ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চট্রগ্রামে যুগযুগ ধরে একই বিদ্যালয়ে অনেকে জড়িত কোচিং বাণিজ্যে

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি :: সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবার পর একেকজন ২৪, ২৭ ও ২৮ বছর পার করেছেন! কিন্তু ‘বদলির’ দুর্ভাগ্য তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। একই বিদ্যালয়ে যুগের পর যুগ চালিয়ে গেছেন সরকারি চাকরি। কোচিং বাণিজ্যের কারণেই চট্টগ্রামের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে এক প্রকার ‘জেঁকে’ বসেন বলে অভিযোগ অধিকাংশ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে রীতিমতো ‘মৌচাক’ তৈরি করে বছরের পর বছর একই প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে চাকরি করে যাওয়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বদলির মাধ্যমে এ মৌচাক ভাঙা শুরু করলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোসনে আরা বেগম।
গত ২০ জুলাই কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে আসা এ উপ-পরিচালক যোগদানের পরপরই একই কর্মস্থলে যুগযুগ ধরে শেকড় গেড়ে বসা শিক্ষকদের বদলি শুরু করেন। গত ১৫ দিনে তিনি সাত জেলায় ১৮ জনকে বদলি করেন। বদলি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়ে হোসনে আরা বেগম জানান, একই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৮ বছর পর্যন্ত একটানা চাকরি করছেন। এতে শেকড় গজিয়ে গেছে সংশ্লিষ্টদের। অনেকে আবার কোচিং বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। এ সংক্রান্তে ৪২ জন শিক্ষকের তালিকা ঢাকাস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে ইতোমধ্যে। অথচ সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, একই প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের বেশি চাকরি করা যায় না। প্রয়োজন অনুযায়ী তিন বছরের আগেও বদলি করা যায়। তিনি আরো বলেন, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় জেঁকে বসা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ‘মৌচাক’ ভাঙতে হাত দিয়েছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে চাকরি করে যাওয়া কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ জামালুদ্দিনকে বান্দরবানের লামায় বদলি করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বদলি করা হয়েছে একই স্কুলের আশীষ কুমার শীলকে। আনজুমান আরা বেগমকে (কলেজিয়েট থেকে) বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, এস এম আহমদ শফিকে পটিয়ায়, মোরশেদুজ জামানকে মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সন্দ্বীপে উত্তম কুমার বিশ্বাসকে, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অঞ্জন কুমার কংস বণিককে সীতাকুণ্ডে, ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমির হোসেনকে রাঙ্গামাটি সদরে ও একই স্কুল থেকে অনুপম দাশকে নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বান্দরবানের লামায় আজিজুল হক নিজামীকে, একই স্কুলের মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গোলাম মোস্তফা চৌধুরীকে পটিয়ায়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে, মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিজিত দাশ গুপ্তকে সন্দ্বীপে, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সুকুমার দাশকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুলে বদলি করা হয়েছে।

অপরদিকে বান্দরবানের লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী তাইতংপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আনোয়ারকে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ও লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোজাম্মেল হোসেনকে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। উল্লেখিতদের মধ্যে আজিজুল হক নিজামী একই প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর ধরে চাকরি করেছেন বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অদিদপ্তর থেকে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত: ফেনী, নোয়াখালী, কঙবাজার ও তিন পার্তব্য জেলা ও চট্টগ্রাম মিলে মোট সাত জেলায় ৫২টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০ শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ৯০০ জন। উল্লেখিত বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৯টির অবস্থান নগরীতে। এ বিষয়ে উপ-পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান, অদ্ভুত ব্যাপার। একেকজন শিক্ষক যুগের পর যুগ একই স্কুলে শেকড় গাঁড়ার পর সার্বিক শিক্ষায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। জন্ম হয়েছে অপ্রতিরোধ্য কোচিং বাণিজ্যের। যা সবারই জানা। এ বিষয়ে আমরা অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

পাঠকের মতামত: