ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিশুশ্রম নয়, শিক্ষার আলোয় ভরে উঠুক শিশুর জীবন -কর্মশালায় বক্তারা

শাহীন মাহমুদ রাসেল ::  শিশুরা নিষ্পাপ প্রতিটি শিশুই ফুলের মতো ফুটবার এবং সুন্দররূপে বিকশিত হবার দাবি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু সম্পদের অসম বণ্টন ও সামাজিক অসংগতির শিকার হচ্ছে অনেক শিশু। যাদের কচি হাত হয়ে ওঠে শ্রমের হাতিয়ার। তাই ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সব পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন একলাবের আয়োজিত কর্মশালায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

তারা বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সঠিকভাবে সচেতনতা গড়ে তোলা না গেলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) শহরের কলাতলীর ইউনি রিসোর্ট হোটেলের হলরুমে উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সহযোগীতায় এ্যালায়েন্স ফর কোঅপারেশন এন্ড লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ (একলাব) এর আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

নিরাপত্তা জাল ও আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে শুটকি মহল সম্প্রদায় ও সেবা প্রদানকারী সংস্থার মধ্যে রেফারেল লিংকেজ উন্নয়ন কর্মশালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সুব্রত বিশ্বাস।

জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আহসানুল হাসানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন একলাবের ক্লাইম্ব প্রকল্পের প্রোগ্রাম কোঅডিনেটর মাহবুব উল আলম।

এসময় মাহবুব উল আলম বলেন, আমরা পূর্বনির্ধারিত ২০১৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছি। নতুন করে এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। তা না করতে পারলে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা কঠিন হবে বলেও তিনি দাবি করেন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুব্রত বিশ্বাস শিশুশ্রম বন্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুঁটকি পল্লীসহ বিভিন্ন স্থানে শিশুশ্রম বন্ধ বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও কর্মসূচি নিয়েছে। তবে এই কর্মপরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিশুশ্রম নীতিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনগুলোকেও যুগোপযোগী করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

অনুষ্ঠানে রেহিঙ্গা শিশুদের বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ শিশু। তারা আগামীতে আমাদের শ্রমবাজারে যুক্ত হবে। বিষয়টি নিয়ে এখনই বিবেচনা করা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আহসানুল হাসান বলেন, আমাদের অনেক নীতিমালা থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। এমনকি জনগণও অনেক নীতিমালা সম্পর্কে জানতে পারে না। গৃহশ্রমিক নীতিমালাসহ অন্যান্য নীতিমালার প্রচারে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

কর্মশালায় আরোও বক্তব্য রাখেন ও মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল কাশেম, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ার তোষার, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ অসীম মন্ডল সেন, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিনিধি তানভীর শরীফ ও প্রোগ্রাম অফিসার আসমা আক্তার, একলাব এর টি এ অফিসার মোশারফ হোসেন, ক্লাইম্ব প্রকল্পের অর্থ ও প্রশিক্ষণ অফিসার মোঃ রিয়াজ উদ্দিন প্রমুখ ছাড়াও এ সময় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও ফোরামের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা শিশুদের নিরাপদ কর্মস্থান, শিশুশ্রম কীভাবে পর্যায়ক্রমে কমানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন। শিশুরা কেন শিক্ষা গ্রহণ না করে কর্মক্ষেত্রে আসে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখার আহবান জানানো হয়।

পাঠকের মতামত: