ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

জেলা কিন্ডারগার্টেন বৃত্তির নামে রমরমা বাণিজ্য

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার :: একটি কয়েক পাতার ফটোকপি বই পড়লে সহজে পাওয়া যাবে বৃত্তি। দাম মাত্র ১’শ টাকা। নি¤œমানের কাগজ দিয়ে ছাপানো বইটি লেখা হয়েছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অধ্যয়নরত প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার্থীর জন্য। কোন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবেনা, পাওয়া যাবে কক্সবাজারের বিভিন্ন নির্দিষ্ট কেজি স্কুলের অধ্যক্ষদের কাছে। অধ্যক্ষদের কাছে পাওয়া যাওয়ার কারণ- বইটি বিক্রির ৪০ টাকা পাবেন অধ্যক্ষগণ আর বৃত্তির আয়োজক কমিটি পাবে ৬০ টাকা। আর প্রতি পরীক্ষার্থী ফরম বাবদ ২৫০ টাকা, সিলেবাস ২০ টাকা দিয়ে কিনে বৃত্তিতে অংশ নিলেই মিলবে শিক্ষার্থীর বৃত্তি। যে কেউ চাইলে এ ধরনের বৃত্তির আয়োজন করতে পারবে কেননা এ শিক্ষা বাণিজ্যের জন্য দরকার হয়না সরকারি কোন অনুমোদন, দরকার পড়েনা রেজিষ্ট্রেশনের। এ বাস্তবতা বলে দেয় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা নাজুক, কতটা প্রশাসনের নজরদারিবিহীন।

শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের নতুন সংস্করণ চালু করেছে কক্সবাজারে জেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশন নামের অনিবন্ধিত একটি সংগঠন। এটির কার্যালয় শহরের কৃষি অফিস সড়কের এআরসি টাওয়ারের ২য় তলায় যেটি একটি হার্বাল ওষুধের কার্যালয়। জেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক শ্রেণির শিক্ষা ব্যবসায়ি বেসরকারি কেজি স্কুলের কতিপয় অধ্যক্ষদের সাথে মোটা অংকের টাকায় বৃত্তি পরীক্ষা নামের নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার পর যেখানে বেড়ানোর কথা সেখানে বৃত্তির জালে আটকে রেখে কিছু অভিভাবক প্রলুব্ধ হয়ে এ বৃত্তির ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। বৃত্তি পরীক্ষার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আনন্দ মাটি করে মানসিক রোগাক্রান্ত একশ্রেণির অসচেতন অভিভাবক।

শহরের কয়েকজন অভিভাবক, সচেতন মহলের অভিযোগ মতে, জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বৃত্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেল ১ মাসে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। আগামি ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর ২৭টি কেজি স্কুলের প্রায় ৭’শ শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছে বলে জানা গেছে। পরীক্ষার সময় পিছিয়ে যেতে পারে যদি কক্সবাজার সরকারি দুই উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উক্ত তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভাব্য বৃত্তি পরীক্ষার ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট। এ দু’ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০০ জন। প্রতিজন পরীক্ষার্থীর কাছে ফরম বাবৎ ২৫০ টাকা করে ৭শ জনের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১লাখ ৭৭ হাজার ৫শ টাকা। মাত্র ৭ পাাতার ফটোকপি কাগজ বাবৎ যেটিকে বৃত্তির বই হিসাবে চালিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে নেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার টাকা, সিলেবাস বিক্রি বাবৎ ৭শ জনের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২শ টাকা। অভিভাবকদের বোকা বানিয়ে সরকারি অনুমোদনবিহীন নাম সর্বস্ব সার্টিফিকেট দিয়ে যৎসামান্য টাকা ধরিয়ে দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ শিক্ষা বাণিজ্যকারিদের বিরুদ্ধে জেলাবাসির এখন সময় হয়েছে প্রতিবাদ করার।

বৃত্তির আয়োজক জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বৃত্তি পরীক্ষা আমরা অনেক দিন যাবৎ আয়োজন করে আসছি। কক্সবাজার শহর ছাড়াও রামু, টেকনাফ, হ্নীলা, উখিয়ায় ও এ বৃত্তির আয়োজন করা হয়েছে। প্রশাসনের অনুমোদন ও সংগঠনটির নিবন্ধন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জানিয়েছেন বলে জানান। ৭ পৃষ্ঠার ফটোকপি কাগজের দাম ১শ টাকা যা পড়লে বৃত্তির নিশ্চয়তা রয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন- আমরা বইতে দাম ১শ টাকা লিখেছি এটা সত্য তবে যেসব স্কুলে দেওয়া হয়েছে সে সব কেজি স্কুলের অধ্যক্ষদের কমিশন ৬০ টাকা করে দেওয়ার কথা রয়েছে। কাউকে জোর করে তা বিক্রি করা হচ্ছেনা বলে তিনি জানান।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক জানান, গত বছর বৃত্তি পরীক্ষার জন্য দেওয়া এডমিট কার্ডে যে মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছিল তার প্রথমটা ভুল। কোন নীতিমালা না থাকায় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বৃত্তির নামে ভাল ব্যবসা চালু করেছে অসাধু চক্র দাবি উক্ত অভিভাবকের।

এদিকে এ বৃত্তি চালুর বিষয়ে আইনগত কোন সমস্যা কিংবা বিধিমালা আছে কিনা জানার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিউল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন- কেজি স্কুল আমাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান নয়, তারা শুধু আমাদের কাছে বই এর জন্য আবেদন করেন। বৃত্তি চালুর বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবনা কেননা জেলা প্রশাসন যদি অনুমতি দেয় তাহলে হয়ত আয়োজন করা যাবে। জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বৃত্তি চালুর অনুমতির জন্য আবেদন করার বিষয়ে ডিপিইও বলেন- আমার কাছে কেউ অনুমতির জন্য আবেদন করেননি। আপনাদের কাছে যে আবেদন করেছেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। অনুমতি আমার এখতিয়ারের পর্যায়ে পড়েনা। এটি দিলে জেলা প্রশাসক মহোদয় দিতে পারেন।

এদিকে জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন কর্তৃক বৃত্তির আয়োজনের অনুমোদন বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মোঃ আমিন আল পারভেজ বলেন, আমরা কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে বৃত্তি আয়োজনের অনুমতি দেইনি। কেউ আমাদের অনুমতি ছাড়া বৃত্তির আয়োজন করলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি ফটোকপি করা বই ১০০ টাকা তা কোন ভাবে কাম্য নয়। শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে বানিজ্যকরণকারীদের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি। বৃত্তির নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং নাম সর্বস্ব বৃত্তির নামে মোটা অংকের বাণিজ্যকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন অভিভাবকগণ।

পাঠকের মতামত: