ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

“উলট পালট করে দে মা লুটেপুটে খাই, এসব যেন আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই”

ঢাকা মেডিকেল কলেজে একবেলা খাবারের দাম ১১ হাজার ১১১ টাকা মাত্র।

::  এম.আর মাহমুদ  ::

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার, নার্স, বয়, আয়া সহ ২০০ জনের খাবার বাবদ এক মাসের ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০ কোটি টাকা। প্রতি জনের পিছনে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, প্রতিটি সিদ্ধ ডিমের দাম ধরা হয়েছে ২ হাজার টাকা, ২ টুকরা পাউরুটির বিল দেখানো হয়েছে ৩ হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন, জাপা মাননীয় সংসদ সদস্য জি.এম কাদের। প্রশ্নোত্তরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিশ্বাস্য অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের প্রথম দিকে ফ্রি স্যাম্পল টেস্ট করানো হলেও ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ পহেলা জুলাই থেকে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। এ পরিমাণ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। কিন্তু টাকাগুলো সরকারি কোষাগারে দেবে হতভাগা করোনা রোগীরা। আর করোনা রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার পিছনে একটি মেডিকেল কলেজের ডাক্তারসহ ২০০ জন কর্মচারীর পিছনে যদি মাসে খাবার বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয় তাহলে রাজ ভান্ডারের সমূদয় টাকা করোনা রোগীদের পিছনে চলে যাবে। এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বেরসিক অনেকেই মন্তব্য করতে শোনা গেছে “উলট পালট করে দে মা লুটেপুটে খাই, এসব যেন আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই।” দেশে করোনা সংক্রামণ দেখা দেওয়ার আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিভাগে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির চিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। দূর্নীতি দমন কমিশন স্বাস্থ্য বিভাগের সীমাহীন দূর্নীতি লাগাম টানতে দূর্নীতির সাথে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। তারপরও দূর্নীতিবাজরা বেপরোয়া। না হয় করোনা চলাকালীন সময় এমন অবিশ্বাস্য অনিয়ম ও দূর্নীতি ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ডাক্তারসহ অন্যান্য কর্মচারীদের এক মাসের খাবার পিছনে ২০ কোটি টাকা ব্যয় দেখাতো না। কথায় আছে “কুকুরের লেজ কখনো সোজা করা যায় না।” একটি সিদ্ধ ডিমের দাম ২ হাজার টাকা, ২ টুকরা পাউরুটির দাম ৩ হাজার টাকা হয় কিভাবে? মনে হয় ডিমগুলো স্বর্ণের আর পাউরুটির টুকরাগুলো ছিল হিরার। স্বাস্থ্য বিভাগের লাগামহীন দূর্নীতির কারণে দেশের আমজনতা সরকারি ভাবে দেয়া সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ঢাকা মেডিকেলে ২০ কোটি টাকা খাবারের বিল কীভাবে হয়? অতীতে হাসপাতালের জন্য পর্দা থেকে বালিশ ক্রয়ে দূর্নীতির চিত্রও এদেশের মানুষ জানতে পেরেছে। কিন্তু এসব দূর্নীতির সাথে জড়িতদের শাস্তি কি হয়েছে তা কিন্তু জানা যায়নি। এভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের টাকা লুটপাট করে যারা মোটাতাজা হয়েছে তারাও কি করোনার থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে? করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে সব পেশার কম বেশি মানুষ মারা গেছে। ইতিমধ্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী স্ত্রী, প্রতিরক্ষা সচিব, ডাক্তার, পুলিশ, বিচারপতি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আবার অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে চিকিৎসা পাচ্ছে সাধারণ পাবলিক সে চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছে না। দেশের অনেক মা অভাবের তাড়নায় নিজের নাড়ি ছেড়া ধন শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। অথচ সামান্য অপরাধে অনেক ব্যক্তি বছরের পর বছর জেল কেটে মরছে। আবার কেউ কেউ হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দিব্যি আরামে আকাশ পথে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রমাণও কম নাই। ক্ষুধার তাড়নায় কেউ রুটি চুরি করলে তার হাত কাটার পরিবর্তে ওই দেশের শাসকের হাত কাটার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই আইন নেই। শুধু একটি হাসপাতালে ২০০ জন চিকিৎসকসহ স্টাফের জন্য মাসে ২০ কোটি ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কি হয় জানি না। হয়তো দুদক তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। মামলার ফলাফল কি হয় জানি না। এসব টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হলেও এখানে দেশের সব স্তরের মানুষের হক রয়েছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ কোন না কোনভাবে সরকারি কোষাগারে কর দিচ্ছে। তাই প্রতিবাদ না করা মানে বোবা শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে অবিশ্বাস্য এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় এখনও কিছু বলেননি। হয়তো তিনি ডাক্তার বলে। কারণ এক বেলা খাবারের বিল কোনদিন ১১,১১১ টাকা হতে পারে না। যারা এভাবে বিল করে করোনার মত মহামারির দূর্যোগকালে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করেছে নিশ্চয় তারা শাস্তির আওতায় আসবে বলে আশা করছেন জনগণ। কবি সুকান্ত যথার্থই লিখেছেন “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন জলশানো রুটি।” কবি হয়তো ক্ষুধার্তদের ক্ষুধার কথা বর্ণনা করলেও ভরা পেটের অবস্থা বর্ণনা করেননি। এখনও ভরা পেটের দৃশ্যটা দেখেছি, আল্লাহ দু’টি চোখ দিয়েছে বলে।

লেখক:  এম.আর মাহমুদ, দৈনিক সমকাল-চকরিয়া প্রতিনিধি

সভাপতি – চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া, কক্সবাজার ।

পাঠকের মতামত: