ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

নিম্নমানের বীজ বিতরণে এনজিও মুক্তি বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ, লাল তীরেও ভেজাল!

ফারুক আহমদ, উখিয়া :: উখিয়ায় হোষ্ট কমিউনিটিতে৷ বীজ বিতরণের নামে ভালো কোম্পানির মোড়কে নিম্নমানের বীজ ঢুকিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে কতিপয় এনজিও সংস্থা।
বসতবাড়িতে সবজি খামার করার জন্য চাষীদের মাঝে বিভিন্ন বীজ সরবরাহের নামে দাতা সংস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে এনজিও সংস্থাগুলো। আর এ সুযোগে নামেমাত্র নিম্নমানের বীজ বিতরণ করে মুক্তি কক্সবাজার নামক এনজিও সংস্থা কৃষকের সাথে প্রতারণা করছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মুক্তি কক্সবাজার এনজিও সংস্থার বিপণন কর্মকর্তা রনির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি হোষ্ট কমিউনিটিতে বীজ বিতরণের কথা সত্যতা স্বীকার করে বলেন মাঠ পর্যায়ে নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতেছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য উন্নয়ন সংস্থা( ফাও) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ( আইওএম) এবং আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর নিকট হতে বিপুল পরিমান অর্থ সংগ্রহ করেন।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কৃষিক্ষেত্রে মানোন্নয়নে মুক্তি কক্সবাজার নামক এনজিও সংস্থা সহ কয়েকটি এনজিও সংস্থাকে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেয়। উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বীজ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু গ্রহণ করা হয়।।উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার তহবিল সংগ্রহ করে এসব এনজিও সংস্থা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ অফিস সূত্রে জানা যায়, মুক্তি, সুশীলন, বিজিএস ও ওয়াল্ড ভিশন সহ দশ-বারোটি এনজিও সংস্থা। বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে কৃষক ও বাড়িওয়ালাদের কে নানা ধরনের বীজ বিতরণ করছেন বলে কৃষি অফিসকে অভিহিত করে। তবে এ ক্ষেত্রে সব দায় দায়িত্ব এনজিও সংস্থার। সরকারি কৃষি অফিসের কোন কর্তৃত্ব বা ভূমিকা নেই।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ আরো জানান বিতরনকৃত বীজ সমূহ নিম্নমানের হওয়ায় সঠিকভাবে গজায় না এবং ফলনও আশানুরূপ নয়। এ সব উপসী জাতের বীজ দিয়ে চাষাবাদ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে গ্রামের সাধারণ কৃষকগণ তাদেরকে জানিয়েছেন।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, লালশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, দেড়শ, সিম, বরবটি, বেগুন, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি সহ ইত্যাদি বাীজ সবজি ক্ষেতের চাষ করার জন্য বিতরণ করছে এনজিওগুলো।আর এসব বীজ ক্রয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা অর্থ যোগান দিচ্ছে দাতা সংস্থা।
গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মুক্তি কক্সবাজার নামক এনজিও সংস্থা রাজাপালং ইউনিয়ন চাষীদের মাঝে বীজ বিতরণের নামে নিম্ন মানের বীজ ক্রয় সহ ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ লুটপাট করছে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের মালিয়ারকূল নামক গ্রামে চাষীদের মাঝে তিত করলা বীজগুলো নিম্নমানের বিতরণ করা হচ্ছে।
অনেক গ্রামবাসী জানান লাল তীর কোম্পানীর মোড়কে নিম্নমানের বীজ ঢুকিয়ে দিয়ে সরবরাহ করছে। আর এসব প্যাকেটের বীজ দিয়ে সবজি ক্ষেত করলেও চারা বা অংকুর গজায়না।
এ ব্যাপারে লাল তীর কোম্পানীর টি এম সাইফুল ইসলাম জানান এনজিও মুক্তি কতৃক বিতরণকৃত বীজের প্যাকেট লাল তীর কোম্পানীর হলেও তা পরীক্ষা করে দেখা গেছে সবই ভেজাল। তা এক প্রকার কৃষকের সাথে প্রতারণা।
তিনি আরও বলেন, বিতরণকৃত প্যাকেটে বারকোড থাকলেও তা লাল তীর কোম্পানি শো করে না। এতে বোঝা যায় এনজিওগুলো ভালো কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে ভিতরে নিম্নমানের বীজ প্যাকেটজাত করেছে।
লাল তীর কোম্পানি উখিয়া পরিবেশক মোহাম্মদ শফির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান প্রতিদিন কৃষক ও চাষীরা দোকানে এসে অভিযোগ করে বলেন এনজিওদের বিতরণকৃত বীজগুলো সঠিকভাবে গজায়না।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে লাল তীর কোম্পানীর টি এম সাইফুল ইসলাম ও পরিবেশ মোহাম্মদ শফি রাজাপালং এর মালিয়ারকূল গ্রামে গিয়ে বিতরণকৃত লাল তীর কোম্পানীর তিত করলা বীজের প্যাকেট
সনাক্ত করে দেখতে পায় এখানে লাল তীরের নামে নকল মোড়ক ব্যবহার করা হয়েছে।
অনেক চাষি অভিযোগ করে বলেন, এনজিওদের বীজ দিয়ে সবজি ক্ষেত করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা। জমি ব্যবহার, শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।
উখিয়া কৃষি অফিসের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন এনজিওদের বিতরণকৃত দেড়শ, বেগুন ও তিত করলার বীজ ব্যবহার করে স্থানীয় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা জেনেছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মুক্তি কক্সবাজার এনজিও সংস্থার বিপণন কর্মকর্তা রনি সাংবাদিকদের বলেন আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বীজ ক্রয় করে তা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করছি। নিম্নমানের বীজ বিতরণ করা হয়না। এরপরও চাষীদের পক্ষ থেকে যেহেতু অভিযোগ এসেছে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান হোষ্ট কমিউনিটিতে বীজ বিতরণের নামে নিম্নমানের বীজ ক্রয় করে এনজিওগুলো লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করছে। বিতরণকৃত বীজ গুলো মাটিতে গজালে অঙ্কুর উৎপাদন হয় না। মূলত ভালো কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে এনজিওগুলো নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করছে। এ বিষয়ে তিনি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেছেন।

পাঠকের মতামত: