ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

,মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা রাবার ড্যাম অকার্যকর হয়ে পড়েছে. নেমে যাচ্ছে মিঠা পানি, কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক

ছবির ক্যাপশন- কক্সবাজারের চকরিয়ায় শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ নিশ্চিত করতে মাতামুহুরী নদীর রামপুর-পালাকাটা পয়েন্ট নির্মিত এই রাবার ড্যামটির তিন স্প্যানের এক স্প্যান অকার্যকর হয়ে পড়ায় ভাটির দিকে নেমে যাচ্ছে ধরে রাখা মিঠাপানি। ছবিটি আজ বিকেলে তোলা।

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া (কক্সবাজার) :: কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর রামপুর–পালাকাটা পয়েন্টে নির্মিত রাবার ড্যামের তিন স্প্যানের মধ্যে এক স্প্যানের রাবারের নিন্মাংশে ফুটো (ছিদ্র) হয়ে পড়ায় নদীর মিঠাপানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি অকার্যকর হয়ে পড়া এক স্প্যানের ওপর দিয়ে ভাটির দিকে নেমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এই ড্যামের ধরে রাখা মিঠাপানির সুবিধা নিয়ে পৌরসভা, চিরিঙ্গা, সাহারবিলসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ নিয়ে বেশ আতঙ্কে ভুগছেন কয়েক হাজার চাষি।

জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো চলতি শুষ্ক মৌসুমে ধান, সবজিসহ রকমারী সবজির আবাদ নির্বিঘ্ন করতে সদ্য বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যামটির তিন স্প্যানের রাবার ফুলানো হয় পানিভর্তি করে। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর থেকে ওই ড্যামের ৩ নম্বর স্প্যান দেবে যেতে থাকে। এই অবস্থায় গত বুধবার ভোর থেকে মাতামুহুরী নদীর ধরে রাখা মিঠা পানি ভাটির দিকে নেমে যেতে থাকে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত-দেশ স্বাধীনের পর চকরিয়াকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টে অস্থায়ী মাটির বাঁধ (ক্রস বাঁধ) তৈরি করে অবিভক্ত চকরিয়া উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাটির বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ হয়ে আসছিল। কিন্তু প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেওয়ায় বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে ড্যাম দুটির কাজ বাস্তবায়ন করেন। এতে এর পর থেকে নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করে আসছিলেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক। তবে মাঝেমধ্যে ড্যাম দুটিতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিলেও পরবর্তীতে রিপিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সচল করে আসছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত তিনবছর আগে রামপুর-পালাকাটার ড্যামটির রাবারের নিচে ছিদ্র হয়ে গেলে তা মেরামত করা হয়। সর্বশেষ চলতি শুষ্ক মৌসুমে এই ড্যামটির রাবার আবার ছিদ্র হয়ে গেলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসাইন বলেন, ‘রামপুর-পালাকাটা ড্যামটির এক স্প্যান অকার্যকর হওয়ার বিষয়টি জানার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অতিদ্রুত তারা এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) মো. শাহ আরমান সালমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর গত সাতদিন আগে ড্যামটির রাবার ফুলানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর পর ঠিকঠাকমতো চললেও হঠাৎ করে পূর্ণিমার জোঁ শুরু হওয়াতে সামুদ্রিক জোয়ারের অস্বাভাবিক পানির ধাক্কায় ড্যামটির তিন নম্বর স্প্যানের রাবারের নিচের ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যায়। এতে স্প্যানটি দেবে যায়। এই ড্যামটির দৈর্ঘ্য ১৮৬ দশমিক ৫০ মিটার ও প্রস্ত ৪৫ মিটার।’

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) সংসদ সদস্য জাফর আলম এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী ড্যামটি পরিদর্শন করবেন। এর পর ড্যামের অকার্যকর স্প্যানের মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।’

পাঠকের মতামত: