ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

খুনিয়া পালংয়ে মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে স’মিল স্থাপন না করার দাবীতে মানববন্ধন

শাহীন মাহমুদ রাসেল ::  কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব দারিয়ারদীঘি এলাকায় জামে মসজিদ, কবরস্থান ও মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে পরিবেশ ধ্বসংকারী অবৈধ স’মিল (করাতকল) স্থাপন না করার দাবীতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।  জামে মসজিদের মাঠে স’মিলের সামনে শুক্রবার এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরবর্তী ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব ধেছুয়া পালং গ্রামের মৃত হাজী জাফর আলমের ছেলে অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোছন কালো টাকা আর নিজের ক্ষমতার দৌড় ও প্রতাপ বোঝাতে আইন-কানুনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে সংরক্ষিত শাল-গজারি ও সামাজিক বনায়নের ভেতর, বন ঘেঁষে এমনকি জামে মসজিদ, কবরস্থান ও নুরানি মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠেই এই অবৈধ কল স্থাপন করেতে ঘর নির্মাণ করেন। এবং মিলের সব যন্ত্রাংশ (পার্টস) আনা হয়েছে। যদি তা চালু করে, নুরানি মাদ্রাসা পাশে থাকায় বিকট শব্দে পাঠদানে মনোযোগ হারাবে শিক্ষার্থীরা। এই অবৈধ কলে দিন-রাত চেরানো হবে শাল-গজারিগাছ। ফলে দিন দিন উজাড় হবে বন, ধ্বংস হবে প্রকৃতি ও পরিবেশ। আর হারিয়ে যাবে বন্য প্রাণী। জেলা প্রশাসকসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এমনটাই অভিযোগ করেছে মানববন্ধনে অংশগ্রহন কারীরা।

তারা আরও বলেন, অবৈধ করাতকলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেছেন। তারা অনতিবিলম্বে অবৈধভাবে চালু করাতে যাওয়া করাতকলটি বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় লাইসেন্সবিহীন করাতকলে ছেয়ে গেছে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন। এই এলাকার মফস্বল সর্বত্র নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন করাতকল। এর চাহিদা মেটাতে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এবং অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে করাতকল প্রতিষ্ঠায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। মসজিদ-মাদ্রাসা ঘেঁষে করাতকলটি গড়ে ওঠায় সাধারণ পথচারী ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে।  এলাকার ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ক্ষতি হবে বলে অভিবাকদের অন্যতম বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবদুর রহিম বলেন, নুরানি মাদ্রাসা ঘেষে এই করাতকলের কার্যক্রম শুরু হলে বিকট শব্দে ব্যাহত হবে লেখাপড়া। তাছাড়া অবৈধ এই করাতকলের কারণে পাশের ৫টি সামাজিক বনায়ন ধ্বংস হবে। এটা পরিবেশের জন্য হুমকি ডেকে আনবে। তিনি আরোও বলেন, এই করাতকল বন্ধে স্থানীয় সাংসদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই বন বিভাগের।

নুরানি মাদ্রাসার শিক্ষকরা বলেন, এটা মোটেই শিশু শিক্ষার জন্য অনুকুলে নয়, এটা প্রতিকূল। এটাকে রোধ করার জন্য সর্বমহলের চেষ্টা প্রয়োজন।

রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, এই করাতকলটি উচ্ছেদের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। খুব শিঘ্র অবৈধ এই করাতকল উচ্ছেদে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো হবে।

অবৈধ এই করাতকল উচ্ছেদে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে বলছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন।

এই করাতকলটি অপসারন করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

পাঠকের মতামত: