ইমাম খাইর, কক্সবাজার :: শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতনভাতা, শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ এবং উপবৃত্তি দেয়ার পরও কাঙ্খিত উপস্থিতি নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। খাতাপত্রে যে পরিমাণ শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে তার অর্ধেকও এখনো ক্লাসমুখি হয় নি। এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে যার এক তৃতীয়াংশও সারা বছর ক্লাসে থাকে গরহাজির। শহরের চেয়ে গ্রামগঞ্জের প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র খুবই নাজুক। কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘দায়সারা’ পাঠদানের অভিযোগও রয়েছে। কক্সবাজার জেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫৬টি।
শাহেদা জান্নাত নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের পাঠদান নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না। অনেক স্কুলে হাজিরা খাতাও নেই। চাকুরি বাঁচানোর একটা উপায় হিসেবে শিক্ষকরা পাঠদান করে থাকেন।
তিনি বলেন, অনেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে অর্থ ব্যয় হলেও সন্তানদের কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছে।
শিক্ষকদের ক্লাস গ্রহণে উদাসীনতা ও উপযুক্ত তদারকির অভাবে দিনদিন কমে যাচ্ছে প্রতিবছর ‘হাজার কোটি টাকা’ ব্যয়ে পরিচালিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা।
অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজেদের সন্তানকে কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। নিজেদের ব্যাপারে আস্থাহীন। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন ‘গরিবের সন্তানদের স্কুলে’ পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন তথ্যসুত্র অনুসন্ধান ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- প্রাথমিকের সরকারি শিক্ষকরা ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন নিয়েও ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না। অথচ যারা সরকারি চাকুরি না পেয়ে কেজি স্কুলে মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছেন, তাদের পাঠদানে সবাই ঝুঁকে পড়েছেন। এর কারণ সরকারি বিদ্যালয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না। এছাড়া গুণগত মান যাচাই-বাছাই না করে গণহারে বেসরকারি বিদ্যালয়কে সরকারি করায় প্রাথমিক শিক্ষার মান অনেক কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি হওয়া বিদ্যালয়ে এমন কিছু শিক্ষক রয়েছেন, যারা নিজেই ইংরেজি পড়তে বা লিখতে পারেন না। এমন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কী পড়াবেন?
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, সঠিক জবাবদিহিতা নেই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ কারণে পাঠদানে আগ্রহী নন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে সরকারি চাকরি স্থায়ী মনোভাবের কারণে ক্লাসে অনিয়মিত উপস্থিতি থাকে তাদের। পাশাপাশি অনেকেই এসএসসি বা এইচএসসি পাস করেই ঢুকে পড়েছেন এ চাকরিতে। সেক্ষেত্রে দুর্বল মেধার একটা প্রশ্নও থেকে যায়। সবমিলে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান দিনদিন কমে যাচ্ছে।
সরকারি চাকরি একবার হয়ে গেলে তা হারানোর কোনো ভয় থাকে না শিক্ষকদের। কেজি স্কুলে চাকরি হারানোর ভয় থাকায় শিক্ষকরা বেশ আন্তরিক থাকেন। এছাড়া বেসরকারি বিদ্যালয়কে গণহারে সরকারি করায় অনেক শিক্ষকের গুণগত মান নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মান ফেরাতে শিক্ষকদের দক্ষ করতে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও ফাঁকিবাজদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন মনে করছে অভিভাবকরা।
তবে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে গ্রামে-গঞ্জে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন তথা কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠাও দায়ী। অনুমোদন ছাড়া ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গড়ে উঠছে এই কিন্ডারগার্টেন।
দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এছাড়া শিক্ষার উন্নয়নে কয়েক বছর আগেও বেশকিছু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছে সরকার। শুধু তাই নয়, বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই বিতরণ করে উৎসব পালন করছে। সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের উপকরণ কেনা বাবদ দেওয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। একইসঙ্গে চলতি বছর চালু হচ্ছে নতুন বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নতুন পোশাক কেনার অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থাও।
এছাড়াও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়েছে সুসজ্জিত একাডেমিক ভবন। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা, ক্ষুদ্র মেরামত ও প্লে শ্রেণির কক্ষ সজ্জিতকরণ এবং শিক্ষা উপকরণ কেনার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে একেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাশাপাশি পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষকও নিয়োগ রয়েছেন। এরপরও শিক্ষার্থী কমছে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) মো. সফিউল আলম বলেন, আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, অনেক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। নিজেও সরেজমিন দেখেছি, যেখানে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকও ক্লাসে নেই। এ বিষয়ে শিক্ষকদের তাগাদা দেয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
সরকারী সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও কেন কাঙ্খিত উপস্থিতি নেই তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
প্রকাশ:
২০২০-০১-১১ ১৪:১৮:৩১
আপডেট:২০২০-০১-১১ ১৪:১৮:৩১
- চকরিয়ায় কৃষক প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবস পালিত
- চকরিয়াতে বৃষ্টির জন্য তপ্ত রোদে কাঁদলেন মুসল্লীরা
- কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, শহরজুড়ে উত্তেজনা
- চকরিয়ার হত্যা মামলার ৭ আসামি ফেনী থেকে গ্রেপ্তার
- চকরিয়া মাতামুহুরী নদীতে মাছের ঝাঁক তৈরিকালে পানিতে ডুবে দুই যুবকের মৃত্যু
- চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদের গোলাগুলি কাটা বন্দুক উদ্ধার, নারীসহ আহত ৫
- চকরিয়ায় বনের ভেতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে বন্যহাতির আক্রমণে নারীর মৃত্যু
- চকরিয়ার প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩ গম্বুজ মসজিদের সংস্কার জরুরী
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
- চকরিয়ায় মহাসড়কে তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক যুবক নিহত, দুইজন আহত
- রামুতে পিতা-পুত্রকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- ঈদগাঁও উপজেলার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর-জেলা প্রশাসক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
- চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া চৌমুহনীতে বিট কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত
- চকরিয়া বদরখালীতে গুলি করে হাত-পা কেটে যুবককে খুনের মামলার আসামি শাকিল গ্রেপ্তার
- রামুতে পিতা-পুত্রকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়ায় মহাসড়কে তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক যুবক নিহত, দুইজন আহত
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৯ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা
- চকরিয়ার প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ৩ গম্বুজ মসজিদের সংস্কার জরুরী
- চকরিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদের গোলাগুলি কাটা বন্দুক উদ্ধার, নারীসহ আহত ৫
- চকরিয়া মাতামুহুরী নদীতে মাছের ঝাঁক তৈরিকালে পানিতে ডুবে দুই যুবকের মৃত্যু
পাঠকের মতামত: