ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় কথিত অপহৃত কলেজ ছাত্র ২৭দিন পর পরীক্ষার হল থেকে উদ্ধার

ssssচকরিয়ায় কথিত অপহরণ ঘটনার ২৭দিন অপহৃত কলেজ ছাকে পরীক্ষার হল থেকে উদ্ধার করেন পুলিশ।

 এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :::

চকরিয়ায় কথিত অপহরণের শিকার জিমান উদ্দিন জিয়া (২২) নামের এক কলেজ ছাত্রকে গতকাল রোববার দুপুরে পরীক্ষার হল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণ ঘটনার প্রায় ২৭দিন পর ডুলাহাজারা কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র জিয়া রোববার উপজেলার ডুলাহাজারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। বিষয়টি গোপনে জানতে পেরে অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হারবাং পুলিশ ফাড়ির আইসি দেবাশীষ সরকার অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার হল থেকে তাকে উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়া কলেজ ছাত্র জিয়া এ পর্যন্ত দুইবার অপহরণের শিকার হয়েছেন। প্রথমবার গতবছর বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য কৌশলে নিজে নিজে আত্মগোপনে থেকে অপহরণ নাটক সাজান। এবার পারিবারিকভাবে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় বাবার ইন্ধনে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে ২৭দিন আত্মগোপনে ছিলেন জিয়া। তবে প্রতিবারই পুলিশের সাড়াশি অভিযানের মুখে জনসম্মুখে বেরিয়ে আসেন জিয়া। ইতি ঘটে অপহরণ নাটকের।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হারবাং পুলিশ ফাঁিড়র আইসি (ইনর্চাজ) এসআই দেবাশীষ সরকার বলেন, গত ৬মার্চ কলেজ ছাত্র জিমান উদ্দিন জিয়াকে অপহরণের অভিযোগে তার মা উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা গোবিন্দপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম বেবি বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি অপহরণ মামলা (নম্বর-২২) দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় স্থানীয় মোহাম্মদ ছবি, নুরুন নবী, মোজাহের আহমদ, সামসুল আলম, কাওছার আলম, সফি আলম, বাদশা মিয়া, ইলিয়াছ ও নেজাম উদ্দিনসহ ৯জনকে। মামলাটি রুজু হওয়ার পর ভিকটিম ওই ছাত্রকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে কয়েকদফা অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, সর্বশেষ গতকাল রোববার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে উপজেলার ডুলাহাজারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় হল থেকে তাকে (ভিকটিম ওই ছাত্র) উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ সরকার আরো বলেন, কথিত অপহরণ ঘটনার প্রায় এক মাস আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগে থানায় একটি মামলা করেন বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা গোবিন্দপুর গ্রামের সফি আলমের স্ত্রী রাশেদা বেগম। ওই মামলায় অভিযুক্ত করা হয় কলেজ ছাত্র জিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন, চাচা নেজাম উদ্দিন, কলেজ ছাত্র জিমান উদ্দিন জিয়াসহ চারজনকে। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকালে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এব্যাপারে ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, মুলত নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার কাউন্টার মামলা হিসেবে নিজের কলেজ পড়–য়া ছেলেকে অন্যত্র লুকিয়ে রেখে গিয়াস উদ্দিন কথিত অপহরণ নাটকটি রচনা করেন। এরপর তার স্ত্রীকে বাদি করে থানায় এব্যাপারে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

গতকাল রোববার দুপুরে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে উদ্ধার হওয়া ভিকটিম কলেজ ছাত্র জিমান উদ্দিন জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। বরং তার বাবার পরামর্শে এতদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। ওইসময় থানার ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সামনে কলেজ ছাত্র জিয়া স্বীকার করেন, অপহরণের ঘটনার দিন গত ৬মার্চ বিকেলে বন্ধু নেজাম উদ্দিনের সাথে পলিথিনে মোড়ানো কিছু জিনিষ বিক্রি করতে যান লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের মাইজখোলা নামক স্থানে একটি ইটভাটায়। সেখানে গিয়ে পলিথিনে মোড়ানো পুটলাটি ২১হাজার ৬শত টাকা দামে বিক্রির জন্য কথার্বাতা চুড়ান্ত করেন ক্রেতা বাহার উদ্দিনের সাথে। তবে ওইসময় ক্রেতা পুটলাটি খুলে মাল দেখতে চায়। ওইসময় কৌশলে পালিয়ে যায় বন্ধু নেজাম উদ্দিন। এক পর্যায়ে সেখানে জটলা সৃষ্টি হলে উপস্থিত লোকজন পুটলাটি খুলে দেখেন সেখানে আছে কিছু জন্ম নিয়ন্ত্রন ট্যাবলেট।

কলেজ ছাত্র জিমান উদ্দিন জিয়া বলেন, এরপর উপস্থিত লোকজন প্রতারণার অভিযোগে তাকে আটক করে মারধর করে। রাতে একজনের জিন্মায় তাকে দেয়া হয়। পরদিন ৭মার্চ জিম্মাদার ওই ব্যক্তি সেখান থেকে ফোন করেন বাড়িতে তার মা-বাবার কাছে। ৮মার্চ সকালে তার বাবা গিয়াস উদ্দিন ও রেজিয়া বেগম বেবী ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিম্মাদার ও উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে ছেলেকে ছেঁেড় নিয়ে আসে। এরপরের ঘটনা প্রসঙ্গে কলেজ ছাত্র জিয়া বলেন, বাড়িতে আনার পর তার বাবা গিয়াস উদ্দিন তাকে নিয়ে যায় উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ভেন্ডিবাজারস্থ এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে তাকে রাখা হয় ৬দিন। তারপর সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় চকরিয়া পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের হাজিয়ানস্থ বাবার পরিচিত্র এক বোনের বাড়িতে। এভাবে প্রায় ২২দিন আত্মগোপনে রাখার পর রোববার সকালে পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের পালাকাটা থেকে বাবা গিয়াস উদ্দিন ও মা রেজিয়া বেগম বেবীকে সাথে নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে যান ডুলাহাজারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এর আগে ডুলাহাজারা কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষের কাছ থেকে প্রবেশপত্র (এডমিট কার্ড) নেন জিয়া। দুপুরে পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হওয়ার সময় তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ কর্মকর্তা দেবাশীষ সরকার।

জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জহিরুল ইসলাম খাঁন বলেন, উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা গোবিন্দপুর গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধের জের ধরে কয়েকবার সংর্ঘষও হয়েছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের রাশেদা বেগম নামের মহিলা বাদি হয়ে থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, মুলত ওই মামলার কাউন্টার হিসেবে নিজের কলেজ পড়–য়া ছেলেকে অন্যত্র লুকিয়ে রেখে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি থানায় অপহরণের অভিযোগে প্রতিপক্ষের ৯জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। রোববার পরীক্ষার হল থেকে ভিকটিম ওই কলেজ ছাত্রকে উদ্ধারের পর তার স্বীকারোক্তিতে অপহরণ ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। ওসি জহিরুল ইসলাম খান বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই ছাত্রকে একইদিন বিকেলে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের সিদ্বান্তে এব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) মো.কামরুল আজম বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই কলেজ ছাত্র গতবছর একইভাবে নিজে নিজে আত্মগোপনে থেকে মুঠোফোনের মাধ্যমে বাবার কাছে মুক্তিপন বাবত চাঁদা দাবি করেন। এ ঘটনায় তার বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, থানায় নেয়ার পর ওই ছাত্র স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেন বাবা গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে নিজে নিজে অপহরণ নাটকটি সাজান।

পাঠকের মতামত: