক আছেন। তারা আসলেই কেবল ভেতরে যাওয়া সম্ভব।

তারেক হোসেন শাহরুখ নামের অপর মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারখানায় আমরা পিডিবির নিলামে পাওয়া তার ঢালাই করি। কাগজপত্র আছে। আপনি চাইলেই এসব দেখানো যাবে। গত তিনদিন ধরে এসব কাগজ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি তা দেখাতে পারেননি। গতকাল মঙ্গলবার বলেন, মুরাদপুরে শহীদ এলুমিনিয়াম আছে। সেটির মালিক হলেন একরামুল হক। মূলত তিনি যেসব তার দেন সেগুলোই গলানো হয়।
তারেকের দাবি- কেরোসিনের চুলায় এলুমিনিয়ামের ফয়েল পেপার গলানোর কাজ করা হয়। মাঝে মাঝে নিলামে পাওয়া বিদ্যুতের তারও গলানো হয়। বিদ্যুতের তার সব সময় পাওয়া পাওয়া যায় না।

গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, নগরীর মির্জাপুল এলাকায় অবস্থিত শহীদ এলুমিনিয়ামের মালিক একরামুল হক বলেন, ‘আমি ওই কারখানায় কোনো তার সরবরাহ করি না। ঢাকা থেকে এলুমিনিয়াম ফয়েল পেপার আনি। সেগুলো শাহরুখের কারখানায় গলানো হয়।’

পাঠকের মতামত: