ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রামুর বিতর্কিত চেয়ারম্যান মোস্তাকের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ

সোয়েব সাঈদ, রামু ::  কক্সবাজারের রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের বহুল বিতর্কিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে এবার ডব্লিওএফপির ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। কাউয়ারখোপ বাজারের একটি মুদি দোকান থেকে শুক্রবার (৩ জুলাই) ভোরে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার দেওয়া ১৭ বস্তা ত্রানের চাল ও ৭ কার্টুন বিস্কিট জব্দ করেছেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা।

অভিযোগ ওঠেছে এই করোনা মহামারীতে কর্মহীন ও হত দরিদ্র মানুষের জন্য বিশ্বখাদ্য সংস্থার (ডব্লিওএফপি) বরাদ্দকৃত এসব চাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ওই দোকানে সরিয়ে রেখেছেন।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, রাতে জেলা প্রশাসক স্যারের ফোন পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় জনৈক হারুন অর রশিদ নামের ব্যক্তির দোকান থেকে বিশ্বখাদ্য সংস্থার দেওয়া ১৭ বস্তা চাল এবং ৭ কার্টুন বিস্কিট উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

ইউএনও বলেন, প্রাথমিকভাবে অনিয়মের একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থার দেওয়া এসব চাল এখানে কিভাবে এল, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে বাইরের দাতা সংস্থাগুলো সহায়তা দিতে নিরুৎসাহিত হবে।

যে দোকান থেকে চালগুলো উদ্ধার করা হয়েছে ওই দোকানের মালিক হারুন অর রশিদের বক্তব্যর একটি ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। ভিডিওতে হারুন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বাবুল ও শুক্কুর নামের দুই লোক মান্নান চৌকিদারের চাল বলে দুই বস্তা চাল রেখে যায়। পরে আরও কয়েক বস্তা চাল নিয়ে আসে। এ সময় আমি এতগুলো চাল এখানে কেন রাখছো, জিজ্ঞেস করলে তারা এসব কার্ডের চাল এবং যাদের চাল তারা নিয়ে যাবেন বলে জানান। তবে এসব চাল কেনার বিষয়ে আমার সঙ্গে কোন কথা হয়নি।

কাউয়ারখোপ ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য হাবিব উল্লাহ জানান, আমার জানা মতে, এসব চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ সরিয়ে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বিশ্বখাদ্য সংস্থার এসব চাল বিতরণ সম্পন্ন করা হলেও এখনো (৩ জুলাই রাত পর্যন্ত) ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হলরুমে ৪০ বস্তা চাল জমা আছে। এমনকি চালের কার্ডের জন্য তালিকাভুক্ত উপকারভোগীরা একাধিকবার চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিলেও চেয়ারম্যান কার্ড দেননি এবং তাদের চালও রেখে দিয়েছেন।

ডব্লিওএফপির সহায়তায় কম হলেও ১০০ জনের কার্ড নাম ভুল আছে বলে তিনি নিয়ে ফেলেছেন,পরে তার নিজস্ব লোক দিয়ে এসব চাল চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছেন।

জানা গেছে, এসব ত্রাণের জন্য যে তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ করেছে, তাতে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, তাঁর ভাই, পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্য, পরিষদের চৌকিদার, দফাদার সহ অনেক নিকটাত্মীয়েরও নাম রয়েছে। যা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।

তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শুক্রবার (৩ জুলাই) রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করা হলেও কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ ফোন ধরেননি। তবে স্থানীয় বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আব্দুল্লাহ ও হাবিব উল্লাহসহ কিছু কুচক্রীমহল আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এসব করছে।

উল্লেখ্য রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বহুল বিতর্কিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের শেষ নেই। ইতিপূর্বেও এই চেয়ারম্যানের নানা অনিয়মের অডিও ও ভিডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

পাঠকের মতামত: