ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

লবণের ন্যায্য মূল্য সহ ৭ দফা দাবিতে চাষিদের মানববন্ধন

কক্সবাজার অফিস ::
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উদ্বৃত্ত থাকলেও লোভী মিল মালিক ও কতিপয় ব্যবসায়ীরা লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। লবণের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে চাষীরা উৎপাদন খরচও ঠিকমত পাচ্ছে না। এ অবস্থায় লবণ আমদানির ষড়যন্ত্র বন্ধ করে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করলে চাষাবাদ ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন কক্সবাজারের লবণ চাষীরা।
রোববার দুপুর ১২ টায় কক্সবাজার পৌরসভার সামনে লবণের নায্যমূল্যের দাবিতে মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদ। সেখানে চাষীরা এই হুমকি দেন।
চাষীরা বলেন, লবণ বাংলাদেশের এমন এক সম্পদ যার জন্য অন্যকোন দেশের উপর নির্ভর করতে হয় না। প্রতি বছর লবণের উৎপাদন সরকারের চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উদ্বৃত আছে। কিন্তু কিছু লোভী মিল মালিক, অসাধু ব্যবসায়ী ও ষড়যন্ত্রকারীরা লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শিল্প লবণ আমদানীর অজুহাতে সোডিয়াম সালফেট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানী করে। যার ফলে দেশের লবণ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চাষীরা দিশেহারা। লবণের মাঠ চাষি শূন্য। এতে জমির মালিকরা চরম হতাশ।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে লবণের মূল্য মন প্রতি ১৭০-১৮০ টাকায় নেমে এসেছে, যা উৎপাদন খরচের অর্ধেক। লবণ উৎপাদন, পরিবহন, পরিশোধন, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণের সাথে সারাদেশে ৮ থেকে ১০ লক্ষ লোক জড়িত। এছাড়াও এই শিল্পের উপর দেশের প্রায় ২৭-২৮ লক্ষ লোক নির্ভরশীল। কিন্তু লবণ আমদানীর ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠি চরমভাবে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়বে। তাই দ্রুত আমদানীর ষড়যন্ত্র বন্ধ করে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম ও সদস্য সচিব এহছানুল করিম, সদর উপজেলার সভাপতি কামাল উদ্দিন রহমান পেয়ারো, কুতুবজোমের লবণ ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন, লবণ চাষী সিরাজ মিয়া বাঁশিসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষী। মানববন্ধনে অংশ নেন মহেশখালী, সদর, পেকুয়া, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষীরা।
লবণ ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, সবচেয়ে কঠিন পেশা হল লবণ উৎপাদন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয়, লবণ চাষীরা ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দুঃখ, বঞ্চনার কথা কেউ শুনছে না।
লবণ চাষী নেতা কামাল উদ্দিন পেয়ারো বলেন, আমরা লবণ চাষ করে বাঁচি। কিন্তু কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে লবণ চাষ বন্ধের উপক্রমে। লবণ চাষ ধ্বংস হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁচতে পারবে না। সমৃদ্ধ একটি উৎপাদন খাত ধ্বংষের ষড়যন্ত্র হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদের সদস্য সচিব এহছানুল করিম বলেন, লবণ সব সময় উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু কতিপয় মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বার বার লবণ আমদানীর চক্রান্ত করে লবণ শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। চাষীদের কথা চিন্তা করে সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কক্সবাজারে লবণ বোর্ড গঠন করে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে চাষীদের বাঁচাতে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী লবণ বান্ধব। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাষীদের প্রাণের দাবী নিশ্চয়ই শোনবেন। চাষীদের দাবী বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মানববন্ধন শেষে চাষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন। ওই মানববন্ধনে ৭টি দাবী উল্লেখ করেন। দাবীগুলো হল- ১. মাঠ পর্যায়ে লবণের ন্যায্যমূল্য কেজি প্রায় ১১-১২ টাকা বা মন প্রতি ৪৫০-৫০০ টাকা নির্ধারণ করা। ২. লবণ আমদানি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা। ৩. মানবদেহের ক্ষতিকারক সোডিয়াম সালফেট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট এর যথেষ্ট আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা। ৪. সোডিয়াম, ক্লোরাইড আমদানী নিষিদ্ধ করা। ৫. সহজ শর্তে লবণ চাষিদের ঋণ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ৬. মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষীদের পূর্বের ঋণ মওকুপ এবং প্রণোদনা প্রদান করা। ৭. বিসিকের মাধ্যমে ২ লক্ষ মেট্টিক টন লবণ আপদকালীন সময়ের জন্য মজুদ করা।
পরে বিকাল ৪টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন বাংলাদেশ লবণ চাষী বাঁচাও পরিষদ।

পাঠকের মতামত: