ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

করোনা রাজনীতিঃ আমি লজ্জিত 

:: ড. মো.মাসুম চৌধুরী ::

সামাজিক যোগাযোগ স্বাধীন। যার যা ইচ্ছে লেখছে। মিথ্যা বলার স্বাধীনতা ভোগ করছে। দুর্যোগ মহামারির সময় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হয়, তা এখন সোনার পাথর বাটি। বিতর্কের চেয়ে কুতর্ক বেশী।

এখন সামাজিক যোগাযোগের অধিকাংশ পোস্টে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আক্রমণের লক্ষ্য শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার।একবার  চিন্তা করুণ,  শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রীর আসনে না থাকলে দেশের কী অবস্থা হতো! আমরা নিজের ভুল দেখি না, নাগরিক দায়িত্ব পালনও করি না,শুধু শেখ হাসিনার ভুল ধরতে পারি। নিজের বেলায় আইনজীবী পরের বেলায় বিচারক।

আয়নাতে নিজের চেহারা দেখুন। রাষ্ট্র চালাতে গেলে ভুল হয়,শেখ হাসিনাও ভুল করতে পারেন কিন্তু অপরাধ করে না। তাঁর ভুল আছে কিন্তু বিকল্প নেই।অতীতে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। একাত্তরের চেতনার বিরোধিতা করে পুরো রাষ্ট্রকে পাকিস্তান বানিয়েছে।

এটি ভুল নয়,রাষ্ট্রদ্রোহীতা। এটি অপরাধ। ভুল ক্ষমার যোগ্য, অপরাধ নয়। সে অপরাধের রাজনীতি হতে তারা এখনো ফিরে আসেনি। অপরাধীরা শেখ হাসিনার ভুল ধরে।শেখ হাসিনাকে নানা ভাবে আক্রমণ করে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে,করছে। এখন শেখ হাসিনাকে দুর্বল করা মানে বাংলাদেশকে দুর্বল করা,দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ করা।

জামাত বি এন পি তাদের দলের সমালোচনা তারা করে না। কোন অপরাধ ও ভুল স্বীকার করে না। তাদেরকে দুর্যোগ মোকাবেলায় তেমন দেখা যায় না। অথচ সরকার দলীয় লক্ষ নেতা কর্মী ত্রাণ তৎপরতা চালালো তার জন্য কেউ প্রশংসা করলো না, সারাদেশে আড়াই শ’ ভাগের ১ভাগ ত্রাণ চুরি হল, সে চোরদের সরকার গ্রেফতার করলো, ত্রাণ উদ্ধার করলো,মামলা হলো, তার জন্য সরকার কোন প্রশংসা পেল না, বি এন পি- জামাতের সাথে সূর মিলিয়ে সরকার দলীয় অনেক কর্মীও সামাজিক যোগাযোগে স্ট্যাটাস দিয়ে সরকারকে চোর বললো। যে সরকার চোর ধরে সে সরকারকে চোর বললে, চুরি বন্ধ হবে কী ভাবে?

ছাত্রলীগ তো এখন শেখ হাসিনার উন্নয়ন পোস্ট দেয় না, এক ভাইয়ের গ্রুপ অন্য ভাইয়ের গ্রুপকে নোংরা ভাবে আক্রমণ করে পোস্ট দেয়। ভাইয়ের শ্লোগান দিতে দিতে বোনের (শেখ হাসিনা)  শ্লোগানের কথা ভুলে গেছে। তবে ব্যতিক্রম আছে। ব্যতিক্রম যুক্তি নয়। একটি কোকিল ডাকা মানে বসন্ত নয়।

এখন সরকার দলীয় কর্মীর পোস্টে জামাত বি এন পি লাভবান হয়। এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। অনেকে বলেন,এটি তো আত্মসমালোচনা। না ভাই প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগে লেখলে এখন  আত্মসমালোচনা বলে না,কারণ জামাত বি এন পি এ ধরনের আত্মসমালোচনা করে না বরং আমরা যা লিখি তা নিয়ে নেগেটিভ রাজনীতি করে।

আমরা তাদের নেতিবাচক রাজনীতির সুযোগ করে দিচ্ছি। আওয়ামী লীগের আত্মসমালোচনা জমাত বি এন পি’র জন্য সরকার বিরোধী প্রচারণার দলিল। তারা এ সব  আওয়ামী লীগের অপরাধের  আত্মস্বীকৃতি হিসেবে প্রচার করে।

এ সব আত্মসমালোচনায় যদি দেশদ্রোহি শক্তি লাভবান হয়, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দুর্বল হয়, সে আত্মসমালোচনার দরকার এই দেশে নেই। আত্মসমালোচনা করতে হলে নিজের দলীয় ফোরামে করুন, রাজপথে নয়।

সরকার করোনা কালে সুন্দর ত্রাণ তৎপরতা চালালো। আমি প্রমাণ দিতে পারবো শেখ হাসিনার দেওয়া খাদ্যদ্রব্য এখন গরীব লোক বাজারে বিক্রি করে।আর কী চাই? খবর নিয়ে দেখুন,দুনিয়ার অনেক দেশে খাদ্যের হাহাকার চলছে, দাম বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের। বাংলাদেশের চেয়ে কয়টি দেশের অবস্থা বর্তমান ভালো আছে? এ সব নিয়ে কারো স্ট্যাটাস দেখি না।

প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে কৃষকের ধান কেটে দিতে বললো, অনেক নেতা কর্মী তাই করলো। এক-দুই জন কাঁচা ধান কাটলো, সবাই মিলে কাঁচা ধানের ছবিটিই ব্যাপক ভাবে প্রচার করলো। কৃষকের ধান কাটা একটি কল্যাণকামী প্রতীকী কাজ।

কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহ ও প্রেরণা পাওয়ার অধিকার রাখে। তা হলো না। কাঁচা ধান যারা কাটলো তাদের সমালোচনার পাশাপাশি যারা ভাল কাজ করলো তারা প্রশংসা পাওয়ার কথা। তাদের ভাগ্য তা জুটলো না। আসলে আমরা নেগেটিভ থিংকিং এর মানুষ। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির নাগরিক দ্বারা দেশকে এগিয়ে নেওয়া খুবই কঠিন।

করোনার শুরুতে সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলো।

অনেকে বললো, মানুষের জীবন রক্ষায় মক্কা মদিনায় নামাজের  জমাত বন্ধ করে দিছে, বাংলাদেশের মসজিদগুলো এখনো উম্মুক্ত কেন? সরকার যখন মসজিদের জামাত সংকোচিত করলো তখন তারাই কাঁচা বাজারের ছবি প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগে লেখতে শুরু করলো, ‘বাজার খোলা মসজিদ বন্ধ ‘। বাজার খোলা না রাখলে তো মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। জীবন বাঁচানো ফরজ আর মসজিদে জামাত পড়া সুন্নত। সেখানেও রাজনীতি।

বি বাড়িয়ায় জোর করে সরকারের নিয়ম ভেঙে (অনেকটা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মত) মাওলানা আনসারীর জানাজার নামাজে লক্ষ মানুষ জামায়াত করলো। পরবর্তীতে সরকার যখন মার্কেট, গার্মেন্টস নিয়ম মেনে চালু করার সিদ্ধান্ত নিল তখন তারাই সরকারের সমালোচনা শুরু করে দিল।

অর্থনৈতিক চাকা বন্ধ রাখলে যদি এক সময়  করোনার চেয়ে বেশী মানুষ মরে, তাহলে তো অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে হবে।

আসলে এ সব কিছুই না সমালোচনাকারীদের আসল টার্গেট শেখ হাসিনা, উদ্দেশ্য ক্ষমতা। তারা মূলত চায়, গার্মেন্টসের অর্ডার বন্ধ হয়ে যাক, অর্থনৈতিক সব চাকা বন্ধ হোক,দেশ গোল্লায় যাক, তাতে কোন সমস্যা নেই,শুধু শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল ও ব্যর্থ হলেই কেল্লাফতে।

আমার সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো এ সব ষড়যন্ত্রের সাথে সূর মিলিয়ে সরকার দলীয় প্রচুর কর্মী সামাজিক যোগাযোগে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছে। এটি কী আমাদের দলীয় কর্মীর চিন্তার দেউলেপনা না তারা দলে অনুপ্রবেশকারী তা আমি জানি না।

ড. মো. মাসুম চৌধুরী

শিক্ষক ও কলাম লেখক

চট্টগ্রাম।

পাঠকের মতামত: