ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাংবাদিক পরিচয়ধারী চাঁদাবাজ ধরতে পুলিশ-জনতার এ্যাকশান, ধরা পড়ছে ২জন

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
এবার ধরা পড়ছে বিভিন্ন টিভি, পত্রিকা, অনলাইনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চষে বেড়ানো দুর্বৃত্তরা। সচেতন জনতার পাশাপাশি কঠোর হচ্ছে প্রশাসনও।
কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় নিরীহ মানুষজনকে নানা অজুহাতে সংবাদ প্রকাশ হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে জনরোষের শিকার হয়েছে সংবাদকর্মী পরিচয়ধারী ৪ প্রতারক ও ধান্দাবাজ।
১০ মার্চ সন্ধ্যায় মো. মনছুর আলম মুন্না নামের একজনকে হাতেনাতে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। সে রামুর উপজেলার ঈদগড়ের বড়বিল এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালামের ছেলে।
মো. মনছুর আলম মুন্না নিজেকে মুভিবাংলা টিভির প্রতিনিধি ও একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের জেলা প্রতিনিধি দাবী করে। ইতোপূর্বে সে কক্সবাজারের একটি এনজিওতে চাকুরি করেছিল। এরকম অভিযোগ পাওয়ায় তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
একই অভিযোগে পরের দিন (১১ মার্চ) দুুপরে সাখাওয়াত হোসেন লিটন নামের আরেক চিহ্নিত ঠকবাজ-ধান্দাবাজকে আটক করেছে পুলিশ।

জনরোষের শিকার মো. মনছুর আলম মুন্না।

সে টেকনাফের দক্ষিণ শিলখালী বাহারছড়ার বাসিন্দা নুরুল কবিরের ছেলে।
২০১৭ সালে কুমিল্লা জেলা পুলিশের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক হয়েছিল এই কথিত সাংবাদিক। যার জিআর মামলা নং-৬২/৫৮৩। তার রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা যুব সংহতির এক নেতা বলে জানা গেছে। নিজের আকাম কুকাম আড়াল করতে সাংবাদিকতায় ঢুকে পড়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সে।
তবে, আটক মুন্না-সাখাওয়াতের সিন্ডিকেটে থাকা আরো দুই চাঁদাবাজ এবিএম জমির ও তাহজিবুল আনাম পালিয়ে আত্মরক্ষা পেয়েছে। তাদের খোঁজছে পুলিশ। এই সব চাঁদাবাজদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের তথ্য অনুসন্ধান করছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এসব চাঁদাবাজ, প্রতারক, ধান্দাবাজদের তথ্য পৌঁছে গিয়েছে।
মো. মনছুর আলম মুন্নাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদকালে কয়েকজন গডফাদারের নাম প্রকাশ করেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ।
কক্সবাজার শহরে বসবাসকারী সাখাওয়াত নিজেকে পল্লী টিভির জেলা প্রতিনিধি ও একটি অনলাইনের সহসম্পাদক পরিচয় দেয়। তার চলাচলের বাহন দামী মোটরসাইকেলে। দৃশ্যমান কোন কাজকাম ছাড়া তার আলিশান চলাফেরায় অনেকের প্রশ্ন।
অভিযুক্ত এবিএম জমির কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড়স্থ একটি আবাসিক হোটেলে চাকুরি করতো। তাহজিবুল আনামও বিভিন্ন পত্রিকার পরিচয় দিয়ে থাকে।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তৃতীয় সারির কয়েকজন সংবাদকর্মী তাদের লীড দেয় বলে একাধিক সুত্রে প্রকাশ।
ভুক্তভোগী ছাবের সওদাগর, নুরুল আলম, এনামুল, এরফান, সুজন, সেলিম, বাদশা ও সাদ্দাম জানান, সংবাদকর্মী নামধারী একদল যুবক বিভিন্ন সময় এলাকার সাধারণ দোকানদার ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে করে হয়রানী করে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার নিউজের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নিয়েছে। অনেকে মানসম্মান ক্ষুন্ন হবার ভয়ে টাকা দিয়েছে।
মুজাহিদ নামের একজন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে এ ব্যাপারে থানায় মামলা করেছে।
এদিকে, মনছুর আলম মুন্নাকে থানায় নেয়া হলে বিভিন্নভাবে হয়রানী ও চাঁদাবাজির শিকার ১৩ জন ব্যক্তি (অভিযোগকারী) থানায় ভিড় করে। এর মধ্যে ৫ জন নারীও ছিল। তাদের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে এনজিওতে চাকুরী দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করা হয়।
এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শাহজাহান কবির জানান, মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া বাজারে স্থানীয় দোকানী এবং বসত বাড়ী নির্মাণকারি ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন যুবক চাঁদা দাবি করে। স্থানীয়রা তাদের চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে সংবাদ প্রকাশের হুমকী দেয়। এক পর্যায়ে মুন্না নামের এক যুবককে স্থানীয় লোকজন ধরে ফেললে অন্যরা পালিয়ে যায়। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে জনতা কর্তৃক ধৃত মোঃ মনছুর আলম মুন্নাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে ঘটনায় জড়িত কক্সবাজার শহরে মোহাজের পাড়া থেকে শাখাওয়াত হোসেন নামের আরো একজনকে আটক করা হয়। এঘটনায় শহরের সমিতি পাড়া বাজারের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ি কক্সবাজার শহরের জাদিরাম পাহাড় এলাকার বাসিন্দা হ্লা হ্লা ছেন রাখাইন বাদী হয়ে অভিযুক্ত ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

বুধবার বিকালে আটককৃতদের প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কক্সবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: