ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

অভিযানেও কমেনি দাম, বেড়েছে ওষুধের সংকট

তুষার তুহিন :: মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম না বাড়ানোর জন্য ২৬ মার্চ কক্সবাজার শহরের ফার্মেসীতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। সেসময় মজুদ করার অপরাধে ও বাড়তি দামে ওষুধ বিক্রির দায়ে ফার্মেসী মালিকদের জরিমানা করে সংস্থাটি। কিন্তু তারপরও শুধরেনি শহরের ফার্মেসী মালিকরা। এখনো বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে সার্জিকাল মাস্ক, গ্লাভস স্যানিটাইজার সহ জ¦র, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার ওষুধ।
ফার্মেসী মালিক সূত্র জানায়, বেশিরভাগ ফার্মেসীতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও গ্লাভস, সার্জিকাল মাস্ক নেই। জ¦র, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের ওষুধও তেমন নেই। স্কয়ার ও বেক্সিমকো গ্রুপের ওষুধের সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে। একইসঙ্গে ওষুধের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় কোনো ওষুধ। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে বলে দাবী করেছেন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কক্সবাজারের দায়িত্বশীলরা। আর সংকটের বিষয়টি জানেই না সংশ্লিষ্ঠ সরকারি দপ্তর।
শুক্রবার সরেজমিনে শহরের বার্মিজস্কুল রোড়, বাজারঘাটা, পুরাতন পান বাজার রোড়, হাসপাতাল রোড় ও বনবিভাগের সামনের বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল ও গ্লাভস ও সার্জিক্যাল মাস্ক মিলেনি। বেশিরভাগ ফার্মেসীতেই নেই বেক্সিমকো গ্রুপের নাপা ৫০০, নাপা এক্সট্যান্ড, নাপা এক্সটা এবং স্কয়ারের ফেক্সো ১২০, সিভিট ২৫০ এবং জিমেক্স ৫০০। এছাড়া গেল এক সপ্তাহ ধরে শহরের ফার্মেসীতে নেই বর্তমান বিশে^ করোনার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত ইনসেপ্টা গ্রুপের রেকোনিল ২০০ এমজি ও ডেল্টা গ্রুপের রিওমাফলাক্স।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা ফার্মেসী মালিক সমিতির সদস্য রুবাইছুর রহমান বলেন, গেল এক সপ্তাহ ধরেই শহরের বেশিরভাগ ফার্মেসীতে জ¦র, কাশি,সর্দি, গলা ব্যথা ও শ^াসকষ্টের ওষুধ নেই। আমরা বেক্সিমকো ও স্কয়ারের কক্সবাজারের বিক্রয় প্রতিনিধিকে চাহিদা বিবেচনা করে ওষুধ বাড়িয়ে দেওয়ার অনুররোধ করেছি। কিন্তু তারা স্বাভাবিক সাপ্লাই দিতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে দরকার সার্জিকাল মাস্কও গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল যা মার্কেট আউট অনেক আগেই।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দোকানি জানান, কোম্পানিও যেমন সাপ্লাই দিচ্ছে না পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী বেশি করে মজুত করে রেখেছেন। আবার গ্লাভস কিছু দোকানে থাকলেও ২শ টাকার বক্স বিক্রি করা হলেও এখন তা ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। আর হেক্সিসল তো কোথাও পাওয়াই যাচ্ছে না। অথচ এগুলোই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর নতুন করে সংকটের তালিকায় যুক্ত হয়েছে সর্দি, জ¦র, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ। এসব ওষুধও চাহিদার অনুপাতে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই কয়েকগুণ বেশি দামে এসব ওষুধ বিক্রি করছেন।
কক্সবাজার জেলা ফার্মেসী মালিক সমিতির সহ সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ওষুধ সংকটের সবচেয়ে বড় কারন হলো লোকজন প্রয়োজনের দতুলনায় অীতরিক্ত ওষুধ নিয়ে ঘরে মজুদ করেছে । ধরুন কারো একপাতা নাপা লিখেবে সে নিয়েছে একবক্স। একারনে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আচ করতে পেরে আমরা ফার্মেসী মালিকদের কারো কাছে অতিরিক্ত ওষুধ বিক্রি করতে বারন করেছি। এবিষয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের কক্সবাজার বিক্রয় কর্মী কৃষ্ণ বর্মন বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মার্কেটে নাপা ৫০০, নাপা এক্সট্র্যান্ড ও নাপা এক্সট্রার সংকট রয়েছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে সাপ্লাই স্বাভাবিক হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আর স্কয়ার গ্রুপের কক্সবাজার বিক্রয় কর্মী মোজাম্মেল হক হামিদ বলেন,ফেক্সো ১২০, সিভিট ২৫০, জিমেক্স ৫০০ চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেশি। তার উপরে আমাদের মেশিনের একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় সারাদেশেই এসব ওষুধ স্পালাই আপাতত বন্ধ রয়েছে। আগামী সপ্তাহতেই আশা করি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কক্সবাজার ভোক্তা অধিকার এর সহকারি পরিচালক ইমরান হোসাইন বলেন, ২৬ মার্চ ফার্মেসীতে অভিযান চালিয়েছে। সেসময় দুজনকে জরিমানা করেছি। বাকিদের সর্তক করেছি।
কক্সবাজারের ওষুধ তত্ত¦াবধায়ক এর সহকারী পরিচালক প্রিয়াংকা দাশ গুপ্ত বলেন, বাজারে ওষুধের যে সংকট রয়েছে সেটি আমার জানা নেই। আমি আজই খোঁজ নিব।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ওষুধ সংকট হওয়ার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাঠকের মতামত: