ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

জেলায় ১১৬৩৪ মে.টন ধান ও চাল কিনবে সরকার

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::  আবারো ৮ হাজার ৭৮১ মেট্রিক টন ধান ও একই সাথে ২ হাজার ৮৫৩ মেট্রিকটন চাল কিনবে সরকার। কক্সবাজার জেলাতে এবারের আমন মৌসুমে ধান চাল কেনার কর্মসূচিতে কোন ধরনের অনিয়ম হবে না জানিয়ে প্রকৃত কৃষকরা কেজি প্রতি ধান ২৬ টাকা করে ন্যায্য মূল্যে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া চাল প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন বন জানিয়েছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
কক্সবাজার জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেবদাস চাকমা জানান, চলতি আমন মৌসুমে কক্সবাজারে ৮৭৮১ মেট্রিকটন ধান এবং ২৮৫৩ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ধান কিনবে ১০১২ মেট্রিকটন এবং চাল ৬৪৮ মেট্রিকটন, রামু উপজেলাতে ধান কিনবে ১০১০ মেট্রিকটন এবং চাল কিনবে ৬৬৮ মেট্রিকটন, উখিয়া উপজেলাতে ধান কিনবে ১০৩১ মেট্রিকটন এবং চাল কিনবে ৪৯০ মেট্রিকটন, চকরিয়া উপজেলাতে ধান কিনবে ২০৩৬ মেট্রিকটন এবং চাল কিনবে ৫৪৯ মেট্রিক টন, টেকনাফ উপজেলাতে ধান কিনবে ১০২৬ মেট্রিক টন এবং চাল কিনবে ২৪৪ মেট্রিক টন, পেকুয়া উপজেলাতে ধান কিনবে ৮৭৮ মেট্রিকটন এবং চাল কিনবে ১৬৮ মেট্রিকটন, মহেশখালী উপজেলাতে ধান কিনবে ৯৮৭ মেট্রিক টন এবং চাল কিনবে ৮৬ মেট্রিক টন, কুতুবদিয়া উপজেলাতে ধান কিনবে ৪১১ মেট্রিকটন। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা জানান, এবারে সরকারি ভাবে ধান করা হবে কেজি প্রতি ২৬ টাকা দামে আর চাল সংগ্রহ করবে আতপ ৩৫ টাকা এবং সিদ্ধ ৩৬ টাকা দামে। তিনি জানান, গত বার ধান সংগ্রহ নিয়ে কক্সবাজারে বেশ কিছু বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবারে যাতে সে রকম কোন পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য ইতি পূর্বে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে শুরু করে কৃষকলীগের নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত সবাইকে বলে দিয়েছি কোন ধরনের অনিয়ম করা যাবে না। ধান ক্রয় করার সময় উপজেলা কৃষি অফিসের তালিকা এবং কৃষি অফিসের একজন প্রতিনিধি এবং ইউএনও’র প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে। এছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ধান চাল ক্রয় করা হবে।
এদিকে পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়া পাড়ার কৃষক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমি চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১৮ কানি ধান চাষ করেছি বর্তমানে আমার কাছে প্রায় ১ হাজার আরি ধান মজুদ আছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে সেখানে অনেক হয়রানি করা হয়। তারা ধানে চিটা বেশি শুকানো কম বলে ধান কিনেনা। অথচ মিলে এ ধরনের কোন কথা বলেনা। আর খাদ্য অফিসে প্রতি বস্তায় অন্তত ১০ কেজি ধান বেশি নিয়ে নেয়। এছাড়া বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিসে সব দলীয় লোকজন কৃষি কার্ড করছে যাতে তাদের নামে ধান বিক্রি করা যায় অথচ তারা কেউ প্রকৃত চাষী নয়। আবার প্রকৃত চাষীরা কৃষি কার্ড করতে গেলে সেখানে হয়রানী আর উৎকোচ দিতে হয়। মোট কথা সব দিকে হয়রানির শেষ নেই।
ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, গত ব্যুরো মৌসুমে স্থানীয় কিছু মানুষের কাছ থেকে শুনে একটি গাড়ি ভাড়া করে প্রায় ২ হাজার কেজি ধান নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে যে হয়রানির শিকার হয়েছি তা মনে থাকার মত। আমার সামনে খুবই নিম্ন মানের ধান নিচ্ছে অথচ আমার ধানে আদ্রতা কম বলে ফেরত দিচ্ছে পরে দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ধান বিক্রি করলাম। কারন গাড়ি ভাড়া দিতেই আমি কাহিল হয়ে গেছি। এর পরে আর কোন দিন ধান নিয়ে বিক্রি করতে যায়নি। কারন সব কিছু দুর্নীতিতে ভরা।
রামু চাকমারকুল এলাকার কৃষক আলী আকবর বলেন, গত বার ধান বিক্রি করে যেই টাকা পেয়েছি সেই টাকা ছাড় করতে অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি আর কোন দিন সরকারি অফিসে ধান বিক্রি করতে যাবনা।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য কাজ করছে তাই বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান চাল কিনার ব্যবস্থা করেছে। সেখানে কিছু মধ্যসত্বভোগী এবং কিছু অসাধু কর্মকর্তারা মিলে সরকারের এই অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। তাই এই বিষয়ে প্রশাসন সহ সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।
উল্লেখ্য গত ব্যুরো মৌসুমে ধান ক্রয় নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির কারণে কক্সবাজার খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ছালাউদ্দিন র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছিল। এছাড়া অনিয়ম দুর্নীতির কারনে এই অফিসের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম এবং রাজিয়া সুলতানাকে অন্যত্র বদলী করা হয়।

পাঠকের মতামত: