ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়াসহ জেলার লাইব্রেরী গুলোতে কেজি স্কুলে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বই বিক্রির টার্গেট

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::  কক্সবাজারে কেজি স্কুল গুলোতে সাড়ে ৩ কোটি কোটি টাকার বই বিক্রির টার্গেট ঠিক করেছে লাইব্রেরী মালিকরা। যার লভ্যাংশের অর্ধেকেই পাবে কেজি স্কুল কর্তৃপক্ষ। কতিপয় লাইব্রেরী ও কেজি স্কুল এই বিপুল টাকা ভাগভাটোয়ারা করলেও মাঝখানে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অভিভাবকরা। সচেতন মহলের দাবী, একদামে বই বিক্রির নামে সাধারণ গ্রাহকদের চরম ভাবে ঠকানো হচ্ছে। এতে আরো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রাহকরা। আর প্রশাসনের কাছে বার বার দাবী জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা।
শিক্ষা অফিস এবং লাইব্রেরী সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় কেজি স্কুলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০ টি। এর মধ্যে প্লে-গ্রুপ থেকে শুরু করে সব ক্লাসের জন্য রয়েছে বাড়তি বই। যা কেজি স্কুল গুলো কিছু প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে ছাপিয়ে কিছু লাইব্রেরীর মাধ্যমে বিক্রি করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বই বিক্রিতে গায়ের দামেই রাখছে লাইব্রেরী গুলো। আর বই বিক্রির লভ্যাংশের সর্বনিম্ন ৫০% টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট কেজি স্কুল গুলোতে আর বাকি ৫০% টাকা রেখে দেয় লাইব্রেরী। এতে জেলার কেজি স্কুল গুলোতে ছাত্রছাত্রী হিসাবে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে যদি ৫০০ টাকাও নেওয়া হয় তাহলেও প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আর এই বিপুল টাকা যাবে অভিভাবকদের পকেট থেকে। লাভবান হবে লাইব্রেরী আর কেজি স্কুল গুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের ৪ টি লাইব্রেরী কেজি স্কুলের বই বিক্রির ডিলার। আর কেজি স্কুল গুলোর সাথে সিন্ডিকেট করে এই ৪টি লাইব্রেরী হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল টাকা। লাইব্রেরী গুলো হচ্ছে রহমানিয়া লাইব্রেরী, বিদ্যাসাগর লাইব্রেরী, অন্বেষা লাইব্রেরী এবং মোহাম্মদিয়া লাইব্রেরী। কক্সবাজার শহরের সবকটি স্কুলের বাড়তি বই গাইড সহ বিক্রি করা হচ্ছে এসব লাইব্রেরীতে। এছাড়া রামুর আল হাবিব লাইব্রেরী,  শরীফ লাইব্রেরী, সোবাহানিয়া লাইব্রেরী, হক লাইব্রেরী, উখিয়ার ফ্রেন্স লাইব্রেরী, উখিয়া লাইব্রেরী, কাইয়ুম লাইব্রেরী, কোট বাজারের বিজন লাইব্রেরী, চকরিয়ার সাহিত্য নিকেতন, আজাদ লাইব্রেরী, নিউ আজাদ লাইব্রেরী, সৌদিয়া লাইব্রেরী, চকরিয়া বইঘর, নিউ ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ইসলামিয়া লাইব্রেরী, মহেশখীতে আসিফ লাইব্রেরী, রহমান লাইব্রেরী, একুশে লাইব্রেরী, একাত্তর লাইব্রেরী, শোভন লাইর্বেরীতে বিক্রি হচ্ছে কেজি স্কুলের বই। এ ব্যপারে রামু কলেজের অধ্যাপক জহির উদ্দিন বলেন, কেজি স্কুলগুলো গড়ে উঠে ব্যবসায়িক চিন্তা নিয়ে। তাই এখানে কিছু বানিজ্যিক চিন্তা থাকবে সেটা ঠিক। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করা উচিত-কেজি স্কুল গুলো কি পরিমান বাড়তি বই দিতে পারবে আর সেটা কি দামে বিক্রি হবে।
শহরের টেকপাড়া এলাকার ব্যবসায়ি জসিম উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বিনামূল্যে ৬ টি বই দিয়েছে। কিন্তু কেজি স্কুল থেকে আরও ৪ টি বই এবং সাথে গাইড সহ রহমানিয়া লাইব্রেরী থেকে ১২৫০ টাকা নিয়েছে। এই বই গুলোর তেমন কোন কাজ নেই। মূলত টাকা আয় করার জন্যই এ সমস্ত বই দিয়েছে।
মহেশখালী কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, আমার মতে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ভাল লেখা পড়া হচ্ছে। তবুও সরকারি এই প্রতিষ্টানগুলো মানুষের আস্থা অর্জন করতে না পারায় কেজি স্কুলগুলোর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। আর অনেকে আছে নিজেদেরকে সমাজে যাহির করার জন্য ছেলেমেয়েদের কেজি স্কুলে দেয়। ফলে তারাই ব্যবসা করে যাচ্ছে। তবে সরকার যদি একটি নীতিমালা তৈরি করে দিত তা হলে অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যেত।
এ ব্যপারে কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিউল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, সরকার যেখানে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছে, প্রত্যেক শিক্ষকদের নির্দিস্ট বিষয়ে আলাদা প্রশিক্ষণ দিয়েছে, প্রতিটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া সহ আধুনিক পড়ালেখা শেখার ব্যবস্থা করেছে , সেখানে সন্তানদের পড়ানোর জন্য কেজি স্কুলকে বেছে নেওয়া দুঃখজনক। অনেক মানুষ আছে কিছু টাকা পয়সা হলেই ছেলেমেয়েদের ভাল স্কুলের নামে কেজি স্কুলে ভর্তি করিয়ে সমাজে নিজের অবস্থান সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন, কেজি স্কুলের বিষয়ে একটি নীতিমালা গ্রহন করা যেতে পারে।

পাঠকের মতামত: