ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ‘মজনু পাগলা’ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষক!

অনলাইন ডেস্ক :: চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে তাকে সবাই চেনে ‘পাগলা মজনু’ নামে। কখনও নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকার স্টেডিয়ামপাড়ার পথে-ফুটপাতে, আবার কখনও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন— মাসদেড়েক আগেও এই ছিল তার ঠিকানা। সেই ‘মজনু পাগলা’ই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে এখন আছে পুলিশের হেফাজতে।

নদীতে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে আসে মজনু। নগরীতে কিছুদিন রিকশা চালায় সে। এরপর রোকসানা নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে। পাঁচ-ছয় বছর আগে মাটিবাহী ট্রাকের ধাক্কায় রোকসানা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকায় মারা যায়। ওই দুর্ঘটনায় মজনুর দুটি দাঁত পড়ে যায় এবং আঙুল ভেঙে যায়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা ভবঘুরে মজনু জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, এখন থেকে মাস দেড়েক আগে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় আরেক ভবঘুরে নারী জেসমিনের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেও বিভিন্ন রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াতো। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় মজনুর। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। মাস দেড়েক আগে জেসমিনকে ঢাকায় নিয়ে আসে মজনু।

ঢাকায় এসে দুজন মাসখানেকেরও বেশি সময় রাজধানীর শেওড়া, বনানী ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে কাটিয়ে দেয়। এর মধ্যেই হঠাৎ ঘটে অঘটন। কয়েকদিন আগে জেসমিন এক সিএনজি অটোরিকশা চালকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এরপর প্রেমিকার শোকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় সে।

জিজ্ঞাসাবাদে মজনু জানিয়েছে, তার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কখনও সে ট্রেনে চট্টগ্রাম, আবার কখনও নারায়ণগঞ্জ, কখনও গাজীপুরে চলে যেত। রেললাইন ও আশপাশের এলাকায় রাত কাটাত সে। দীর্ঘদিন ধরে তার চুল নোংরা ও জটলাগা অবস্থায় ছিল। তবে জেসমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার পর সেগুলো কেটে ছোট করে ফেলে। জেসমিনেরও নোংরা জটলাগা চুল ছিল। সেই চুলও কেটে দেয় মজনু। সপ্তাহে দু-একদিনের বেশি গোসলও করা হয় না তার।
র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবির কাছে তুলে দেওয়া হয় মজনুকে। এরপর বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মজনু আরও জানায়, রোববার (৫ জানুয়ারি) কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে টার্গেট করার সময় তার পরিচয় সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না তার। সে মনে করেছিল, বিকৃত স্বভাবে প্রায় নিয়মিত যেভাবে ‘শিকার’ ধরে থাকে এটাও সেরকমই। এমনকি টার্গেট করা ওই তরুণীকে নিয়ে রেললাইনে ‘লালন-পালন’ করে সঙ্গে রাখবে— এমন কথাও ভাবতে থাকে সে।

রাত গভীর হলে ওই তরুণীকে রাস্তার ওপারে রেললাইনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য সে দীর্ঘ সময় তার পাশে বসে থাকে। তবে ওই ছাত্রী যখন বারবার বাধা দিচ্ছিল, তখন ঘাবড়ে যায় মজনু। একপর্যায়ে তার ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে সে উপলব্ধি করে, ভুল টার্গেটে হাত দিয়েছে সে। পরিচয় নিশ্চিত হতে বারবার তাই মেয়েটির নাম-পরিচয় ও কোথায় পড়াশোনা করছে তা জানতে চেয়েছিল মজনু। ভুল করে ‘বড় কোনো মানুষ’কে টার্গেট করেছে— এটা বুঝতে পারে অবশেষে।

মজনু জানায়, বর্তমানে তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। তবে কখনও রেলস্টেশনে ভিক্ষা করত সে। আবার কখনও পুরোনো পেপারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করত। এ বাবদ যে টাকা পেত, তা দিয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। ভাসমান যৌনকর্মীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে যে টাকা লাগে, তা ব্যয় করার সামর্থ্য তার ছিল না। তাই রেললাইনে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন নারী, প্রতিবন্ধী নারী-শিশু ও ভিক্ষুকদের টার্গেট করত সে।

প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গলফ ক্লাবসংলগ্ন স্থানে পৌঁছান। এ সময় মজনু তাকে পেছন থেকে গলা ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। তার গলা টিপে ধরে। ছাত্রী চিৎকার করতে গেলে মজনু তাকে কিল-ঘুষি মারে। ভয়ভীতি দেখায়। ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ধর্ষণ করে মজনু। সুত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাঠকের মতামত: