ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

করোনার ‘হটস্পট’ চকরিয়া

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার ::  দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে কক্সবাজার জেলায়ও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। আজ শুক্রবার একদিনে সর্বোচ্চ ২১ জনের করোনা ধরা পড়েছে। ২১ জনের মধ্যে চকরিয়াতেই ১৫জন! এতে জেলার বৃহত্তর এই উপজেলার করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২-এ। আক্রান্তের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী ও উপজেলা সহকারী কমিশনারও (ভূমি)মো. তানভীর হোসেন রয়েছেন। এতে জেলার সর্বোচ্চ আক্রান্ত উপজেলায় পরিণত হলো চকরিয়া। আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চকরিয়া এখন করোনা ‘হটস্পট’-এ পরিণত হয়েছে। এতে প্রশাসনে উদ্বেগ বাড়ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, চকরিয়া খুটাখালীর ওমরা ফেরত মুসলিমা খাতুনই (৭০) কক্সবাজারের প্রথম করোনা আক্রান্ত। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবুও প্রথম দিকে চকরিয়ায় করোনা আক্রান্তের প্রকোপ তেমন ছিলো না। কিন্তু মধ্য সময়ে এসে চকরিয়া হু হু করে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এই সারিতে সর্বশেষ শুক্রবার (১৫ মে) যোগ হলো আরো ১৫জন। আক্রান্তের এই সংখ্যা এখন পর্যন্ত কোনো উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদী।

অন্যদেিক জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত উপজলো হলো কক্সবাজার সদর। এই উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ জন। এর পরে রয়েছে পেকুয়া উপজেলায় ২১ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১২ জন, উখিয়া উপজেলায় ১৪ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৭ জন, রামু উপজেলায় ৪ জন, এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৪ জন। কুতুবদিয়া উপজেলায় আজই প্রথম ১ জন করোনা ভাইরাস জীবাণু সনাক্ত করা হলো।

স্বাস্থ্য বিভাগের সম্পূরক পরিসংখ্যান মতে, জেলা সবচেয়ে বড় উপজেলা হিসেবে চকরিয়ায় ৫২ জন আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অন্যান্য উপজেলা হিসেবে কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। সর্বশেষ একদিনেই ১৫জন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বেশ অস্বাভাবিক। এই সংখ্যাটি চকরিয়ার জন্য আশঙ্কাজনক। এতে কার্যত চকরিয়া এখন করোনা ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। আক্রান্তের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে চকরিয়ায় একটা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সচেতনতাই হচ্ছে করোনা সংক্রমণ রোধের সর্বোচ্চ উপায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ করোনা সংক্রমণের যেসব স্বাস্থ্যবিধি দেয়া হয়েছে তা পালন করতে সচেতনতাই বেশি দরকার। কিন্তু জনসাধারণ সেটা মানছে না। তাই রোগটি দিনদিন কমিউনিটিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে অব্যাহত থাকলে সামনে আরো খারাপ দিন আসছে নিশ্চিত। তাই চকরিয়াসহ সমগ্র কক্সবাজারবাসীর প্রতিরোধ অনুরোধ, আপনারা ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন। না হলে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখী হতে হবে অচিরেই।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, চকরিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। যেখানে আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান ও এসিল্যান্ডসহ আক্রান্ত হয়ে গেছেন। এটা নিশ্চিয়ই আমাদের দুঃখজনক।

তিনি আরো বলেন, চকরিয়া একটি কানেক্টিং উপজেলা। সে কারণে এই উপজেলা স্বাভাবিকভাবে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তারপরও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ সকল স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে আমরা বেশ তৎপর রয়েছি। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে। এমনকি রাত এবং সেহেরির পরও আমরা মাঠে রয়েছি। তারপরও যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে আরো বেশি আমরা তৎপর হবো।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত ১৫৩ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে রামু উপজেলার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ার খোপ গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এর স্ত্রী ছেনু আরা বেগম ৩০ এপ্রিল রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই মহিলা হচ্ছে, কক্সবাজারে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে প্রথম এবং একমাত্র মৃত্যুবরণ করা রোগী। ইতিমধ্যে মোট ৩৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

পাঠকের মতামত: