ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাটির পরিবর্তে বালি দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে মাটির পরিবর্তে বালি। বালিতে রাস্তা নির্মিত হওয়ায় এর টেকসই নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে এলাকার সচেতন মহল। বর্ষার শুরুতেই এ বালি গড়িয়ে দু’ পাশে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। অথচ সিডিউলে উল্লেখ রয়েছে, পলি মাটি দিয়ে রাস্তা ভরাট করে কমপেকশন করার জন্য। সরেজমিনে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হলে এ সত্যতার প্রমান মিলবে বলে দাবী স্ব স্ব এলাকার মানুষের।

বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৩টি বড় নদী শংখ, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী ও অর্ধশত ছড়া খালের বালি রেল লাইনে দৈনিক শত শত ১০ চাকা বিশিষ্ট ট্রাক, ডাম্পার যোগে নদী ও ছড়া খাল থেকে বালি উত্তোলন করে রেল লাইনে সরবরাহ দিচ্ছে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এতে সরকার এক কানাকড়িও সরকার রাজস্ব না ফেলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারী-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের পকেট ভারী হচ্ছে। অপরদিকে বালি সরবরাহ দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামাই করছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বালি উত্তোলনের কারণে ক্ষতি হচ্ছে নদীর দু’পাড়ের বেঁড়িবাধ, গ্রামীন রাস্তাঘাট ও মানুষের বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এ প্রকল্পটির এ‘নির্মাণকাজ পরিদর্শনে উচ্চ পর্যায়ের কোন মনিটরিং দল না থাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদারা যেন তেন ভাবে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এ নির্মাণ কাজে স্থানীয় জনগনের ভাষ্যমতে, পুকুর চুরি নয় সমুদ্র চুরি হচ্ছে। কাজের অগ্রগতির চেয়ে ঢের পরিমান বিল উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদাররা। এ রেল লাইন নির্মাণের জন্য ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বলে জানান এলাকার অভিজ্ঞজনরা।

আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষ স্বপ্ন দেখছিল এ রেল লাইন নির্মাণের। সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে যথাসময়ে রেল লাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ পোষণ করছেন তারা।

চট্টগ্রামের দোহাজারী হতে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি মালিকদেরকে ক্ষতিপুরণ প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হকুম দখল কর্মকর্তার বরাবরে ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত অনেক ভূমি মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে এখনো ৪০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি। প্রথমে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এ কাজ সম্পন্্ন করার তারিখ ধার্য্য থাকলেও পরবর্তীতে নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, এ মেঘা প্রকল্পের আওতায় ১২৮ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে ৯টি রেল ষ্টেশন নির্মিত হবে ঝিনুকের আদলে দৃষ্ঠি নন্দন রেল স্টেশন। এ রেল লাইনের আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠবে আকর্ষনীয় হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন,বিপণিবিতান ও বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন।

রেলের প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্পের আওতাধীন ১২৮ কিলোমিটার এলাকায় চারটি বড় সেতুসহ ৩৯টি সেতু নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ২৮টি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তৎমধ্যে বড় ৪টি সেতু হচ্ছে মাতামুহুরী নদী, মাতামুহুরী শাখানদী, খরস্রোতা শঙ্খ এবং বাঁকখালী নদীর ওপর।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১২৮ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে।

দীর্ঘ এ রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, সদর ও উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ৯টি রেল স্টেশন নির্মিত হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই প্রকল্পকে পৃথক দুটি লটে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় লট হচ্ছে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করর্পোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে সিঙ্গেল লাইন মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ট্রান্স এশীয় রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হতে ব্রডগেজ রেলপথ লাগবে। তাই প্রকল্প সংশোধন করে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল পাস করা হয়।

জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের বিভিন্ন অনুষঙ্গে ব্যয় বেড়েছে ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকট গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ রেলপথে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনে ট্রেন চলতে পারবে। #

পাঠকের মতামত: