ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে ১০০ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ চেষ্টা

উচ্চ আদালতে আপিল করছেন জেলা প্রশাসক

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ::  ভুয়া দলিল বানিয়ে কক্সবাজার সাগর তীরের শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি গ্রাস করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। গত সোমবার (৯মার্চ) আপীলের কাগজপত্র চূড়ান্ত করে জেলা প্রশাসক বরাবরে জমা দিয়েছেন সরকারী কৌঁসুলী (জিপি)। আপীল মামলার ওকালতনামায় জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরের পর মামলার নথি পাঠিয়ে দেয়া হবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বরাবরে। এব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলী তাঁর আইনগত মতামতে লিখেন, উর্ধ্বতন আদালতে আপীল/ রিভিশন করলে শতভাগ নিশ্চিত যে, নিম্ন আদালতের তর্কিত রায়-ডিক্রি এবং আপীল আদালতের রায়-ডিক্রি রদ ও রহিত হয়ে যাবে।
গত ৯ মার্চ সরকারি কৌঁসুলীর (জিপি) দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো জিপি/কক্স/২০২০-২০ নম্বর স্মারকপত্রে আপীলের জন্য সকল দলিল-দস্তাবেজ চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে আপীলে বিলম্বজনিত কারণে সরকারের আপীল দায়েরে অসুবিধা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ ওঠেছে, কিছু ভূমিদস্যু চক্র দীর্ঘদিন ধরে বানোয়াট ট্রেসম্যাপ দিয়ে জালিয়াতি দলিল বানিয়ে আদালতে একের পর এক মামলা করে কক্সবাজার সাগরপাড়ের শত শত কোটি টাকার সরকারি জমি আত্মসাতের চেষ্টা করছে। আর এতে সহযোগিতা করছে জেলা রাজস্ব বিভাগ তথা ভূমি বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও। সম্প্রতি এ ধরনের বিতর্কিত দলিলের উপর ভিত্তি করে দায়েরকৃত ২টি মামলার রায় রাষ্ট্রের বিপক্ষে গেছে। এ দুটি রায়ের প্রেক্ষিতে কথিত ভূমিদস্যুরা এখন তাদের নামে খতিয়ান খোলারও চেষ্টা করছে।
আদালতের নথি সূত্রে জানা যায়, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ফকিরাঘোনা এলাকার মৃত আবদুল খালেক ও কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত কালা মিয়া ১৭/৫৯-৬০ বন্দোবস্তি মামলা মূলে ঝিলংজা মৌজার ২.৩৬ একর জমি পাবেন দাবি করে তাদের ওয়ারিশরা সরকারের বিরুদ্ধে রেকর্ড সংশোধনীর আর্জিতে মামলা করে। ২০১১ সালে কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা জজ (১ম) আদালতে দায়েরকৃত এ মামলায় (নং অপর ২১৬/২০১১) ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারের বিপক্ষে রায় হয়। এরপর অক্টোবর মাসে ডিক্রিও প্রাপ্ত হন বাদী পক্ষ। এ মামলার রায় ডিক্রির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উল্লেখ করেন যে, মামলায় সংযুক্ত কথিত বন্দোবস্তি ট্রেসম্যাপে একটি মাত্র বাটা দাগের উল্লেখ থাকলেও মামলায় আরো একটি কাল্পনিক বাটা দাগের কথা উল্লেখ করে বাদীপক্ষ মিথ্যাভাবে সরকারের বিরুদ্ধে রায় হাসিল করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ আরো উল্লেখ করেন, বাদীর দাবিকৃত কথিত ট্রেসম্যাপে নালিশী জমির আরএস ৫৪৬/৯২৪৮ বাটা দাগের জমির তুলনামূলক বিএস ২০০২০ দাগে ০.২০ একর, বিএস ২০০২১ নং দাগে ০.৪৬ একর ও ২০০০৩ নং দাগে ১.৭ একর বলে দাবি করে রায় হাসিল করেন। এরপর ২.৩৬ একর জমির মধ্যে কালামিয়ার অংশ ১.১৮ একর এবং এ জমির তুলনামূলক বিএস দাগ নং ২০০২৫, ২০০২৬ ও ২০০০১ দাবি করে তার কথিত ওয়ারিশরা ২০১৮ সালে সরকারের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করে (কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের মামলা নং অপর ১০২/২০১৮ )। আর ওই বছরের আগস্টেই বাদীর পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে এ মামলার রায় ও ডিক্রি হয়। আর এ রায় ডিক্রির বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ (অপর আপীল নং ৯০/২০১৯)। গত ২৬ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করা হয় এবং রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপীল খারিজ করে দেয়া হয়। বাদীপক্ষ চূড়ান্ত রায়ে জিতে যাওয়ার পর তাদের নামে নতুন খতিয়ান সৃজনের জন্য আবেদন করেছে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের কাছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, তাদেরকে খতিয়ান খোলার সুযোগ দেয়া হবে না। জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শীঘ্রই হাইকোর্টে আপীল করা হবে।

পাঠকের মতামত: