ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কে হবেন জামায়াতের সেক্রেটারি, আলোচনায় মহেশখালীর হামিদ

এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
যুুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচনের পর আলোচনা সেক্রেটারি জেনারেল নিয়ে। ১২ নভেম্বর প্রকাশ হওয়া দলের ‘রোকন’ ক্যাডারদের গোপন ভোটের ফলাফলে ডা. শফিকুর রহমান আমির নির্বাচিত হয়েছেন। ডা. শফিক বর্তমান কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি আমির হিসেবে শপথ নেবেন ডিসেম্বরে। কে হবেন ডা. শফিকের অধীনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল এখন আলোচনার বিষয়। অন্যান্য নেতাদের পাশাপাশি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনের সাবেক সাংসদ এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের নামও আছে আলোচনায়। সাবেক এই সাংসদ মকবুল-শফিক কমিটির সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারাধীন বিষয়ে অবমাননাকর বক্তব্য ও দেশে ‘গৃহযুদ্ধ’র হুমকি দেওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৯ জুন হামিদুর রহমান আযাদসহ তিন জামায়াত নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং তিন হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই সপ্তাহের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নীরবে নেতা নির্বাচনে দেশের রাজনীতিতে জামায়াত এতদিন একটা উদাহরণ হলেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে তাদের গায়েও। একসময় পদের প্রতি নির্মোহ থেকে নেতারা দায়িত্ব পালন করতেন বলে প্রচার আছে। তবে এখন প্রকাশ্যেই কে কোন পদে আসতে চান তাও প্রচার হয়। নিজে না করলেও নিজের ঠিক করা লোকবল দিয়ে প্রচার করা হয়। এর ওপর আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাব এখন জামায়াতের মধ্যে স্পষ্ট। জামায়াতের অভ্যন্তরে আলোচনা হচ্ছে মকবুল আহমদই জামায়াতের শেষ নেতা— যারা পদের প্রতি নির্মোহ ছিলেন।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজামী-মুজাহিদের ফাঁসির পর জামায়াতের দুই নেতা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেয়ে স্বেচ্ছায় না ছাড়ার নজির সৃষ্টি হয়েছে। মকবুল আহমেদ গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত আমির হন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি গ্রেপ্তার হলে মাওলানা শামসুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান গ্রেপ্তার হলে রফিকুল ইসলাম খানকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি করা হয়েছিল। কিন্তু দুবারই মুজিব ও শফিক কারামুক্ত হলে ভারপ্রাপ্তরা দায়িত্ব ছাড়েননি স্বেচ্ছায়। মকবুল আহমেদকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।

জামায়াতের চট্টগ্রাম নগর শাখার এক রোকন জানান, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা গঠিত হওয়ার পর সেক্রেটারি জেনারেল ঠিক করা হবে। নভেম্বরের মধ্যেই মজলিশে শুরা গঠন প্রক্রিয়া চলছে। মজলিশ শুরা গঠন হলে শুরা ঠিক করবে কর্মপরিষদ বা নির্বাহী পরিষদ। তারপর মূল পদগুলোর নেতা ঠিক হবে। এরপর ডিসেম্বরে সবাই শপথ গ্রহণ করবেন।’

জামায়াতের পেশাজীবী এক নেতা জানান, ‘মজলিশে শুরা গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সারা দেশে ভোট গ্রহণ করছে। দলের আমির সেক্রেটারি ঠিক করার জন্য মজলিশে শুরার সদস্যদের সাথে আলোচনা করবেন। তবে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি শুরার সদস্যের মতামত নিলেও সেই মতামতই কার্যকর করতে তিনি বাধ্য নন। এক্ষেত্রে তিনি চাইলে তার পছন্দের ব্যক্তিকেও সেক্রেটারির দায়িত্ব দিতে পারবেন।’

চট্টগ্রাম নগরের এক নেতা জানান, ‘জামায়াতের আমিরই সব। সেক্রেটারি যিনি হবেন তাকে অবশ্যই আমিরের শতভাগ অনুগত হতে হবে। আমির শুরা সদস্যদের সামনে সেক্রেটারির নাম প্রস্তাব করবেন। শুরা সদস্যরা একমত হলে ভালো। না হলে আমিরই ঠিক করবেন কে হবেন সেক্রেটারি জেনারেল।’

দলের গঠনতন্ত্রে পাঁচ জন নায়েবে আমির এবং তিন জন সহকারি সেক্রেটারির পদ রয়েছে। বর্তমান কমিটির পাঁচ নায়েবে আমিরের একজন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম। মকবুল আহমদ, ডা. শফিকুর রহমান, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছু দিন ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাবেক এই সাংসদ। তবে তার আর বড় পদে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানান জামায়াতের নেতারা। তাকে এবারও নায়েবে আমিরের পদে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

জামায়াত সম্পৃক্তরা জানান, মকবুল-শফিক কমিটিতে মাওলানা এটিএম মাছুম, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ সহকারি সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনজনের মধ্যে এটিএম মাসুম রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি একটা পরিচিত নয়, অভ্যন্তরীণ কাজেই মূলত পারদর্শী তিনি। রফিকুল ইসলাম খানের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার সুবাদে রাজশাহী অঞ্চল থেকে উঠে আসা নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। রফিকুল ইসলাম খানের সাথে ডা. শফিকুর রহমানের একটা স্নায়ুযুদ্ধ আছে আগে থেকে। সে হিসেবে হামিদুর রহমান আযাদ নিরাপদে আছেন। আযাদ হয়তো এবার সেই সুযোগ পেয়েও যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের অন্তত অর্ধডজন রোকন। তবে পথও কঠিন। আযাদকে সেক্রেটারি হিসেবে ‘রাজশাহী বলয়’ নাও মানতে পারে।

এক্ষেত্রে নায়েবে আমিরের পদ ছেড়ে মিয়া গোলাম পরোয়ারকে যদি সেক্রেটারি হতে রাজি করানো যায় তবে তিনিই সেক্রেটারি হবেন এটা নিশ্চিত। যদি এতেও সমাধান না হয় তবে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে সামনে আনতে হবে। ডা. তাহের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করা সুবাদে বর্হিবিশ্বে তার একটা পরিচিতি আছে। জামায়াত হয়তো সেটা কাজে লাগবে।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে জামায়াতের একটা অবস্থান ছিল। শিবিরের শীর্ষ পদে একাধিকজন আসীন হলেও জামায়াতের শীর্ষপদে কেউ কখনো দায়িত্ব পালন করেননি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের অধিকাংশের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমান নেতৃত্ব ৭১ পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে এসেছেন। তারা চেষ্টা করছেন ঘুরে দাঁড়াতে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়টা চট্টগ্রাম থেকে দলটির জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের কেউ শীর্ষ পদে আসার সুযোগ পায় কিনা সেটা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে মজলিশে শুরা নির্বাচন শেষও হওয়া পর্যন্ত।

২৯ নভেম্বর শুরা গঠন হবে। শুরা গঠন শেষে সেক্রেটারি মনোনয়ন। তারপর কর্মপরিষদ এবং নির্বাহী পরিষদ গঠন। সারা দেশে সাড়ে চার হাজার রোকন শুরা সদস্য নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। তবে পুরুষ রোকনরা শুধু পুরুষ সদস্য পদে ভোট দিচ্ছেন। নারী রোকনরা পুরুষ সদস্য নির্বাচনের পাশাপাশি মহিলা শুরা সদস্যও নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন বলে জানান দক্ষিণ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মোহাম্মদ ইসহাক।

পাঠকের মতামত: