ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার আন্তর্জাতিক অনুরোধ ‘অন্যায্য’

বাংলা ট্রিবিউন ::  প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা নিয়ে একটি জাহাজ চুপিসারে ঢুকতে চেয়েছিল মালয়েশিয়া। কিন্তু, ধরা পড়ে যাওয়ায় তাদের ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না দেশটি। ফলে রোহিঙ্গা বোঝাই জাহাজটি এখন মালয়েশিয়া থেকে দূরে মিয়ানমার সমুদ্র সীমানার কাছে ভাসছে। জাহাজটি বাংলাদেশের সীমানার কাছে ধারেও নেই। অথচ অতীতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় আবারও তাদের গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আরও কয়েকটি দেশ। মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার পরেও ওই দেশটিকে অনুরোধ না করে কিংবা মালয়েশিয়াকেও আহ্বান না জানিয়ে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দেওয়ার বিষয়টিকে ‘অন্যায্য’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে সরকারের এখন শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত এই রোহিঙ্গাদের গ্রহণ না করার বিষয়ে।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ তৌহিদ হোসেন বিদেশিদের অনুরোধকে অনায্য অভিহিত করে বলেন, ‘মানবিক কারণে বিশেষ প্রয়োজনে বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে যেখানে যত রোহিঙ্গা আছে সবাইকে আমাদের আশ্রয় দিতে হবে।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা আছে কিন্তু এমন আন্তর্জাতিক অনুরোধ অত্যন্ত দুঃখজনক।’

‘এটি ৫০০ বা ১ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয় নয়, কারণ, এই অঞ্চলে আরও দেশ আছে এবং তাদেরও দায়িত্ব আছে, মন্তব্য করেন তৌহিদ হোসেন।

জাতিসংঘসহ অনুরোধকারী দেশগুলোর প্রতি তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘দায়িত্ব কি শুধু বাংলাদেশের? যে দেশে যাওয়ার জন্য তারা জাহাজে রওয়ানা হয়েছিল সেই মালয়েশিয়ার কোনও দায়িত্ব নেই? তারা যে দেশের অধিবাসী সেই মিয়ানমারের কোনও দায়িত্ব নেই?’

মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড বা মিয়ানমারকে অনুরোধ না করে বাংলাদেশকে অনুরোধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর কোনও যৌক্তিকতা নেই।’

একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে ভারতে সাবেক রাষ্ট্রদূত টিকে হায়দার বলেন, ‘ এ বিষয়ে সরকারের শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার।’

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি হচ্ছে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে এবং যেখানে যা হচ্ছে সবাই বলছে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাও।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বলা উচিত এরা মিয়ানমারের অধিবাসী এবং এদেরকে মিয়ানমারে পাঠানো দরকার।’

সরকারের এখন স্পষ্টভাবে বলা উচিত এর দায়িত্ব তারা নেবে না আর এখানে বাংলাদেশের কোনও দায় দায়িত্বও নেই, মনে করেন হায়দার।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যদের স্বার্থ আছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘রিয়্যাল পলিটিক্স খুব নোংরা জিনিস। চীন, রাশিয়া, ভারত সবাই এর অংশ।’

জানতে চাইলে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাসে শহীদুল হক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্যরা যখন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বললো তখন আমি এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে টুইট করেছিলাম। আমি টুইটে বলেছিলাম, ‘কেন তোমরা বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে বলছো। তোমরা কেন মিয়ানমারকে বলছো না যেখানে তারা বসবাস করে? তোমরা কি মিয়ানমারের গণহত্যা কার্যক্রমকে সমর্থন করছো?’’

আন্দামান হচ্ছে মিয়ানমারের সবচেয়ে কাছে এবং রোহিঙ্গারা ওইখানেই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হয় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নেবে অথবা ভারত নেবে।’

সাবেক সামরিক অ্যাটাসে বলেন, ‘তাদের মিয়ানমারকে বলা উচিত কিন্তু তারা বলছে বাংলাদেশকে, এটি তাদের হিপোক্র্যাসি (ভণ্ডামি)।’

সরকারের উচিত একটি শক্ত অবস্থান নেওয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পছন্দের পাত্রী হচ্ছে অং সান সুচি। তাকে বাঁচানোর জন্য যা যা করা দরকার, এমনকি এর জন্য যদি তাদের নাকও কাটা যায়, সেটি তারা করতে রাজি আছে।’

তারা ভুল ব্যক্তির ওপর ভরসা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা কমাতে পারবে না সুচি।’

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়াতে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ার পরে এর আগে ৩৯২জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি জাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে এবং তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে সরকার।

পাঠকের মতামত: