ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদম-পোয়ামুহুরী হয়ে জানালি পাড়া সড়ক নির্মাণ কাজে খোয়ার বদলে দেয়া হচ্ছে রাবিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  বান্দরবানের আলীকদমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অর্থায়নে সাড়ে তিন কোটি টাকার সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। লকডাউনের সুযোগে নির্জন পাহাড়ে সড়ক নির্মাণে খোয়ার (মেকাডম) বদলে পুরনো দেয়ালের সিমেন্ট মিশ্রিত ভাঙাচুরা রাবিশ ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাঙন রোধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কার্যাদেশে উল্লেখিত বেশকয়েকটি প্রতিরক্ষা দেয়ালও নির্মাণ না করার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে ওই কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় জেলার আলীকদম উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অর্থায়নে তিন কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আলীকদম-পোয়ামুহুরী হয়ে জানালি পাড়া চার কিলো ৯শ’ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলমান রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মি: অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার লাইসেন্সে উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করছেন আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিন, সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন এবং যুবদল নেতা আবু বক্কর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, লকডাউন পরিস্থিতির সুযোগে ব্যাপক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। সড়কটিতে প্যালাসাইডিং কাজে বড় অংকের বরাদ্দ ধরা থাকলেও আরসিসি কলামে নিম্নমানের রড, কংক্রিট ব্যবহার এবং ব্রিকসের দেয়ালের নিচে বালি দিয়ে কম্পেক্ট ও আরসিসি করার কথা থাকলেও মানা হয়নি নিয়ম। ডাব্লিউ এমবি কম্পেক্ট, আরসিসি কলাম, সাইড ওয়েডিনিং, প্রফেসন, সাইডবঙ বালির কম্পেক্ট তৈরিতে নিয়ম না মেনেই পরিমাণে কম করা হয়েছে। আর রাস্তার পাশ সমপ্রসারণে সাইডসোল্ডারে বড় সাইজের ইটের খোয়ার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে সিমেন্ট মিশ্রিত পুরনো দেয়ালের ভাঙাচুরা আর ব্রিকফিল্ডের পরিত্যক্ত নিম্নমানের ইট ভাঙা বা রাবিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা উমুইহ্লা মারমা, থোয়াই ম্রা, আলী আকবরসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সড়কটির নির্মাণ কাজে লোহা, কংক্রিট সবগুলোয় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। রাস্তার পাশ বৃদ্ধিতে সাইডসোল্ডারে খোয়ার বদলে দেয়া হচ্ছে সিমেন্ট মিশ্রিত পুরনো দেয়ালের ভাঙা। আরসিসি কলাম, বালির কম্পেক্ট তৈরিতে কার্যাদেশ মানা হয়নি। নির্মাণ কাজের কিছু অংশ ভেঙে যাচাই করলেই অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থায় লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তারা।
এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার সকালে নির্মাণধীন সড়কটি পরিদর্শনে যান এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আসিফ আহসান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ একটি প্রতিনিধি দল।
পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলটি অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় দ্রুত ত্রুটিপূর্ণ কাজের অংশগুলো ঠিক করে কার্যাদেশ মোতাবেক বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
নির্মাণকাজের ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা কফিল উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী এবং দেয়াল ভাঙা ব্যবহারের ছবিগুলো আমাদের কাজের নয়। ষড়যন্ত্রমূলক আমাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে।গতকাল রোববার নির্মাণ কাজ পরির্দশনে যান নির্বাহী প্রকৌশলী’সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কমপক্ষে ২০টি স্থান পরিদর্শনকালে তারা কোনো অনিয়ম খুঁজে পাননি বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদ্বয়। তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু দিক নির্দেশনা এবং কার্যাদেশ মোতাবেক কাজ সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন বলে জানান তারা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এলজিইডি’র আলীকদম উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আসিফ আহসান বলেন, ‘লকডাউনের সুযোগে নির্মাণ কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারসহ কাজটি পরিদর্শনকালে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ অংশ পুনরায় ঠিক করে কার্যাদেশ মোতাবেক বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঠিক না করলে পরবর্তীতে বিল দেয়া হবে না।’ এদিকে কাজের বিপরীতে এ পর্যন্ত এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: