ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ৬ লেনের মাতামুহুরী সেতু: ডিসেম্বরে চালু করতে জোরেশোরে চলছে নির্মাণকাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে দ্রুতগতিতে চলছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গায় ছয়লেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে সেতুর তিনলেনের কাজ সম্পন্ন করতে ৮৮টি পাইলিং শতভাগ সম্পন্ন হওয়া ছাড়াও নদীর ওপর মূল সেতুর ৭টি পিলারের (পায়ার) মধ্যে ৩টি পিলার সম্পূর্ণ তৈরি এবং বাকি ৪টির মধ্যে ৩টির কাজও শেষ হওয়ার পথে। এ ছাড়া দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণকাজও চলছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ছয়লেনের এই সেতুর প্রথমে তিন লেনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পর সেতুর নির্মাণকাজে গতি এসেছে বেশ। ইতোমধ্যে নির্মিতব্য সেতুর দুপাশের অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে কয়েকশ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয়লেনের মধ্যে তিনলেনের সেতুর নির্মাণকাজ সর্বোপরি ৩০ শতাংশ এগিয়ে গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু, দোহাজারীর সাঙ্গু সেতু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এর মধ্যে বেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতামুহুরী সেতুর ছয়লেনের মূল নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে গেল বন্যার পর থেকে। তবে আগে থেকে সেতু নির্মাণের সুবিধার্থে বেস ক্যাম্প স্থাপনসহ প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেতুর মূল নির্মাণকাজের সরাসরি তদারকি করছে জাইকার নিজস্ব দল।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ‘ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর আওতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছয়লেনের ওই চার সেতুর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল।

জাইকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ছয়লেনের মাতামুহুরী সেতু হবে খুবই দৃষ্টিনন্দন। ডিজাইন অনুযায়ী ছয় লেনের সেতুর মধ্যে বিদ্যমান দুই লেনের সেতুর দক্ষিণাংশে প্রথমে তিনলেনের নতুন সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এই তিনলেনের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার পর বিদ্যমান পুরাতন সেতু ভেঙে ওই স্থানে নির্মাণকাজ শুরু হবে বাকি তিনলেনের সেতুর নির্মাণকাজ।

সেতু ইনচার্জ মোল্লা মহিউদ্দিন মিলন চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, ছয়লেনের এই সেতুর মধ্যে মাঝখানের চারলেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার এবং দ্রুতগতির যানবাহন। আর বাকি দুই লেন দিয়ে চলাচল করবে ধীরগতির তথা স্থানীয় যানবাহন। এ ছাড়াও এই দুইলেনে (উভয়পাশে) ৫ ফুট করে উন্মুক্ত থাকবে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য।

তিনি আরো জানান, ডিজাইন অনুযায়ী ছয়লেনের এই মাতামুহুরী মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৩২১ দশমিক ৪৫ মিটার। এ ছাড়াও পূর্বপ্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত ৩০২ মিটার এবং পশ্চিমপ্রান্তে পুরাতন বাসস্টেশনের বর্তমান ঢাকা ব্যাংক পর্যন্ত ৪১৩ মিটারসহ সর্বমোট ১৩৩৬ দশমিক ৪৫ মিটার পর্যন্ত মূল সেতুসহ সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ) নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। তিনলেনের মূল প্রস্থ হবে ১৫ দশমিক ১ মিটার।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ‘ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছয়লেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে, এতে আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিন লেনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে। এর পর পর উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে তিন লেনে যানবাহন চলাচল। এর পর বাকি তিনলেনের কাজও শুরু করা হবে।’

সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছেন কক্সবাজারবাসীর জন্য। যা আমাদের জন্য পরম পাওয়া। মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণকাজও বেশ দৃশ্যমান হতে চলেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে সার্বক্ষণিক কাজ তদারকি করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ৫ বছর ধরে মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করছে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির নিচে প্রথমে বালির বস্তার ঠেস এবং ওপরে পাটাতন বসিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়। এর ওপর অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচলের কারণে সেতুর মাঝখানে বসানো পাটাতন মাঝেমধ্যে দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে আসছিল। সর্বশেষ বর্তমান সেতুর মাঝখানে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে আরসিসি ঢালাই দিয়ে যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়।

পাঠকের মতামত: