ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

শূন্যপদের চাহিদা পাঠাতে পারেনি কক্সবাজারের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

এম. বেদারুল আলম : আমার পরিচালিত মাদ্রাসার জন্য শূণ্যপদে (ই-রেজিষ্ট্রেশন করতে) শিক্ষক নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করতে পারেনি অধ্যক্ষ। সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ভুলের জন্য সার্ভার সচল না থাকায় গতকাল (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত সদরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারেনি। ফলে এ বছরও শিক্ষক পাবেনা সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ। কথাগুলো ক্ষোভের স্বরে বলছিলেন সদরের খরুলিয়া তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি কেএম রহিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ৩টি পদ শূণ্য রয়েছে। পড়ালেখার মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। আমরা সদরের সার্ভার নষ্টের কারণে (ই-রিকুইজিশন) পাঠাতে পারছিনা। সদরের মাধ্যমিক কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন থাকেন বিভিন্ন স্কুলের অনুষ্ঠানে। অথচ গত ১৪ থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে শূণ্যপদের চাহিদা প্রেরণের শেষ তারিখ ছিল। সদরের প্রায় শতাধিক মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ চাহিদা পাঠাতে পারেনি এ কর্মকর্তার ভুলের কারণে। ফলে আরো এক বছর শূণ্যপদ পুরণ করতে পারবেনা প্রতিষ্ঠানসমুহ। উপরোক্ত অভিযোগ খরুলিয়া তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আল আমিনের।

সদরের ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের একই অভিযোগ সদরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার গাফেলতির কারণে সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শূণ্যপদের শিক্ষক চাহিদাপত্র প্রেরণ করতে পারেনি কক্সবাজার সদরের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাদের দাবি জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ ই-রিকুইজিশন প্রেরণ করলেও কক্সবাজার সদরের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বহীনতা এবং সার্ভারের ক্রুটি সংশোধন না করায় গতকাল পর্যন্ত সচল না করায় চাহিদা প্রেরণ করতে পারেননি।

জানা যায়, সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) গঠন করে। উক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে প্যানেল করে শূণ্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করে থাকে। সারাদেশ থেকে শূণ্যপদ সমুহের চাহিদাপত্র গ্রহণ করে। নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেন এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।

গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শূণ্যপদের চাহিদা প্রেরণের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের আলাদা পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয় ই-রিকুইজিশন প্রস্তুত করে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রেরণ করতে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার জন্য আলাদা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রেরণ করে এনটিআরসিএ।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগণ শূণ্যপদের প্রাপ্ত তালিকা যাছাই করে স্বাাক্ষর করে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কক্সবাজার সদরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সার্ভার অচল থাকার কারণে প্রায় শতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ তালিকা প্রেরণ করতে পারেনি। তবে আশার কথা হল সরকার শূণ্যপদের তালিকা প্রেরণের জন্য সময় বৃদ্ধি করে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত করেছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সদরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সেলিম উদ্দিনের মোবাইলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সালেহ উদ্দিন চৌধুরী সার্ভার সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, সদরের প্রতিষ্ঠানসমুহ থেকে (ই-রিকুইজিশন) আবেদন করা হয়নি যান্ত্রিকক্রুটির কারণে। তবে গতকাল আবেদনের সময় ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এ সময়ের মধ্যে সার্ভার সচল করার চেষ্টা করব যাতে শূণ্যপদের তালিকা প্রেরণ সম্ভব হয়। উল্লেখ্য আবেদনে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যাছাই বাছাই করে স্বাক্ষর না করলে আবেদনসমুহ গ্রহন করবেনা বলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা প্রদান করে।

আগামি ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সার্ভার সচল না হলে কক্সবাজার সদরের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার শূণ্যপদ পূরণ করা সম্ভব হবেনা যেটির জন্য দায়ি থাকবেন সদরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এমনটাই দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩ জন প্রধান শিক্ষক ও ৫ জন মাদ্রাসার সুপারের। শিক্ষার পথ সুগম করতে সদরের ১ হাজার তরুনের চাকুরী নিশ্চিতে সার্ভার সচল খুবই জরুরি। পাশাপাশি সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকটও দূর করতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা একান্ত আবশ্যক বলে মনে করেন সচেতনমহল।

পাঠকের মতামত: