ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় বনভূমি দখল বানিজ্যে দুই সহোদর, আবারো চলছে ঘর নির্মান!

ডুলাহাজারা (চকরিয়া) সংবাদদাতা :  কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ অধীন চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজার এলাকায় সর্বাধিক বনভূমি দখলে নিয়েছে দুই সহোদর। নির্মাণ করছে বহুতল ভবনসহ কাঁচাপাকা বাড়ি। অব্যাহত রয়েছে টিনের ঘেরা বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ। এমনি অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাহাদুর মিয়া ও তার ভাই আওয়ামীলীগ থেকে সদ্য বহিস্কৃত বিএনপির আরেক নেতা রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে।

গত ৮-১০ বছরের ব্যবধানে মালুমঘাট বাজার সংলগ্ন বনভূমি দখলে নিয়ে এ দুই ভাই কায়েম করছে রামরাজত্ব। বর্তমানে মালুমঘাট বাজারের পূর্ব সংলগ্ন বাহাদুর মিয়ার বাড়ির সামনে তারা দুই সহোদরের নেতৃত্বে একটি টিনের ঘর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চার-পাঁচ দিন ধরে এ নির্মাণ কাজ চলতে থাকলেও কোনপ্রকার ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না বনবিভাগের লোকজন।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এ দখল বানিজ্য। ইতিপূর্বে বনবিভাগের লোকজনের যোগসাজশে মালুমঘাট বাজার সংলগ্ন সমগ্র বনভূমিতে বাড়িঘর ও মার্কেট নির্মাণ করেছে। দখলকৃত সরকারি এসব বনভূমি আবার বিভিন্ন জনকে প্লট আকারে বিক্রিও করেছে। সম্প্রতি বাহাদুরের বাড়ির সামনে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণের বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামকে অবগত করা হলে তিনি কোনপ্রকার পদক্ষেপ নেননি বলে জানান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।

জানা যায়, বিএনপি-জোট সরকার আমলে প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ডুলাহাজারা-মালুমঘাটে বাহাদুর মিয়া ও তারভাই রফিক মিয়া মুল্যবান বনভূমি দখল শুরু করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে তারা সরকার দলীয় নেতা বনে যায়। পরে তারা আবারো মেতে উঠেন বনভূমি জমি দখলে। এভাবে সাবেক দুই বিএনপি নেতা সরকারী বনভূমি নিয়ে একেকজন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গঠন করে।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জামাল হোছাইন বলেন, সাবেক বিএনপি নেতা মোঃ রফিক মিয়া আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে স্থানীয় কিছু নেতাদের ম্যনেজ করে ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের দায়িত্ব নেয়। তিনি আরো বলেন, আমার জানামতে রফিক মিয়া সরকারী বনভূমির ৫০ টির অধিক মাদার ট্রী গর্জন গাছ সংগোপনে বিক্রি করেছে। বনভূমি দখল করে সম্রাজ্য গঠন ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তাকে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অভ্যন্তরিন সুত্রে জানা যায়, মালুমঘাট বাজারের ভেতরে ও আশপাশ এলাকায় ৪-৫ কোটি টাকার সরকারি ভূমি দখলে রয়েছে বাহাদুর আর রফিক মিয়া। তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহেদুল ইসলাম বনবিভাগ, বিজিপি ও পুলিশের সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। কিন্তু ওসময় রাজনৈতিক মহল ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে বিএনপি নেতা বাহাদুর মিয়া উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখতে সক্ষম হন। স্থানীয়দের দাবি, সরকারি এসব দখলীয় বনভূমি বিক্রিতে লিখিত স্ট্যাম্প ও দলিল সম্পাদনও করছেন বাহাদুর মিয়া। সর্বশেষ ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জে রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মাজহারুল ইসলাম। তিনিও বাহাদুর মিয়া ও রফিক মিয়ার অব্যাহত দখল বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা বাহাদুর মিয়া বলেন, আমি বনবিভাগের কোন জায়গা দখল করিনি। এ গুলো বিভিন্ন সময়ে দখলে থাকা লোকজন থেকে কিনেছি। আর আমার বাড়ির সামনে নির্মাণাধীন টিন সেট বাড়িটি আমিন ফিসারীর মালিকের অর্থাৎ তারভাই রফিকের। তিনিই ঘরটি নির্মাণ করছেন। এব্যাপারে জানতে রফিক মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, মালুমঘাট বাজারের পূর্ব পাশে বনভূমিতে ঘর নির্মাণের বিষয়ে আমার জানা ছিল না। বনভূমিতে ঘর নির্মাণ হলে সরেজমিনে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও তৌহিদুল ইসলাম জানান, এব্যাপারে আমি এখনই খবর নিচ্ছি। ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে জানানো হবে বলেও তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: