ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কারাগার থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ

ডেস্ক রিপোর্ট ::  আত্মসমর্পন করা ইয়াবা গডফারদের অনেকেই কক্সবাজার কারাগারে বসে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছেন। তাদের নির্দেশনায় এখনও মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা। আর তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কারাগারের সুরক্ষিত পরিবেশে অনেকটা নির্বিঘেœ তারা এ অপকর্ম করছে। গতকাল জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমন মন্তব্য করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা।
তিনি বলেছেন, ‘ইয়াবা কারবারী গডফাদারদের অনেকেই এখন আত্মসমর্পন করে জেলে রয়েছেন। তারা সেখানে বসেই আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের ছড়িয়ে থাকা ইয়াবা কারবারীদের। শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।’ আইন প্রয়োগী কারী সংস্থাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখারও আহ্বান জানান তিনি।
এসময় সভায় উপস্থিত কারা তত্ত্বাবধায় মোকাম্মেল হোসেন বলেছেন, ‘বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বন্দী রয়েছে। তাদের অধিকাংশই ইয়াবা সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত। তাদের সাথে স্বাক্ষাৎ করার জন্য প্রতিদিন প্রচুর লোকজন আসেন। এত লোকজনের ভীড়ে ইয়াবা বা মাদক নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা কঠিন কাজ। এরপরও যে অভিযোগ এসেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে এবং কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও কঠোর করা হবে।’
এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ২৪ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় মাদক চোরাচালানের ‘গডফাদার’ হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। তাদের মধ্যে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির চার ভাইসহ অনেকেই আছেন।
সূত্রমতে, গত বছরের ৪ মে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক ইয়াবা কারবারী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন। তারপরও থেমে নেই ইয়াবার কারবার। সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে ইয়াবা। গত অক্টোবর মাসেও প্রায় ২২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও মাঠপর্যায়ে ইয়াবার চাহিদা কমেনি। বরং ইয়াবাসেবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরবরাহ রয়েছে আগের মতই। বেচাকেনা ও বহনে নতুন কৌশল গ্রহণ করছে কারবারি ও বাহকরা। নানাভাবেই ইয়াবা ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
কারা অভ্যন্তরের একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে বিশেষ কদর রয়েছে ইয়াবা কারবারীদের। কয়েদিদের মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভেতরে দায়িত্বরত কারারক্ষীদের সহায়তায় অনেক সময় মুঠোফোনে কথা বলেন বন্দীরা। এছাড়াও ইয়াবা কারবারী গডফাদারদের সাথে দেখা করতে আসেন তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেটের লোকজন। এতে কারাগারে নিরাপদ পরিবেশে থেকে ইয়াবার কারবার নিয়ন্ত্রনের অবাধ সুযোগ তৈরী হয়েছে। কিন্তু কারান্তরীণ থাকায় বরাবরই সন্দেহের বাইরে থাকছেন ইয়াবা গডফাদাররা।
সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া একজন প্রবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কারাগারের সর্বত্রই ইয়াবা কারবারীদের দৌরাত্ম। তারা টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে রাখেন। তাদের অবৈধ টাকার কাছে অন্যান্যরা অসহায়।’
গত ২ মে কক্সবাজারের তারাবনিয়াছড়া এলাকায় শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আবু তাহেরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। যদিও এরই মধ্যে সে আত্মসমর্পণ করে কক্সবাজারের কারাগারে রয়েছে। জেলখানায় বসেও তাহের তার ভাই আবু বকর ও হাছান মুরাদের মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।
সম্প্রতি কক্সবাজার কারাগারের বিষয়ে অনুসন্ধানে এসে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমান পান দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ছিল খাবার ক্যান্টিনে নানা অনিয়ম, মেডিকেলে অধিকাংশ ইয়াবা ব্যবসায়ীর অবস্থান এবং একটি নির্দিষ্ট সেলে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির চার ভাই ও এক আত্মীয়ের থাকা। এসব অভিযোগ উঠার পরপরই বদলী করা হয় সাবেক কারা তত্ত্বাবধায়ক মো: বজলুর রশীদ আখন্দ ও ডেপুটি জেলার অর্পণ চৌধুরীকে।

পাঠকের মতামত: