ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফুলের দোকানে উৎসবের রঙ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্ত এলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই পরিচিত গান ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফুটে/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ প্রকৃতিতে আজ একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। অন্যদিকে আজ আবার ভালোবাসা দিবস! বসন্ত আর ভালোবাসায় একাকার হয়ে যাওয়ায় পোশাকি সাজ নিয়েই তরুণ-তরুণীরা দোটানায় রয়েছেন।

সাধারণত ভালোবাসা দিবসের একদিন আগেই বসন্ত উৎসব পালিত হয়। তবে এবার বাংলা বর্ষপঞ্জিতে ব্যতিক্রম ঘটেছে। বসন্ত মানে বাঙালির প্রাণের উৎসব। এদিন তরুণ-তরুণীরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি-শাড়ি পরে সামিল হয় বসন্ত উৎসবে। তরুণীরা মাথায় রিং ও খোঁপায় গাঁদা ফুল গুঁজে দিনভর খুনসুটিতে মেতে থাকে। অপরদিকে ভালোবাসা দিবসে প্রেমিক-প্রেমিকা ও দম্পতিরা লাল শাড়ি পাঞ্জাবি ও সেলোয়ার-কামিজ পরে দিনটি উপভোগ করে থাকেন। তবে ভালোবাসা দিবসের প্রধান উপসঙ্গ হচ্ছে ফুল। ফুল ছাড়া ভালোবাসা দিবসকে যেন কল্পনা করা যায় না। এই দিবস দুটিকে কেন্দ্র করে নগরীর ফুলের দোকানগুলো ফুলে ফুলে ভরে গেছে।

ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বসন্ত উৎসবে সাধারণত গাদা ফুলের চাহিদাই বেশি থাকে। তবে ফুলের প্রধান বিক্রি হয় ভালোবাসা দিবসে। স্বাভাবিকভাবে ভালোবাসার প্রতীক ‘লাল গোলাপ’ এর চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণীরা চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, লিলি ফুলই বেশি কিনছেন। বসন্ত উৎসবের জন্য তরুণীরা গাদা ফুলের পাশাপাশি মাথার রিঙের অর্ডার দিয়েছে বেশি। তবে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত একই দিন হওয়ার পাশাপাশি ছুটির দিন হওয়ায় বেচাবিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আবার দেশের আমদানি ফুলের বাজারটাও চীনের দখলে। চীনের করোনা ভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ফলে সেখান থেকে এবার চাহিদা মতো ফুল আসেনি। গতকাল নগরীর কয়েকটি ফুলের বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে বাহারি রঙের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। দোকানের কর্মচারীরা এসব ফুলে পানি ছিটিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ আবার ফুলের গহনা, মাথার রিং ও খোঁপায় পরার নানান ধরনের ফুলের লহর তৈরি করছেন।

ফুলের দোকানে আসা তরুণীরা চকরিয়া নিউজকে জানান, ফুল এখন আর সৌখিনতার বস্তু নয়। ফুলের আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এছাড়া নিজেকে সাজাতে ফুলের জুড়ি নেই। প্রেমিক যুগলের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি উপহার হলো ফুল। অন্যদিকে বসন্তে নানা বয়সী মেয়ে ফুলের রিং মাথায় পরে ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া কানে দুল, গলায় মালা ও হাতে ফুলের বাহারি অলঙ্কার পরার পাশাপাশি চুলের এক পাশে তাজা ফুল ক্লিপ দিয়ে সাঁটিয়ে থাকেন তরুণীরা।

ফুল বিক্রেতারা জানান, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে গাঁদা এবং গোলাপ ফুলের প্রচুর চাহিদা থাকে। গোলাপের মধ্যে রয়েছে লাল, সাদা, কমলা, হলুদ রঙের গোলাপ। ভালোবাসা দিবসে লাল গোলাপের চাহিদা একটু বেশি থাকে। প্রতিটি দেশি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ থেকে টাকা দরে। তবে চীনা গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়। প্রতিটি চীনা লিলি ২৫০-৩০০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা স্টিক ১০০-১৫০ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ২০-২৫ টাকা, প্রতিটি দেশি গ্লাডিওলাস ২০-৩০ টাকা, প্রতি বান্ডেল জিপসি ফুল ৪০-৫০ টাকা, গাঁদা অর্কিড ৬০-৭০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৮-১০ টাকা, ফুলের লহর ৩০-৪০ টাকা, মাথার রিং ১৫০-২০০ টাকা, গাঁজরা ফুল ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

নগরীর মোহাম্মদপুর থেকে তরুণী তাজরিন হাশপিয়া রুশমির চকরিয়া নিউজকে বলেন, বান্ধবীদের সাথে ফুলের দোকানে এসেছে মাথার রিঙ অর্ডার দেয়ার জন্য। বসন্ত উৎসবে সারাদিন বাসন্তী রঙের শাড়ি এবং নানা ধরনের ফুলের তৈরি অলঙ্কার পড়ে ঘুরবো। সারা বছর এদিনের অপেক্ষায় থাকি।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী ও চাষি বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. কুতুব উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, এ বছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস একইদিনে। তারচেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, দিবস দুটি শুক্রবারে। অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে গতবারের তুলনায় আমাদের বেচাবিক্রিও কম। এছাড়া চীন থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যাপ্ত ফুল আসেনি। ফুল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা হয় মৌসুম অনুযায়ী। কিন্তু এবার হয়তো আমাদের সবারই লোকসান দিতে হবে।

পাঠকের মতামত: