ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অসহায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের দূর্ভোগ চরমে… নেই কোন উদ্যোগ!

দক্ষিণ চট্রগ্রাম প্রতিনিধি :: যাত্রীদের জিম্মি করে আদায় করা হয় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া । শুক্রবার বেলা ১১টা। শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ)। তীব্র পরিবহন সংকট। একটি গাড়ি এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবাই। কোন উপায় না দেখে শত শত লোক পায়ে হেঁটে পার হচ্ছে নতুন ব্রিজ। এরমধ্যেও পরিবহনের আশায় দাঁড়িয়ে আছে আরো প্রায় হাজার খানেক নারী-পুরুষ। কারো হাতে ব্যাগ, কারো কোলে বাচ্চা। সবাই দাঁড়িয়ে আছে নিদিষ্ট পরিবহনের আশায়। চিত্র গতকালের হলেও প্রতি শুক্রবার এই অভিন্ন চিত্র দেখা যায় নুতন ব্রিজ এলাকায়। পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়াসহ মোট ২০টি রুটের বেশি গাড়ি চলে নতুন ব্রিজ থেকে। এরমধ্যে পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার যাত্রীদের ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হতে হয় সবচেয়ে বেশি। দৈনিক প্রায় ১ হাজার গণপরিবহন চলাচল করে এসব রুটে। যেখানে দুই লাখের মত লোক যাতায়াত করে। কিন্তু বৃহস্পতি-শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিনে তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির পরিবহন শ্রমিক যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান, সড়ক পরিবহন চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মো. মুসা। দীর্ঘক্ষণ গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকার এক পর্যায়ে হাঁটা শুরু করেন শত শত মানুষ।

হেঁটেই ব্রিজ পার হন তারা। আরো হাজার খানেক লোক দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ির আশায়। কেউ কেউ নির্দিষ্ট পরিবহনের আশা ছেড়ে দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে কিংবা বাসের ছাদে করেই গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। পরিবহন সংকটের সুযোগ হাতছাড়া করেনি মোবাইল ভিত্তিক শেয়ার এ্যাপস পাঠাও ও ওভার। বাইক চালকরা চুক্তি ভিত্তিক ভাড়া দাবি করেন। নতুন ব্রিজ থেকে মইজ্জারটেক ভাড়া দাবি করেন ১০০ টাকা। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের আইইআর ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্স’র শিক্ষার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এলেই নতুন ব্রিজের চিত্র পাল্টে যায়। বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবো।

চাতরী চৌমুহনী যাওয়ার জন্য প্রায় একঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বেলা ১১টায় নতুন ব্রিজ এসে ১২টায়ও গাড়িতে উঠতে পারিনি। পরিবহন সংকট দেখে মনে হচ্ছে আজ যাওয়া হবে না। এই বলে সড়ক পার হয়ে বাকলিয়া ফুলকলির দিকে চলে যান তিনি। যাওয়ার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে জিম্মি করে রাখে পরিবহন মালিক শ্রমিক। প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া এবং মানুষ যাতে হয়রানি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে।

পটিয়া উপজেলায় যাওয়ার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা ওমর কায়সার নামের আরেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি পাই না। এই দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য আমাদের নেতাদের কোন ধরনের উদ্যোগ নেই। দিন দিন এই দুর্ভোগ বাড়ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে প্রশাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। যার যেমন ইচ্ছে তেমন ভাড়া আদায় করছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মো. মুসা বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার যাত্রীদের তুলনায় পরিবহন কিছুটা সংকট থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু পরিবহন শ্রমিক যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবহন সংকটের সমস্যা শীঘ্রই সমাধান হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের সমস্যার কথা ভেবে এস আলম গ্রুপ ১২০টি বাস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে পটিয়ার জন্য ২০টি বাস চালু করা হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে আরো ২০টি এবং জুনের মধ্যে সবগুলো (১২০টি) বাস চালু করা হবে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে বাকলিয়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) সামশুদ্দিন জানান, গতকাল বাঁশখালী উপজেলায় কুম্ভমেলা থাকায় তুলনামূলক বেশি ভিড় ছিল। ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সব সময় ব্যস্ত থাকি। মাঝেমধ্যে আমাদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে অভিযোগ করেন। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। সাধারণ যাত্রীরা কিন্ত মালিক শ্রমিকদের কারো নম্বারও জানে না। মালিক-শ্রমিক নেতাদের এই ব্যাপারে কোন উদ্যোগও নেই।

পাঠকের মতামত: