ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিঃশব্দে ভোট চুরির প্রকল্প ইভিএম : বিএনপি

সিএন ডেস্ক ::  ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিঃশব্দে-নীরবে ভোট চুরির স্বয়ংক্রিয় প্রকল্প বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে না ইভিএম এর মাধ্যমে মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফেরত পাবে। এর মাধ্যমে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখলের আরেকটি প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। ইসির সঙ্গে সাক্ষাতে ইভিএম-এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন বলেও তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন।

এর আগে আমীর খসরু চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দুইঘণ্টার বেশি সময় বৈঠকে তারা ইসির কাছে ২১ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। ইভিএমের বিরোধিতা করে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৪ সালে ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। ২০১৮ সালে মধ্যরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ক্ষমতায় আসা হয়েছে। আর এখনকার নির্বাচনে আমরা নতুন প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। তা হচ্ছে ইভিএম। তৃতীয় অধ্যায়ে যেটা হচ্ছে তা হলো ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হওয়া। ক্ষমতা দখল করা, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া।

তিনি বলেন, ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট চুরির যে প্রক্রিয়া তা একেবারে নীরব-নিঃশব্দ ও স্বয়ংক্রিয় ভোট চুরির প্রকল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ প্রোগ্রামিং এখানে দেখা যাচ্ছে না। প্রিন্ট করার সুযোগ নেই। এখানে ভোটাররা জানতে পারছে না তাদের ভোট কোথায় যাচ্ছে। তিনি বলেন, যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা চুরি হয়েছে ঠিক সেরকম ইভিএম নীরবে ভোট চুরির প্রকল্প। জোর করে ব্যালটবাক্স ভর্তি করারও একটা কষ্ট আছে। ইভিএম-এ সেটাও নেই। ফলাফল নিয়ন্ত্রিত হবে তাদের করা প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে। এখানে সবকিছু ঠিক থাকবে, পরিবেশ শান্ত থাকবে কিন্তু ফলাফল তারা যা চাইবে তা হবে। ইভিএম ব্যবহার করে সরকার বা নির্বাচন কমিশন কী চায় এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আর তারা চায় আবার জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করা।

ইভিএম-এর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনারা উনাদের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তবে, তাদের চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে এসেছি। দেশে নির্বাচনের কোনও পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের কোনও আস্থা নেই। জনগণের ভোট দেওয়ার অপশন ঠিক রাখার জন্যই আমরা ভোটে এসেছি। না হলে এই ভোট দেওয়ার অপশনটাও তো থাকছে না।

ইভিএম ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, ইভিএম নিয়ে বিএনপি আপত্তি করেছে। তবে আমরা তাদের বুঝিয়ে বলেছি, ইভিএম নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এখানে কারচুপির কোনও সুযোগ নেই। ইভিএম-এ যার ভোট কেবল তিনিই দিতে পারবেন। ফলে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। অতীতে ব্যালট ছিনতাই, পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানা অনিয়ম হতো। এসব থেকে পরিত্রাণের জন্যই আমরা ইভিএম ব্যবহার করছি।

তিনি বলেন, ইভিএম এর মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনসহ অনেক নির্বাচন হয়েছে সেখানে কোনও কারচুপির অভিযোগ আসেনি। ভোটারদের মধ্যে এটা নিয়ে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না। প্রার্থীরাও অভিযোগ করেননি। আর ইভিএম অফলাইন পদ্ধতি। ফলে এটা হ্যাকিংয়ের কোনও সুযোগও থাকবে না। এর প্রোগ্রামিংও আমাদের হাতে থাকবে। এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ইভিএম থেকে সরে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই।

ইসিতে বিএনপির ২১ দফা 

ইসির সঙ্গে সাক্ষাতে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে যে ২১ দফা লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে সেগুলো হলো—নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে প্রার্থীদের গ্রেফতার করা যাবে না। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া প্রার্থীদের দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ইসির অনুমতি ছাড়া নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খখলা বাহিনীর সব ধরনের অভিযান স্থগিত রাখতে হবে। নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা এক সপ্তাহ আগে প্রার্থীদের দিতে হবে। প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করতে হবে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং এক সপ্তাহ আগে এই তালিকা প্রার্থীদের দিতে হবে। নির্বাচনি প্রচারের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনও প্রকল্প উদ্বোধন করা যাবে না। সরকার নিয়ন্ত্রিত রেডিও ও টিভিতে প্রার্থীদের প্রচারে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি টিভিতে নির্বাচনি সংবাদ প্রচারে সাম্যতা বজায় রাখার নির্দেশ দিতে হবে। নির্বাচনের আগে সকল বৈধ অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে হবে। নির্বাচনি দায়িত্বে কোনও আধা-সরকারি বা বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ করা যাবে না। নির্বাচনি কেন্দ্রের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্বাচনি ক্যাম্প তৈরি না করার নির্দেশ দিতে হবে। নির্বাচনের দিন কেন্দ্র থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর আওতাধীন বলে ঘোষণা করতে হবে। মেয়র প্রার্থীদের নিরাপত্তায় ১০ সদস্যের বিশেষ নিরাপত্তা টিম নিয়োগ দিতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে প্রতি কেন্দ্রে নিরাপত্তা সেল তৈরি করতে হবে এবং এই সেলের সঙ্গে অভিযোগকারীদের সহজেই যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। পোলিং এজেন্টদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি-বিদেশি সব পর্যবেক্ষকদের সর্বাত্মক সহায়তার নিশ্চিয়তা দিতে হবে। সব ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। ভোট গণনার অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় গণনার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত সব অভিযোগ ইসিকে দ্রুত অবহিত জন্য বিশেষ সাক্ষাতের অনুমোদনপত্র দিতে হবে।

90

পাঠকের মতামত: