ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সম্প্রীতি রক্ষায় পন্ডিত সত্যপ্রিয় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ -রামুতে ৩দিন ব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’র ২য় দিনে বক্তারা 

সোয়েব সাঈদ, রামু ::  প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, সরকার দেশে সম্প্রীতি রক্ষার মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে। তিনি আরো বলেন, সম্প্রীতি রক্ষায় পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র অবদান রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক নীতি আদর্শ তিনি লালন করে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি দেশসেবায়ও কাজ করেছেন। সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি রক্ষা ও দেশের কল্যাণে পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর মত নিবেদিতপ্রাণ মানুষ সমাজে বিরল। তাঁর আদর্শ সবার জন্য অনুকরণীয়।

রামুতে উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র ৩ দিন ব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের ২য় দিনের অনিত্য ও স্মৃতিচারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬ টায় রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

উপ-সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, রিকে কোসে কাই বাংলাদেশ উপদেষ্টা মিতসুইকি আরিতুমি, রেডক্রস এর রিজিওয়ানাল কো-অর্ডিনেটর চার্লি ডরমে ও গোয়ান, থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. পঞ্চাই পালাওয়া দাম্মা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুদ্দিষ্ট ফেড়ারেশনের সভাপতি প্রকৌশলী দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, বৌদ্ধ ও কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহ সভাপতি প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া।

এতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদেও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পলক বড়ুয়া আপ্পু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, উদযাপন পরিষদের অধ্যাপক পরীক্ষিৎ বড়ুয়া টুটুন ও অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া।

অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহজাহান আলী, সহকারি পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা, ওসি মো. আবুল খায়ের, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জাফর আলম চৌধুরী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নী, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি রাহুল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ওসমান গনি, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ড. জগন্নাথ বড়ুয়া, জেলা যুবলীগ সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি বাবুল শর্মা, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হক কোম্পানী, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, খুনিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, রাজারকুল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, রশিদনগর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম প্রমূখ।

এদিকে উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানকে ঘিরে রামু বাইপাস সংলগ্ন মেরংলোয়া বিলের ৪০ একর জায়গা জুড়ে বসেছে সম্প্রীতির মেলা। অনুষ্ঠানস্থলে বাঁশ, কাঠ, ও রঙ্গিন কাগজের কারুকার্যে তৈরী হয়েছে বিশাল আলং। এছাড়া প্রয়াত ভন্তের শবদেহ রাখার দোলনা আলং, গ্রামভিত্তিক দলীয় নৃত্যের ১০টি নৃত্যালং, অণিত্য ও ধর্মসভার জন্য তিনশ ফুট দৈর্ঘ্য-আড়াইশ ফুট প্রস্থ বিশাল প্যান্ডেল, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পৃথক মঞ্চ, অতিথি ভোজনের খাবার প্যান্ডেল, পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জীবন ভিত্তিক আলোক চিত্র প্রদর্শনের প্যান্ডেল, চিকিৎসা ক্যাম্প, আইনশৃংখলা রক্ষায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের ও প্রধান সমন্বয়কারী তরুণ বড়ুয়া জানান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ ভিক্ষু ছাড়াও আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইটালী, মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ প্রতীম রাষ্ট্র থেকে হাজারো বৌদ্ধ ভিক্ষু রামু-কক্সবাজারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করছেন। প্রয়াত ধর্মীয়গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহন অনুষ্ঠানকে মহা-সম্মেলনে পরিনত হবে।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে রামুতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সম্প্রীতির মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় প্রতিদিন সার্কাস, মুত্যুকুপ, ওয়াটাররেস, নাগরদোলাসহ শিশুদের বিভিন্ন বিনোদন এবং দেশী-বিদেশী পণ্যের দু’শতাধিক স্টলে শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে । এছাড়া সাংস্কৃতিক মঞ্চে প্রতিদিন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুর শবদেহ চন্দন কাঠের আগুনে পুড়িয়ে দাহক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

পাঠকের মতামত: