ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারে চরম হতাশা নিয়ে লবণ মাঠে চাষীরা!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁহ, কক্সবাজার :: পাইকারি বাজারে বর্তমানে লবণের কেজি ৫ টাকার কম হওয়ায় কক্সবাজার সদরের উপকুলের লবণ চাষিদের দুর্দিন চলছে। অনেকে গত বছরের মজুদ করা লবণ বিক্রি করেন নি কাংখিত দাম না পাওয়ায়। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে লবণ চাষিরা চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে কাজ শুরু করেছেন। সদরের উপকূলে এখন চলছে লবণ উৎপাদনের মৌসুম। চিংড়ি ঘের গুঁটিয়ে বর্তমানে ওখানকার লবণ চাষীরা পুরোধমে লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছেন। লবণ চাষীরা দিনের পুরোটাই সময় ব্যয় করছেন এখন লবণ মাঠে উৎপাদনের কাজে।

সদর উপজেলার খুরুস্কুল, ভারুয়াখালি, চৌফলদন্ডি, পোকখালী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও এখানকার প্রায় কয়েক হাজার লবণ চাষী লবণ উৎপাদনের কাজে নেমেছেন। কিন্তু ন্যায্যমূল্যে লবণ বিক্রি না হওয়ার ফলে এখানকার চাষীরা লবণ উৎপাদনে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। এরপরও বাপ-দাদার পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সকাল থেকে সন্ধা অবধি লবণ মাঠ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বিগত দিনের মত উপকূলের অনেক আবাদী জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায়।

অপরদিকে লবণের দাম কম হওয়ায় চাষীদের মুখে হাসির ঝলকও দেখা দিচ্ছে না। বলতে গেলে চাষিদের নিরব কান্নার সুর বয়ে যাচ্ছে।

যদি শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে উপকূলীয় কয়েক সহস্রাধিক লবণ চাষী পরিশ্রমের সুফল না পেয়ে এবারও পথে বসবে।

বর্তমানে সরকার লবণ চাষীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানী বন্ধ করে দিলেও চাষীরা একটি সিন্ডিকেটের কারণে দাম পাচ্ছেন না। সদরের উল্লেখিত ইউনিয়নের উৎপাদিত লবণগুলো ইসলামপুর শিল্প এলাকায় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে রপ্তানী হয়ে থাকে।

বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) উপকূলীয় চৌফলদন্ডি, গোমাতলী এলাকায় তাদের নিজস্ব তদারকির মাধ্যমে লবণ উৎপাদন করে থাকে।

উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার লবণ চাষী সাইফুদ্দিন বলেন, দাম কম হওয়ায় আমরা হতাশায় নিমজ্জিত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, চাষিদের দুঃখ বিবেচনা করে লবণের দাম বাড়ানো হোক। কারন লবণ চাষ গোমাতলীর ৮০% মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।

ইসলামপুরের লবণ ব্যবসায়ী হারুনর রশিদ বলেন, সদরে যে লবণ উৎপাদন হয় তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বাহিরেও রপ্তানী করতে পারবে। কিন্তু কিছু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বাহির থেকে লবণ আমদানি করে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। বর্তমান সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করায় বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক লবণ চাষী ন্যায্যমূল্য ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য পাবে এই আশায় লবণ মাঠে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

সরকার যদি উপকূলে উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানীতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশি উপকৃত হবে এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে আরো বেশি মনোযোগী হবেন এমনটি প্রত্যাশা উপকূলীয় ইউনিয়নের কয়েক হাজার লবণ চাষীদের।

পাঠকের মতামত: