ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লামায় বন্য হাতির কয়েক দফা তান্ডবে নিঃস্ব হলেন কৃষক

মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া :: “সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।” কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।

লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে কয়েক দফায় তান্ডব চালিয়ে অসহায় কৃষকের দুই একর সবজি ক্ষেত বিনষ্ট করে দিয়েছে বন্য হাতির পাল। এনজিওর কর্জ পরিশোধ, পরিবারের ভরনপোষণ ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে ব্যার্থ হয়ে এখন নিঃস্ব জীবনযাপন করছে ভুক্তভোগী কৃষক নুরুল আলম।

তিনি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হায়দারনাসী এলাকার বাসিন্দা মৃত মোঃ ইসমাইলের পুত্র।

স্থানীয় জলপাইতলী নামক এলাকায় কয়েক বছর ধরে শিম, বেগুন, মুলা, মরিচ, ঝিঙ্গা সহ প্রায় বিভিন্ন প্রকারের সবজির চাষ করে আসছিলেন তিনি। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় বন্য হাতি সবজি ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি করলেও কোন রকম কাটিয়ে উঠছিলেন। কিন্তু গত ১৭, ২২ সেপ্টেম্বর ও ৬ অক্টোবর তিন দফা তান্ডবে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েন এ কৃষক। ওসময় প্রায় ৭০ শতক জায়গায় লাগানো বরবটি, মরিচ ও বেগুন ক্ষেতে চষে বেড়িয়েছে একটি বন্য হাতির পাল। তৎমধ্যে খেয়ে ফেলছে ৩০ শতক জমির শসা ক্ষেত। নুরুল আলম বাধা দিতে গেলে তার উপর আক্রমণ করে বন্য হাতির পালটি। এতে অল্পের জন্য কৃষক নুরুল আলম প্রাণে বাঁচলেও রক্ষা হয়নি তার খামার বাড়ি ও সবজি ক্ষেতগুলো।

এছাড়াও হাতির তান্ডবে খামার বাড়ির পানি সেচের পাম্প, ফাইপ, কীটনাশক মেশিনগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভেঙে দিয়েছে একটি গভীর নলকূপ। শেষের কয়েক দফা বন্য হাতির তান্ডবে বিশ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী কৃষক নুরুল আলম। সরজমিনে জানা যায়, লামা উপজেলার ৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড জলপাইতলী নামক স্থানে পাহাড়ের ঢালু পরিষ্কার করে বিভিন্ন সবজির চাষ করছিল নুরুল আলম। এতে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে তার স্ত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস ও শিশু সন্তানরা।

ভুক্তভোগী কৃষক নুরুল আলম জানান- বিগত কয়েকমাস আগে ব্যুরো বাংলাদেশ, আশা, কারিতাস সহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋন নিয়ে এ সবজির চাষ শুরু করেন তিনি। বন্য হাতি কর্তৃক ক্ষেত-খামারটি বিনষ্ট হওয়ার পরও তার প্রতি সপ্তাহে ৮০০০ টাকা ঋনের বোঝা টানতে হচ্ছে। বর্তমান সময়ে তার নুন আনতে পান্তা ফোরাচ্ছ কৃষক নুরুল আলমের পরিবারে। চার সন্তানের মধ্যে তিন জনের পড়ালেখার খরচ ও পরিবারের ভরনপোষণে এখন অত্যন্ত অসহায়ত্ব জীবনযাপন করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্থানীয় জলপাইতলী আনসার ক্যাম্পের পিসি মোঃ শফিক জানান- নুরুল আলম খুবই পরিশ্রমী কৃষক। কিন্তু গত ৬ অক্টোবর তার সব ক্ষেত বন্য হাতির একটি পাল ধ্বংস করে দেওয়ায় বর্তমানে সে অসহায় দিনাতিপাত করছে।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকের হোসাইন মজুমদার জানান- একটি বন্য হাতির পাল জলপাইতলী এলাকায় নুরুল আলম নামের কৃষকের ক্ষেতখামারে তান্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে শুনেছি। পরে পরিষদের সচিব জহিরুল ইসলাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা জানান।

পাঠকের মতামত: