আছে জরুরি ওষুধপত্র, ফ্যান এমনকি বিশুদ্ধ পানিও
ইট-পাথর আর কংক্রিটের এই চট্টগ্রাম শহরে পাথরে ফুল ফোটানো অনেক ছাদবাগানির দেখা মিললেও কখনও চোখে পড়েনি লোহার ভেতর সবুজ বাগান। লোহাতে সবুজ বাগান— কথাটি শুনতে অবাক লাগলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এমনই এক বৃক্ষপ্রেমীর দেখা মিললো বন্দরনগরী চট্টগ্রামেই। যিনি সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ভেতর করেছেন স্বপ্নের সবুজ বাগান। শুধু তাই নয়, অটোরিক্সাটির ভেতর রেখেছেন চিকিৎসা উপকরণসহ যাত্রীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
বাতাসকে পরিশুদ্ধ রাখার জন্য সেই ২০১২ সাল থেকে অটোরিক্সায় বাগান করে শহরের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিলেটের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
৩৯ বছর বয়সী লোকটির কথায়— ‘আমাকে দেখে কেউ বলেন এই সিএনজিচালক আস্ত পাগল। কেউ বলেন বাহ্ চমৎকার আইডিয়া, চট্টগ্রামে তো কখনও এমন গাড়ি (অটোরিক্সা) দেখিনি! আর কেউ বলেন আপনার গাড়িতে উঠে মনে হচ্ছে সত্যিই আজকেই ধুলোবালিমুক্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেনই পাচ্ছি। এক বিদেশি আমার গাড়িটি দেখে সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিলেন। দিনশেষে যাওয়ার সময় ভাড়ার সঙ্গে ২ হাজার টাকা বকশিস দিয়ে আমার হাত ধরে বললেন `থ্যাংকস, আই গুড় গুড় অক্সিজেন’ (আই গট গুড অক্সিজেন!)।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের এক চিকিৎসক গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণ পর বলে ফেললেন— ‘ভাই আজকে স্ত্রী সঙ্গে ঝগড়া করে খুবই টেনশনে ছিলাম। আপনার গাড়ি দেখে সত্যিই টেনশন চলে গেল।’ তিনি ৫০০ টাকার একটি নোট দিয়ে বললেন, ১০০ টাকা ভাড়া হলেও আপনাকে ৫০০ টাকা দিলাম!
এভাবে অনেকে বখশিস দেন। আবার অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে সেলফি তোলেন। তবে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা।
কথার এক ফাঁকে জালাল বললেন, ‘দেখেন আমি গাড়ির ভেতর ৩৪ রকমের গাছ লাগিয়েছি। এর মধ্যে ৮ রকমের পাতা বাহার, গোলাপ, রক্তজবা, বেলি, দনিয়া, পুদিনা ইত্যাদি। এখানে বসলে আপনি শীতল বাতাস পাবেন, আপনার মনে হবে যেন কোনো বাগানে বসে আছেন। ধুলোবালি তো আপনার শরীরে স্পর্শ করতে পারবে না।’
অটোরিক্সাচালক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে সিএনজি অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। পরে দেখি অটোরিক্সায় উঠলে মানুষ অনেক বিপদে পড়েন। একদিন চিন্তা করলাম এই অল্প হায়াতে যদি মানুষের কিছু উপকার করতে পারি তাহলে পরকালে শান্তি পাবো। এ চিন্তা থেকে আমি বাগানের পাশাপাশি গাড়িতে রেখেছি প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামও।’
জালাল বলে যান— ‘মনে করেন কারও গাড়িতে উঠলে মাথাব্যাথা করে— এজন্য রেখেছি প্যারাসিটামল। শুধু প্যারাসিটামল নয়, রেখেছি নাপা, হিসটাসিন, গ্যাস্ট্রিকের সেকলোসহ কয়েক রকমের ওষুধ। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য রেখেছি বমির ওষুধ, বমি পরিস্কার করার জন্য টিস্যু পেপার। যাত্রীদের সুবিধার্থে রেখেছি ফ্যান, বিশুদ্ধ পানি, কলম, চিরুনি, খাতা, দিয়াশলাই, কাঠি, গামছাসহ ফায়ার সার্ভিসের জরুরি ফোন নম্বর। অনেকে মোবাইলে কথা বলে ফোন নম্বর লেখার কাগজ খোঁজেন তাদের জন্য কলম ও খাতা। হঠাৎ করে যদি কোথাও আগুন চোখে পড়ে সেজন্য রেখেছি ফায়ার সার্ভিসের জরুরি নম্বর।’
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জালাল বললেন, ‘আমার ইচ্ছা আছে পুরো গাড়িটিতে ঝিনুক বাতি লাগানোর। এছাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশের জরুরি ফোন নম্বর ও বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকের ফোন নম্বরও রাখবো। আমি খুবই গরিব মানুষ, খুব কষ্ট করে গাছসহ জিনিসগুলো কিনে নিয়েছি। গাছের জন্য অনেক দূর থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়। মাটিগুলো সহজে পাওয়া যায় না। এখন আমার গাড়ি দেখে এ শহরে আরও দুজন সিএনজিতে গাছ লাগিয়েছেন। মাননীয় মেয়র মহোদয় যদি আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে চট্টগ্রাম শহরে এরকম আরও অনেকে গাড়িতেই বাগান করবেন। কিছুটা হলেও চট্টগ্রাম শহরটা দুষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’ তথ্য সুত্র: চট্রগ্রাম প্রতিদিন
- চকরিয়াতে দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নামসর্বস্ব অবৈধ হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের নজরদারী নাই
- লামা বনবিভাগের মানিকপুর রিজার্ভে পাহাড়কাটার ধুম: নিরব প্রশাসন
- চকরিয়ায় বাড়ির পাশে ট্রেন দেখতে গিয়ে কাটাপড়ে কিশোরী মাদারাসা ছাত্রীর মৃত্যু
- চকরিয়ায় ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে দলছুট বন্যহাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
- চিরিংগা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মাহবুবুল হকের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে শ্রমিকদের মানববন
- চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ জেলের মরদেহ ১৯ ঘন্টা পর উদ্ধার
- চকরিয়ায় সাড়ে ৫ কেজি গাঁজাসহ পেশাদার মাদক কারবারি গ্রেফতার
- পুলিশের কাছ থেকে হাতকড়াসহ পালাল আসামি
- রামুতে ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান
- চকরিয়া ৩৪ বছরের চলাচলের রাস্তা দখলমুক্ত করলেন ইউএনও, খুশি এলাকাবাসী
- চকরিয়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তে পুড়ে ছাই ৫ বসতঘর, ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন
পাঠকের মতামত: