ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া, পেকুয়া ও লামার পাহাড় জুড়ে ৩৬ ইটভাটার কার্যক্রম শুরু, গাছ নিধন ও পাহাড় কর্তনে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়

মনির আহমদ, নিজস্ব প্রতিবেদক :: চকরিয়া ও অবিচ্ছিন্ন পেকুয়া ও লামার পাহাড় জুড়ে ৩৬ ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।এমনিতেই ইটভাটার গাছ নিধন ও অব্যাহত পাহাড় কর্তনের ফলে পাহাড়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অরন্যভেদ করে গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটার কাঁচামালের যোগান দিতে চলছে পাহাড় কাটা ও বন উজাড়।
ইটভাটার কারনে আবাসস্থল হারিয়ে গ্রামের দিকে ছুটছে হাতির পাল।হাতি তাড়াতে আসা সরকারী বেসরকারী দ্বায়ীত্ববানদের মুখ থেকে জানা গেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ, লামা বনবিভাগ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সঙ্গমস্থল চকরিয়া-লামা-পেকুয়া উপজেলার রিজার্ভ ও তৎসংলগ্ন বনভূমি এলাকায় রয়েছে সেগুন, গর্জন সহ নানান প্রজাতির গাছের রির্জাভ বাগান। বনরেঞ্জের রিজার্ভ ও তৎসংলগ্ন পাহাড়ের মাটি ও রিজার্ভ এলাকার গাছের উপর নির্ভর করে চকরিয়া,পেকুয়া ও লামায় পাহাড়ে গড়ে উঠেছে ৩৬ টি ইটভাটা। অরন্যের গহীনে গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটায় সমান তালে পাহাড় কাটছে অর্ধশতাধীক স্কেভেটর। অবিচ্ছিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী বনদস্যু সংশ্লিষ্ট বনকর্মীর সহযোগীতায় ভূঁয়া টিপি তৈয়ার করে গাছ লুট করে লাকড়ী সরবরাহ করে এ সব ইটভাটায়।

রিজার্ভ এলাকার গাছের উপর নির্ভরশীল অরন্যভেদ করে গড়ে তোলা ৩৬ এর অধিক অবৈধ ইটভাটা মালিকের উৎসাহে লাকড়ীর যোগান দিতে বন উজাড় করছে বনদস্যুরা। চলছে আগুন দেয়ার প্রস্তুতি ও। ইটভাটায় পাহাড় কাটার স্কেভেটর- বুল ডোজারের গগনভেদী আওয়াজ ও অব্যাহত গাছ নিধন এর ফলে আবাসস্থল হারিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বনের পশু-পাখি।

নিজেদের আবাসস্থল ও খাদ্যভান্ডার হারিয়ে মানুষের আবাসস্থলের দিকে ছুটে যাওয়ায় হাতির লোভনীয় মুল্যবান দাতের দিকে নজর পড়ে বনদস্যুদের।এতে গত এক মাসে নিহত হয়েছে দুইটি হাতি। এ ছাড়া ও প্রতিনিয়ত অতিথি পাখি, হরিণ ও মারা পড়ছে শিকারীর হাতে।

পাহাড়ী জনপদের লোকজন জানান, চকরিয়ার অবিচ্ছিন্ন পেকুয়া ও লামার পাহাড় জুড়ে ৩৬ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রিজার্ভ বনের গাছ চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ইটভাটার কারনে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কতিপয় বন রক্ষক এদের প্রকাশ্য সহযোগী। লাকড়ীর ঠিকানা ইটভাটায় হলে ও চোরাই সেগুন ও মাদার ট্রি গর্জন কাটের অবৈধ হাট লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী গুলিস্থান বাজার, চকরিয়ার ভাঙ্গারমুখ বাজার ও পেকুয়া-বাঁশখালী সীমানার আরবশাহ বাজার এবং বদরখালী বাজার ।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বনবিভাগ ও আইন শৃংখলা বাহীনিকে মাসিক উৎকোচ দিয়ে খোলাবাজারে ওই সব কাঠ চড়াদামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। লুট হওয়া গাছ বনপরীক্ষন ফাঁড়ির সামনে দিয়ে বের হচ্ছে মোটা অংকের টাকায়। বের করার সময় জোত পরমিট নামের ভুঁয়া টিপি তৈয়ার করে দিচ্ছে বন-বিভিাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ বন-কর্মকর্তা।অভিযোগ রয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে তৈয়ার করা এ টিপি’র কাজ শুধু ’আই ওয়াশের’ জন্য। বাকি কাজ হয়, বিকাশে টাকার বিনিময়ে।বন কর্মিদের সংশ্লিষ্টতার কারনে প্রকাশ্য গাছ লুট হচ্ছে।

এলাকার সচেতন মহল জানায়, বনবিভাগের এসব রেঞ্জের বন উজাড়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বনবিভাগের কতিপয় বনকর্মি। ওই সব বন কর্মিরা কাট চোরদের শিখিয়ে দেয় কাট পাচারের কৌশল। কৌশলী দূর্নীতিবাজ বনকর্মিরাই বনের শত্রু“।
তাদের সহযোগীতায় গাছ পাচার নিরাপদ করে তুলেছে বনদস্যু সিন্ডিকেট।এতে বিপন্ন হয়ে উঠেছে বন্য প্রাণীর জীবন। অব্যাহত পরিবেশ ধ্বংশ হলে ও পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে নিরব। তাই সচেতন মহল এ ব্যাপারে মামননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: