রফিকুল ইসলাম :: রোহিঙ্গা যুবতী সুফিয়া কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল মোটেল ও কটেজে রাতের গভীরে নাম, রূপ বদলে হয়ে যায় সাদিয়া। হোটেল কক্ষে দেশী বিদেশী আগস্তুক পর্যটকদের মনোরঞ্জন দিতে গিয়ে সাদিয়া ড্রাগ গ্রহণ করা সহ এমন কোন অপরাধ নেই যাতে সে জড়িয়ে পড়ছে না।
সাদিয়ার মতো শত শত রোহিঙ্গা যুবতী-কিশোরীরা স্বজাতি ও স্থানীয় দালালদের হাত ধরেই সর্বত্র দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। হয়ত আমরা জানি না রোহিঙ্গা সাদিয়াদের মধ্যে কি ভয়ংকর মরণব্যাধি রোগ লুকিয়ে আছে। সাদিয়া আক্তার মনি উখিয়ার কতুপালং রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের শরণার্থী রোহিঙ্গা। তার পরিবার আসে ১৯৯২ সালে। সাদিয়ার জম্মও এ ক্যাম্পে। ক্যাম্পের বহুগামী পরিবেশে তার বেড়ে উঠা।
সে বেশ কয়েক বছর আগে কক্সবাজার শহর কেন্দ্রীক পেশাদার যৌনকর্মীতে নাম লেখায়। সাদিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সুন্দরি মেয়েদের কে তাদের মা বাবার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে যায়। এরপর পতিতাবৃত্তি কাজে ব্যবহার করে বলে রোহিঙ্গারা জানায়। পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি সাদিয়ারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে দেয়ার খবর পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার হার ক্রমশঃ বাড়ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে দেশীয় ও রোহিঙ্গা দালাল চক্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ সারাদেশে সক্রিয় এ চক্রটি?ঠিক কতজন রোহিঙ্গা নারী যৌন ব্যবসায় জড়িত রয়েছে তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও তাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা কিশোর কিশোরী ও তরুণীদের দেহ ব্যবসা বাড়ার কারণ হলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প সুরক্ষিত নয়? আর ক্যাম্পের মধ্যেই যৌন ব্যবসার দালালদের নেটওয়ার্ক? কক্সবাজার এলাকার হোটেল ছাড়াও দালালরা যৌন ব্যবসার জন্য বাসা ও বিভিন্ন রেস্ট হাউজও ব্যবহার করে?
উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল মনসুর অবশ্য দাবি করেন, রোহিঙ্গা নারীরা যে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে সে তথ্য আমাদের কাছে নেই? তবে ক্যাম্পের ভিতরে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে এমন অভিযোগ আমরা পাই?’ গত অক্টোবর পর্যন্ত উখিয়া থানায় ২৮ টি রোহিঙ্গা ধর্ষণ ও এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। যৌন ব্যবসার ব্যাপারে পুলিশের নজরদারি আছে বলে জানান তিনি?
এছাড়াও এধরনের অধিকাংশ ঘটনা ক্যাম্পে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হয়ে যায় বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানান। যেসব শরণার্থী কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন কিংবা বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারে যাঁদের বসবাস, তাঁদের অনেকে শুদ্ধ বাংলা বলতে পারে? তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ, সংস্কৃতি অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে যায়। অনেক রোহিঙ্গা আসল ও জাল বাংলাদেশী জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র বহন করে থাকে। ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ এড়ানোর মতো ভাষা অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর পক্ষে বলা সম্ভব?
আর শুধু কক্সবাজারই নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের আশেপাশের জঙ্গলে, পাহাড়ে, স্থানীয় ভাড়া বাসা, ক্যাম্পের সেডেও দেহব্যবসা চলে বলে জানিয়েছেন একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী? অনেকে সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন? কারণ মিয়ানমার থাকতে রোহিঙ্গা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের অধীন ছিল। এখানে একেক ব্লকে বিভিন্ন এলাকার রোহিঙ্গার অবস্থান। কেউ কাউকে মানে না বলে জানান রোহিঙ্গা নেতা মাষ্টার নুরুল আলম। অনেক রোহিঙ্গা জানান, কারো কারো কাছে নগদ টাকা আয়ের অন্যতম উৎস এটি?
গত ১০ মে ঢাকার খিলক্ষেতের একটি বাসা থেকে ডিবি পুলিশ ২৫ জন রোহিঙ্গা কিশোরীকে উদ্ধার করে। ১২ মে ইনানী থেকে ১৭ জন রোহিঙ্গা নারীকে পুলিশ উদ্ধার করে। ১৪মে উদ্ধার করা হয় ১৭ জন নারীকে? গত জুন মাসে কক্সবাজার থেকে পাচারের সময় অন্তত ২১ জন নারীকে উদ্ধার করা হয়। গত ২০ জুলাই ঢাকা থেকে দুই রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করে র্যাব? শুধু কক্সবাজার নয়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সহ বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও রোহিঙ্গা নারীদের উদ্ধার করা হচ্ছে?উদ্ধারের পর তাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়?
কক্সবাজারে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে ‘নোঙর’ নামে একটি স্থানীয় এনজিও? প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ সম্প্রতি একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় দালাল চক্র ছাড়াও আগেই বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে এ গোষ্ঠিটির নারীদের নানা উপায়ে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করছে? হতদরিদ্র অবস্থার সুযোগ নিয়ে এ কাজ করছে তারা? অনেক রোহিঙ্গা নারী এখানে আসার পর ক্যাম্পের বাইরে থেকেই তাদের যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়? তাদের শুধু কক্সবাজার এলাকায় নয় দেশের অন্যান্য এলাকায় পরিচয় পাল্টে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে?
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কারো কারো এইচআইভি সংক্রমণ রয়েছে? গত কয়েকদিন আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অন্তত পাঁচ হাজার এইচআইভি পজেটিভ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে রয়েছে? দেহব্যবসার মাধ্যমে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যদি বাংলাদেশিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা হবে ভয়ানক এক ব্যাপার। তাই এই বিষয়ে আরো সতর্কতা জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গ।
কারণ কক্সবাজার একদিকে পর্যটন প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিতি হওয়ায় এখানে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ দেশী বিদেশী ভ্রমনার্থী বেড়াতে আসেন। উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ১২ লক্ষ মিয়ানমার রোহিঙ্গার অবস্থান। সে সুবাদে রোহিঙ্গা কার্যক্রমে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত রয়েছেন বেশ কয়েক হাজর দেশী বিদেশী সেবা কর্মী। আর রোহিঙ্গাদের মাঝে বাড়ছে এইচআইভি- এইডসসহ নানা রোগের।
কক্সবাজারে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩৬৩ জনের দেহে এইচআইভি পজেটিভ বা এইডস জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে হিজড়াও রয়েছে একজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিল্ড কো- অর্ডিনেটর সাঈদ রুহুল ইসলাম, এইডস নিয়ে কাজ করা এমএসএফ এর কমিউনিকেশন কর্মকর্তা তারিক আদনান অবশ্য এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে অপারগতা জানান।
মিয়ানমারের জনসংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখের মধ্যে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে বসবাসকারী ২ লাখ ৩০ হাজার বলে তথ্য আছে জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের কাছে। এ হিসাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এইচআইভি বা এইডস নিয়ে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মান্নান জানান, আক্রান্ত ৩৬৩ জনের মধ্যে ১২২ পুরুষ, ১৯৫জন নারী, ছেলে শিশু ২৪জন, কন্যাশিশু ২১জন ও একজন হিজড়া জনগোষ্ঠীভুক্ত। মৃত্যুবরণকারী ১৬ জনের মধ্যে ৭ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন কন্যাশিশু। তিনি বলেন, কক্সবাজারে যেহেতু স্বীকৃত কোন যৌনকর্মী নেই সেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।
তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যে হারে এইডস রোগ সনাক্ত হচ্ছে সে অনুযায়ী এইডস অবশ্যই কক্সবাজার সহ সারাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান। রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের এইচআইভি/এইডসের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রকাশ:
২০১৯-১২-০২ ১১:১৩:৩৫
আপডেট:২০১৯-১২-০২ ১১:১৩:৩৫
- ঈদগাঁও উপজেলার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর-জেলা প্রশাসক
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি জীপ গাড়ি ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংর্ঘষে আরোহী যুবক নিহত
- সেলিম-শফির খুনীদের এলাকায় ডুকতে দেয়া হবে না
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
- সরকার বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান সুযোগসহ নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন
- চকরিয়ায় মানিকপুরে চৌকিদারসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর নতুন ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ
- বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ
- চকরিয়ায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি, ৪ হাজার ৮শত পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
- চকরিয়া শাউউবি-২০০০ ব্যাচের বন্ধু ও পারিবারিক মিলিয়ন মেলা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় জমি বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ ৬ জন আহত
- চকরিয়ায় জমি বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ ৬ জন আহত
- চকরিয়ায় মানিকপুরে চৌকিদারসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা
- চকরিয়া শাউউবি-২০০০ ব্যাচের বন্ধু ও পারিবারিক মিলিয়ন মেলা অনুষ্ঠিত
- চকরিয়ায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি, ৪ হাজার ৮শত পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
- বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ
- সরকার বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান সুযোগসহ নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধুর নতুন ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ
- চকরিয়া মানিকপুরে সন্ত্রাসী হামলায় আহত চৌকিদার শফিউলের মৃত্যু
- ঈদগাঁও উপজেলার ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর-জেলা প্রশাসক
- সেলিম-শফির খুনীদের এলাকায় ডুকতে দেয়া হবে না
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি জীপ গাড়ি ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংর্ঘষে আরোহী যুবক নিহত
পাঠকের মতামত: